ঢাকা, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ সুরত আলী দারোগার ৫০তম শাহাদাতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন
মনিরুজ্জামান মুন্না পত্নীতলা,, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অন্যতম রাজনৈতিক সহচর, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ সুরত আলী দারোগার ৫০তম শাহাদাতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

রবিবার (২২ আগস্ট) সকালে তাঁর জন্মস্থান নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমাইর ইউনিয়নের শহীদ সুরত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ উপলক্ষে স্মৃতিচারণ সভা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।শহীদ সুরত আলী দারোগা স্মৃতি পরিষদ ও নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ, নওগাঁ যৌথ ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসময় উপজেলার সামাজিক সংগঠন – অদম্য নজিপুর; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নির্মাণাধীন প্রামাণ্য চলচিত্র “নওগাঁ-১৯৭১” এর নির্মাতা সংগঠন – ধূমকেতু চলচিত্র পরিষদ এই আয়োজনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে অংশ নেয়। করোনার জন্য এবারে তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী স্বল্প পরিসরে উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদ সুরত আলী দারোগার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
শহীদ সুরত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মেহমুদ রাসেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন একুশে পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, ডাসনগর মলংশাহ মাদ্রাসা সুপারিনটেন্ডেন্ট আব্দুস সোবহান সরকার, নজিপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রেজা চৌধুরী, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি ওমর ফারুক, ধূমকেতু চলচিত্র পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চলচিত্র নওগাঁ ১৯৭১’র পরিচালক নাসরুল্লাহ রাসু প্রমুখ।

শহীদ সুরত আলী মন্ডল এলাকার মানুষের কাছে সুরত আলী দারোগা হিসেবে পরিচিত।
তিনি ১৯৪৫ সালে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যেতে তিনি তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেন। গ্রামের যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যেতে প্রশিক্ষণে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকায় তিনি বালুরঘাট মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ সরবরাহ করতেন।
শহীদ সুরত আলী ১৮৯৩ সালে বর্তমান নওগাঁ জেলার অন্তর্গত পতœীতলা উপজেলার ডাসনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
সুরত আলীর বাবা জিঞ্জির আলী মন্ডল। সুরত আলী ডাসনগর পাঠাশালাতে প্রাথমিক স্কুল পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই ১৯০৮সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ১৯১২সালে পাশ করেন। তিনি ভালো ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। তাঁর পছন্দের পজিশন ছিলো সেন্টার ব্যাক। পড়াশুনা শেষে তিনি পুলিশের চাকুরিতে যোগদান করেন। তিনি শিলিগুড়ি, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার দূর্গাপুর, চারঘাট, বোয়ালিয়া থানা, দিনাজপুর, পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৪ সালে নওগাঁর নর্থ আসনে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নজিপুর এসে সুরত আলী দারোগাকে প্রার্থী হিসেবে জনগণের সামনে পরিচয় করে দেন। একটা পর্যায়ে কলকাতায় তাঁর ভালো যোগাযোগ গড়ে ওঠে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৭ সালে শেষবারের মতো নওগাঁর পতিসরে আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অভ্যর্থনা জানাতে অনেকেই গিয়েছিলেন। অভ্যর্থনা দলের সদস্যদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথেও সুরত আলীর সখ্য গড়ে ওঠে। ১৭ আগস্ট তাঁকে বাড়ি খেকে ধরে প্রথমে নজিপুর পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে দু’একদিন রাখার পর মহাদেবপুর হানাদারদের আরেক ক্যাম্পে নিয়ে যায়। মহাদেবপুরে ক্যাম্পে তাঁকে শাররীরিকভাবে ব্যপক নির্যাতন করে। এরপর ২২ আগস্ট তাঁকে মেরে আত্রাই নদীতে তাঁর লাশ ভেঁসে দেয়। তাঁর লাশের আর কোন সন্ধান মিলেনি।

বঙ্গবন্ধুর একসময়ের এই অন্যতম সহচরকে অনতিবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা দেয়া হোক এবং তাঁর স্মৃতির রক্ষার্থে সরকার যেন বিশেষ ভূমিকা রাখে – এখন এমনটাই দাবি পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং স্থানীয়দের।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x