জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। এউপজেলায় দেশ তথা এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গুটি ইউরিয়া সার তৈরীর যমুনা সার কারখানা কোম্পানী লিঃ অবস্থিত।
ধান, পাট ও সরিষা নিয়ে সরিষাবাড়ী। গোলা ভরা ধান ও মাঠে হলুদের সমারোহে চোখ জুড়ানো সরিষা। সেই সাথে ছিলো সোনালী আঁশ খ্যাত পাট যা উৎপাদন ও বাজারজাত করণে ছিলো সরিষাবাড়ী উপজেলা জামালপুর জেলার মধ্যে শীর্ষে।। প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের পরেই ছিল সরিষাবাড়ীর অবস্হান।
২২ টি পাট কুঠিরের সাথে ছিল চারটি জুটমিল। আলহাজ্ব জুট মিলস, এ আর এ জুট মিলস, পপুলার জুট মিলস এবং মিমকো জুট মিলস । কুঠিগুলো অনেক পূর্বেই বন্ধ হলেও জুটমিল গুলো টিকে ছিল তিন বছর আগ পর্যন্ত। শুধু মাত্র আলহাজ্ব জুট মিলে শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫০০ । বিভিন্ন জুট মিলে কর্মরত শ্রমিক ছিল প্রায় ৭০০০।
সাত হাজার শ্রমিক জুট মিলে কাজ করতো অর্থাৎ সাত হাজার পরিবার চলতো। প্রতি পরিবারে চারজন করে মানুষ থাকলেও ২৮০০০ মানুষ সরাসরি জুট মিলের উপর নির্ভর করে চলতো। সেই সাথে পাট ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকও ছিল এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল। জুটমিলকে কেন্দ্র করে আশে পাশে গড়ে উঠা দোকানপাট সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৪০,০০০ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই চারটা জুট মিলের উপর নির্ভরশীল ছিলো।
কালের বিবর্তনে দেশের ভাগ্য পাল্টালেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি এসব প্রতিষ্ঠানের। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ন্যে ধারাবাহিকভাবে মিলগুলো একের পর এক বন্ধ হতে থাকে। যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকদের একটা বড় অংশ বেকার হয়ে পড়ে।
সংসারের চাহিদা পূরণের নিমিত্তে এদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউ কেউ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনে অটোরিকশা চালানো শুরু করেছে। শ্রমিকদের কিছু অংশ কর্মরত বকশিগঞ্জে, কিছু গাজীপুরের মাওনা, এবং কিছু কুমিল্লা জুট মিলে কাজ করে কোন রকমে দিনানিপাত করছে।
সর্বশেষ আলহাজ্ব জুটমিল বন্ধ হওয়ার তিন বছর পার হলেও এখনো খোলার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। হয়তো আর কখনোই খুলবে না। স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, আলহাজ্ব জুট মিলের জায়গা প্লট আকারে বিক্রি করা হবে বলে জানা যায় এবং মিলের ভেতর কোটি টাকা মূল্যের গাছ বিক্রি করা হয়েছে। একটা অঞ্চলের উন্নয়নে শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পাট-শিল্প যদি টিকতে না-ই পারে তবে অন্তত শিল্প ট্রান্সফার করা উচিত। কিন্তু একেবারে বন্ধ করে দেওয়া আত্মহননের সামিল। চারটা জুট মিলসের অবকাঠামো আছে। এখানে গার্মেন্টস করা যেতে পারে, কিংবা রড বা সিমেন্ট কারখানা হতে পারে। হতে পারে পোল্ট্রি ফিড কারখানা যার মাধ্যমে হাজারটা পরিবারের কর্মের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
সরিষাবাড়ীর সচেতন মহলের অনেকেই বলছেন,সরিষাবাড়ি থেকে উত্তরবঙ্গ কাছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। জামালপুর, টাঙ্গাইল এবং উত্তরবঙ্গের বাজারে চাহিদা আছে এমন কিছু তৈরি করা যেতে পারে। যেমন গার্মেন্টস হোক বা অন্যান্য ফ্যাক্টরী হোক সরিষাবাড়ীর সাধারণ মানুষের যেন কর্মসংস্থান হয় এই ব্যবস্থা করা উচিত।
এভাবে চলতে থাকলে সরিষাবাড়ির ঐতিহ্য অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে যার ফলে উপজেলায় বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। অভাবের তাড়নায় মানুষ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হবে যার মাধ্যমে সরিষাবাড়ী তার ঐতিহ্য হারাবে।
স্হানীয় এমপি ও তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান এবং সরিষাবাড়ী নীতি নির্ধারকদের মাধ্যমে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সরিষাবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্য ফেরানোর জন্য সরিষাবাড়ির সচেতন মহল ও গুনীজনরা আহবান জানিয়েছেন।
… [Trackback]
[…] Information on that Topic: doinikdak.com/news/35160 […]
… [Trackback]
[…] Information on that Topic: doinikdak.com/news/35160 […]
… [Trackback]
[…] There you will find 96688 additional Information to that Topic: doinikdak.com/news/35160 […]