স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করা সেই শহীদগণের লক্ষ্য ছিল স্বীয় দেশে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করা ৷ স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য সেই শহীদরা আত্মত্যাগ করেন নি; বরং সর্বপ্রকার অধিকার নিশ্চিত করতে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন ৷ একটি দেশ কখনো স্বীয় নাগরিকদের অভিজাত আর দরিদ্র বলে পার্থক্য করে না ৷ সকল নাগরিকই স্বীয় দেশের চোখে সমান স্তরের ৷ যেমনিভাবে মায়ের চোখে প্রতিটি সন্তানই সমান হয়ে থাকে ৷
শহরের জনাকীর্ণ স্থানে, অলিতে-গলিতে ও রাস্তার দ্বারে কত অসহায় পড়ে রয়েছে ৷ স্বীয় দেশের আশ্রয়হারা সৈনিক ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়ে আছে ৷ এমনকি পাশের কোটিপতিরা দেখেও না দেখার ভান করে তাদের পাশেই উঁচু তলায় শান্তিতে বিশ্রাম করে যাচ্ছে ৷ বলছে না কেউ সেটা তাদের দোষ ৷ কিন্তু সেই অসহায় সৈনিকদের স্বীয় মমতাময় দেশের আশ্রয়টা কোথায়?
ওরা দরিদ্র, তাই বলে কি স্বীয় দেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত নাকি মায়ের দেশটা আজ স্বার্থপরতায় নিপতিত? মিডিয়ার ফলে কিছু অসহায়দের চিত্র ফুটে উঠলে দেখা যায় তাদের যত্ন নেওয়া হয় ৷ কিন্তু বাকিদের অবস্থা কেইবা দেখতে পায় ৷ হ্রদয়ের আর্তনাদ শুধু নিজেরাই শুনতে পায়, না শুনে পাশের ধনীরা, না শুনে স্বদেশটা !
দিন মজুর রিক্সা চালকের উপর যখন স্বদেশটা শক্তির প্রয়োগ দেখায় ছোট অপরাধের কারণে তখন একজন ব্যক্তিই শুধু কষ্টের বেড়ি পড়ে না; বরং তার পরিবারের সব সদস্যই কষ্টের শিকলে বন্ধি হয়ে পড়ে ৷ কেননা তাদের জীবিকার উৎস কেবল সেই চালকের উপরই নির্ভর করে থাকে ৷ যদি স্বদেশটা তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারতো, তবে হয়তো স্বদেশের কাছে অপরাধী হতো না ৷
আম চোর, কাঁঠাল চোরের বিচার যতটা না সঠিকতা বজায় রাখে তার চেয়ে বেশি অধঃপতন পরিলক্ষিত হয় কলমের খোঁচায় কোটি টাকা লুট করা চোরের বিচার ৷ স্বদেশের চোখে যদি আবরণ পড়ে যায় তাহলে নাগরিকের অবস্থা কেমন হবে সেটা কল্পনার অতীত ৷ অসহায়দের শুধু একটি মিনতি যেন স্বদেশটার আশ্রয় থেকে দূরে নিক্ষেপ না করে ৷
জানি স্বীয় দেশটা স্বীয় নগরিকদের অনেক কিছু দিয়েছে এবং এর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন অতুলনীয় ৷ কিন্তু অসহায়দের প্রতি আরেকটু যদি দেখতো, তবে কতইনা উত্তম হতো !
লেখক:
শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম
সদস্য, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম