রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ও নিহতদের ব্যবহৃত ‘স্মৃতি চিহ্নে’র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে সচেতন নাগরিক সমাজ।
অনুষ্ঠানে জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান (যিনি ডিএসসিসি মেয়রকে লার্ভা ও ওয়াসা এমডিকে শরবত উপহার দিয়ে আলোচিত হন) তিনি উপস্থিত থেকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের (সিটি কর্পোরেশনের) যে দায়-দায়িত্ব ছিলো তা করেনি। কথা ছিলো মেয়র ও কাউন্সিলরা ডেঙ্গু নিয়ে ১২ মাস কাজ করবেন। কিন্তু সেটি হয়নি। এর পরেও দায়িত্বশীলরা যখন বলেন, ডেঙ্গু নেই। ডেঙ্গু হয়নি। তখন মানুষের মধ্যে একটা সাদামাটা ভাব চলে আসে। তারা নিশ্চিন্তে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু জুরাইনে ৯ জন মারা গেছেন। হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আমার জানামতো এর সংখ্যা আরও বেশি। একটি ওয়ার্ডে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বুঝে নিন সারা ঢাকার অবস্থা কেমন। যারা মারা যাবে তাদের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশন নিজেই তো সচেতন নয়। ড্রেনে ময়লা কিংবা পানিতে এডিস আছে কিনা তার খোঁজ রাখে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের প্রধান অবলম্বন জরিমানা করা। ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে টাকা পয়সার বিনিময়েও অনেক সময় হয়রানি করা হয়। আমরা বলতে চাই- মানুষকে এভাবে ভয় দেখিয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। মানুষকে আস্থায় নিতে হবে।
মিজানুর রহমান বলেন, আমরা নগর কর্তৃপক্ষকে সচেতন করতেই আজ এই উদ্যোগ নিয়েছি। নগর ভবনে যে জাদুঘর রয়েছে সেখানে যদি এই জিনিসপত্র গুলো সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে নগরবাসী ও নগর ভবন সচেতন হবে।
এসময় তিনি মেয়রকে আহ্বান রেখে বলেন, আপনি জুরাইনে আসুন। দেখুন হাজার হাজার আক্রান্ত কি না। মানুষ মরেছে কিনা। মশক নিধন কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা।
মিজানুর রহমান বলেন, আমার এলাকা নিচু এলাকা। এটা তো জনগণ করেনি। আজ দেশের আইন আদালতের প্রতি বহু মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নেই। যদি আস্থা থাকতো তাহলে সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা করে দিতাম। কারণ আমার এলাকায় হাজার হাজার বাড়ি ঘর নিচু ভূমিতে পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ সিটি কর্পোরেশন। এলাকায় অনেক জলাবদ্ধতা। আমরা বহুবার কাজ করে সিটি কর্পোরেশনকে দেখিয়েছি ড্রেনেজ সিস্টেম যদি ঠিক মতো কাজ করে তাহলে এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকে না।
ডেঙ্গুর জন্য তারা জনগণের অসচেতনতাকে দায়ী করে। হ্যাঁ, জনগণ যদি সচেতন হতো তাহলে আপনারা এই চেয়ারে আসতে পারতেন না। মানুষ সচেতন না বলেই আপনি চেয়ারে বসে আছেন। নানা উপায়ে টাকা পয়সা কামাচ্ছেনা। আমরা সচেতন না বলে দয়া করে মানুষকে ডেঙ্গু দিয়ে আর হত্যা করবেন না।
তিনি আরও বলেন, আজ শহরে ডেঙ্গুর মহামারি। এই অবস্থায় রেখে কিভাবে একজন মেয়র দেশের বাহিরে গেছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটাকে অবহেলা না বলে মানুষের প্রতি অবজ্ঞা বলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যয়বহূল হওয়ার কারণে অনেকেই আজ ঝারফুকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় আমাদেরকে ফেলে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যা যা করা দরকার তা আজ পর্যন্ত করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মেয়ের কথা উল্লেখ করে পলাশ নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, আমার মেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আমার বাড়ির আশে পাশে ময়লা জমে থাকে। বাসায় দুই পাশে ওষুধ দেওয়া হয়না। মাঝে মাধ্যে লোক দেখানো ওষুধ ছিটানো হয়। আমার মাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
সেলুন ব্যবসায়ী রনজিত বলেন, আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর সাত দিন হাসপাতালে ছিলাম। আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ঋণ করেই আমি চিকিৎসা খরচ ব্যয় করেছি। এই ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি।