ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন
ধামরাইয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের বলি হল শিশু কন্যা মাহী
Reporter Name

আশরাফুল ইসলাম: ঢাকার ধামরাইয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধের জের ধরে প্রাণ গেল শিশু কন্যা মাহীর(৭)। হত্যার অভিযোগ স্বয়ং মায়ের বিরুদ্ধে। রোববার ভোররাতে এ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা গুচ্ছগ্রাম।

রোববার এনিয়ে দিনভর দফায় দফায় সমঝোাতা বৈঠক শেষে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত না করে এবং ময়না তদন্ত ছাড়াই খুন হওয়া ওই শিশুটির মরদেহ স্থানীয় কবরস্তানে দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়,কয়েক বছর আগে বাস্তা গুচ্ছগ্রামের মোঃ আব্দুর রহমানের মেয়ে পোশাক শ্রমিক মৌশুমমী আক্তারের(২৫)যাদবপুর ইউনিয়নের আমছিমুর গ্রামের লেবু ব্যবসায়ী মোঃ মিনহাজউদ্দিনের সঙ্গে কাবিন

রেজিষ্ট্রিমূলে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার দম্পত্য জীবনে মাহী আক্তার নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কন্যা সন্তান জন্মের ৪-৫বছর বেশ সুখস্বাচ্ছন্দেই কাটছিল তাদের দম্পত্য জীবন। এরপর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চরম বিরোধের সৃষ্টি হলে

মৌশুমী তার মেয়েকে নিয়ে পিত্রালয় চলে আসে। দুই বছর যাবৎ পিতার বাড়ীতে থেবেই সে ধামরাই উপজেলা সদরের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকুরি করে আসছে। ওই নারি পোশাক শ্রমিকের স্বামী এ দুই বছরে একদিনও

স্ত্রী সন্তানের কোন খোঁজখবর রাখেনি কিংবা ভরণ পোষণও দেয়নি। ফলে ওই পোশাক শ্রমিক মৌশুমী নিসঙ্গ জীবন থেকে পরিত্রাণের আশায় পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর ধারণা,ঘটনার রাতে ওই পরকীয়া প্রেমিক ওই নারি পোশাক শ্রমিকের শয়নকক্ষে এসে গোপন অভিসারে মিলিত হয়। এদৃশ্য ওই শিশু কন্যা মাহী দেখে ফেলায় তাদের ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে যায়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই ওই শিশু মাহীর মুখ চেপে ধরে মাথার ওপর আঘাত করে যেন সে কথা বলতে কিংবা তাৎক্ষণিক বিষয়টি কাউকে জনাতে না পারে। বিধিবাম এতেই তার মৃত্যু ঘটে।

লোক মারফত ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে জেনে যান মাহীর পিতা মিনহাজ উদ্দিন। এরপর তিনি এলাকার জনপ্রতিনিধি মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়াসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বাস্তা গুচ্ছগ্রামে চলে যান এবং তিনি তার শিশু মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করেন। মেয়ের মরদেহ তিনি তার নিজবাড়ীতে নিয়ে আসেন।

এরপর বনেরচর গ্রামের ইউপি মেম্বার মোঃ এমারত হোসেন,আমছিমুর গ্রামের ইউপি মেম্বার মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া,আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ রেজুয়ান আহাম্মেদ রিজন ও শাহীন আলমের নেতৃত্বে এ নিয়ে দিনভর দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একপর্যায়ে দিন শেষে তাদের মধ্যে সমঝোথা হয় মরদেহ দাফন করার জন্য। এরপর হত্যাকান্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে থানা পুলিশকে না জানিয়ে এবং কোন প্রকার ময়না তদন্ত ছাড়াই মরদেহটি আমছিমুর এলাকায় দাফন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এব্যাপারে শিশু মাহীর পিতা মিনহাজ উদ্দিন বলেন,পরকীয়ার প্রেমিককে বাঁচাতে আমার মেয়েকে নিনর্মমভাবে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। এলাকাবাসীর চাপে আমি আমার মেয়ের মরদেহ দাফনে রাজি হয়েছি।

শিশু মাহীর মা মৌশুমী আক্তার মেয়ে হত্যা করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার ওপরে অহেতুক দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার মেয়ে হার্টঅ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেছে।

আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ রেজুয়ান আহাম্মেদ রিজন জানান,শান্তির লক্ষ্যে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কারণ সন্তান মারা গেছে। এক্ষেত্রে মা-বাবা উভয়েরই মনে কষ্ট। কাজেই নথানা পুলিশকে জানিয়েই বিষয়টি

তাদের মধ্যে সমঝোতা করা হয়েছে।যাদবপুর ইউপি সদস্য মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন,গ্রামের লোক হিসাবে তাদের ডাকে গিয়েছি মাত্র। যা কিছু করার গ্রামবাসীই করেছেন। আমি এ বিষয়ে কোন হস্তক্ষেপ করিনি। উভয়পক্ষের মধ্যে সমজোতার ভিতিতে মরদেহটি দাফন করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।

এব্যাপারে বালিয়া ইউপি মেম্বার মোঃ এমারত হোসেন বলেন,মেয়েটি বাস্তা গুচ্ছগ্রামে মায়ের সঙ্গে থাকত। মেয়েটির বাবা ২বছর ধরে তাদের কোন খোঁজখবর রাখেনা এবং ভরণপোষণও দেয়না। মা পোশাক কারখানায় চাকুরি করে। মেয়েটির মৃত্যু সংবাদ পেয়েই ওই বাড়ীতে যাই। বিষয়টি কাওয়ালীপাড়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ রাসেল মোল্লাকে অবহিত করি। এরপর স্থনিীয় ভাবে বিষয়টি সমঝোতা করে মরদেহ দাপনের ব্যবস্থা করি।

এব্যাপারে কাওয়ারীপাড়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ রাসেল মোল্লা বলেন,বিষয়টি লিখিত ভাবে কেউ আমাকে জানায়নি। এবিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

2 responses to “ধামরাইয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের বলি হল শিশু কন্যা মাহী”

  1. … [Trackback]

    […] Read More on on that Topic: doinikdak.com/news/12330 […]

  2. … [Trackback]

    […] Find More here to that Topic: doinikdak.com/news/12330 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x