কিংবদন্তি বাউলশিল্পী শাহ আব্দুল করিমের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের এদিনে সিলেটে মৃত্যুবরণ করেন এই মহান শিল্পী।
বাউল গানের কিংবদন্তী শিল্পী শাহ আব্দুল করিমের গানে আজো সমান মুগ্ধ এদেশের সব শ্রেণির মানুষ। তার প্রয়াণের এক যুগ পরও সবার কাছে তিনি অতিপ্রিয় একটি নাম।
শ্রোতাদের মুগ্ধতার কারণ হয়তো তার গানের সহজিয়া সুর আর বাণী। তাই এখনো সব শ্রেণির মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয় তার গান।
১৯১৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জন্ম কিংবদন্তি বাউলশিল্পী শাহ আব্দুল করিমের। ফকির লালন শাহ, দুদ্দু শাহ, পাঞ্জু শাহ’র গান ও দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে শৈশব থেকেই গানের সাথে তার পথচলা। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করেও নিজের শিল্পী সত্তার বিকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। জীবিকার তাগিদে কৃষিকাজ করেছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সব তুচ্ছ করেই তিনি সৃষ্টি করে গেছেন গাড়ি চলে না, বন্দে মায়া লাগাইছে, কুলহারা কলঙ্কিনী, বসন্ত বাতাসে, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতামের মতো অসংখ্য কালজয়ী গান।
দেশের বাউল শিল্পীদের মতে, বাউল গানকে অনন্য উচ্চতায় নেয়ার ক্ষেত্রে মূল কারিগর শাহ আব্দুল করিম। তরুণ শিল্পীদের কাছেও তিনি অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
স্বশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় প্রাঁচ শতাশিক গান লিখেছে এবং সুর করেছেন। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তারঁ ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন।
গানে গানে রূপ দিয়েছেন গণমানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনা আর প্রেম-বিরহের গল্প। পাশাপাশি সামাজিক অসংগতি, অন্যায়-অবিচার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার কন্ঠ ছিল আজীবন সোচ্চার। ভাটি অঞ্চলের এই বাউলসাধক তার সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক, লেবাক এওয়ার্ড, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননাসহ অজস্র পুরস্কার।
২০০৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুর থেকেই সিলেটের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন আব্দুল করিম। সে সময় তাঁকে লাইফসাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। তার পরদিনই ১২ই সেপ্টেম্বর অগণিত ভক্তকূল ও গানপ্রেমীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম।