ঢাকা, বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন
চলনবিলে চলছে শুটকি তৈরির কাজ: নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত
নুরুল ইসলাম খান :

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন জাতের শুটকি মাছ তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। মাছ কাটা থেকে শুরু করে শুটকি শুকানোর কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। শুটকি ব্যবসায়ীরা এলাকার বিভিন্ন রাস্তার পাশে মাচান তৈরি করে শুটকি শুকানোর কাজ করছেন। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ভোরবেলা স্থানীয় বিল এবং আড়ৎ থেকে বিভিন্ন জাতের মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।
মাছগুলো নারী শ্রমিকেরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন। একই সঙ্গে মাছে লবণ মেশানো ও মাছগুলো শুকানোর জন্য মাচায় মেলে দেয়। শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে নারীরাই বেশি ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু নারী শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না।
উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়ন, মোহনপুর ইউনিয়ন, পাঙ্গাসী ইউনিয়ন, দূর্গানগর ও বাঙ্গালা ইউনিয়ন চলনবিল অধ্যুষিত হওয়ায় এ অঞ্চলে মাছ বেশি পাওয়ায় যায়। গত এক সপ্তাহে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় এসব এলাকার জেলেরা এখন মাছ ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার জেলেরা মাছ ধরে তা বিক্রি করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
বাঙ্গালা ইউনিয়নের শুটকি ব্যবসায়ী ওয়াজেদ আলী আকন্দ জানান, তিনি প্রায় দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলনবিলের মিঠা পানির শুটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এই বর্ষা মৌসুমে মাছ কিনে শুটকি তৈরী করে থাকে।
বন্যার পানিতে নদী-নালা খালবিল তলিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। পানি আরো কমলে তখন মাছ বেশি পাওয়া যাবে। বর্তমানে ছোট আকৃতির মাছ ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা মন দরে কেনা হচ্ছে৷ আবার এই মাছ যখন বড় হয়ে যাবে তখন ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা দরে কেনা হয়।
তিনি আরো জানান, শুটকি শুকানোর জন্য প্রতি মাচানে ১০ থেকে ১৫ জন নারী শ্রমিক কাজ করে থাকে। কিন্তু এবারে এখানো পুরোদমে কাজ শুরু হয়নি। তাই অল্প শ্রমিক দিয়েই কাজ শুরু করেছেন। এখন ৩ থেকে ৪ জন শ্রমিক সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কাজ করছে।
যে মাছগুলো শুকানো হচ্ছে তা সংরক্ষণ করে পুরোদমে যখন শুটকি তৈরী করার কাজ শুরু হবে তখন তা বিক্রি করা হবে। আর এসব শুটকির চাহিদা সৈয়দপুরে সব চেয়ে বেশি। এবারে আগাম শুটকি তৈরি করায় দামও বেশ ভালো। এসব শুটকি প্রকার ভেদে ৬ হাজার টাকা মন থেকে ১৬ হাজার টাকা মন দরে ব্যাপারিদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকে।
এসময় কথা হয় শুটকি চাতালের নারী শ্রমিক ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে তিনি জানান, প্রতি বছর বন্যার পানি আশায় এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে শুটকি তৈরির দুম পরে। সংসারের কাজ শেষ করে একটু বাড়তি আয়ের আশায় তিনি এসব কাজ করে থাকে। তবে যে পরিশ্রম করা হয় সে অনুপাতে পারিশ্রমিক তারা পাননা।
সারাদিন কাজ করে ১৫০ টাকা মজুরি পায়। রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে মাছ শুকাতে হয়। তারা যদি এই কাজের ন্যায্য মূল্য পেতেন তাহলে তাদের উপকার হতো।
উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বায়েজিদ আলম জানান, উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত কিছু এলাকায় অল্প পরিসরে শুটকি তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ মূলত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শুটকি তৈরি করার মৌসুম।
বিশেষ করে উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়ে সবচেয়ে বেশি শুটকি তৈরি করা হয়ে থাকে। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রতি বছরে ২০ জন করে শুটকি চাষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা যেন স্বাস্থ্যসম্মত, ভোক্তার জন্য নিরাপদ এবং কোন রকমের কীটনাশক ব্যবহার না করা হয় সে বিষয়ে তাদেরকে সর্তক করা হয়।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x