ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
রূপগঞ্জের চৌধুরী বাড়ি এখন যেন ভুতুড়ে বাড়ি
নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ

“ ৪ আগষ্ট মরহুম বিএনপি নেতা সাবেক স্বররাস্ট্রমন্ত্রী, বস্ত্র মন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরির মৃত্যুবার্ষিকী। অনেকটা নীরবেই চলে যাচ্ছে মৃত্যু বার্ষিকী। একটা সময় এ চৌধুরি বাড়িতে লোকসমাগম, চাকচিক্য আর জৌলুশ থাকলেও এখন তা ভুতুরে বাড়ি। নেই কোনো লোক সমাগম। নেই কোনো কোলাহল। মনে হয় এ যেন এক স্মশানপুরী। বাড়িতে যেন মরিচা পড়েছে। দেয়ালের আস্তর খসে পড়ছে। দেখার কেউ নেই। এভাইে চলে যায় কত জন্ম আর মৃত্যু বার্ষিকী। কেউ খবরও রাখে না।” নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনি করেই বলছিলেন রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌর এলাকার এক বিএনপি নেতা।

নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে আছে একসময়কার বহুল আলোচিত চৌধুরি বাড়ি। নিথর দাড়িয়ে আছে কাঞ্চনে। কিন্তু সেই ভিড়ভাট্রা নেই। নেই নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি। নেই সেই বাড়ির মানুষটি। এক সময়ে যেখানকার কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে সাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল নিষিদ্ধ। বাড়ির সামনের রাস্তায় লোক চলাচলে ছিল বিধিনিষেধ। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কমীদের তীক্ষè নজর ছিল বাড়িটির চারদিকে। ক্শমতাধর মন্ত্রী ও দলের শীষ পযায়ের নেতারাও যেখানে ঢুকতেন জবুথবু হয়ে। সেই প্রবল প্রতাপ চৌধুরি বাড়ি এখন সুনসান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নিবাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সবচেয়ে আলোচিত মন্ত্রীত্বের পদ পান আব্দুল মতিন চৌধুরি। সে সময় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। শুধু রূপগঞ্জ নয় সারাদেশের অনেক নীতিনিধারণী সিদ্ধান্ত যেত এ বাড়ি থেকে। চলত নানা ধরণের তদবিরচচা। এ কারণে রথী-মহারথীসহ তদবিরকারীদের আনাগোনা ছিল সেখানে। ২০০১ সালের নিবাচনে তিনি পুনরায় নিবাচিত হয়ে বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে অসুস্থতার কারণে তাকে দতপ্তরবিহীন মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০০৬ সালে ক্শমতার পালাবদলের পরপরই আব্দুল মতিন চৌধুরি ক্রমে ক্রমে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সিদ্বেশ্বরীতে ভাতিজার বাসায় অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করেন। ক্ষমতা পালাবদলের পরপরই নীরব হতে থাকে চৌধুরি বাড়ি। ওয়ান ইলেভেনের পর নীরব নয় একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো চৌধুরি বাড়ি। ২০১২ সালের ৪ আগষ্ট আব্দুল মতিন চৌধুরি না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় পুরো বাড়িটিই যেন ফিকে হয়ে গেছে। নিভে গেছে আশার প্রদীপ।

সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলো ঝলমল চাকচিক্যে ভরা আলোচিত চৌধুরি বাড়িটি এখন অন্ধকারচ্ছন্ন। বাড়িটির গেইটে ঝুলছে তালা। বাড়িটির প্রধান ফটক এবং ভেতরের খালি স্থানে জমে আছে শুকনো পাতার স্তূপ। প্রায় দুই বছর যেতে না যেতেই বদলে গেছে বাড়ির দৃশ্যপট। বাড়িতে প্রবেশের অনুমতির জন্য ভিড় করেন না কেউ। আসে না শীষ মন্ত্রী-এমপিদের গাড়ি। রাজনীতি এখন আর কোনভাবেই স্পশ করতে পারছে না বাড়িটিকে। এক সময় প্রায় ২০ জনের মতো পাইক-পেয়েদা বাড়িটির দায়িত্বে ছিল। এখন আর কাউকেই দেখা যায় না। মূল ফটকে ঝুলছে বিশাল তালা। চিরচেনা সেই চৌধুরি বাড়িটিকে এখন আর যেন চেনাই যায় না।

স্থানীয়রা আরো বলেন, আব্দুল মতিন চৌধুরি ছিলেন তাদের গর্ব। রূপগঞ্জে মতিন চৌধুরির মতো আর কেউ মন্ত্রীত্ব পাবেন কি-না সেটা নিয়ে সন্দিহান। তিনি মন্ত্রী থাকার কারণেই এ বাড়িতে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি ও প্রশাসনের বড় বড় কতারা এখানে এসে ভীড় জমাতেন। আজ মতিন চৌধুরি নেই। নেই বাড়ির জৌলুসও। আব্দুল মতিন চৌধুরির ভাতিজা  ফারুক চৌধুরি বলেন, চাচা থাকাকালীন বাড়িতে ভিড় লেগে থাকতো। মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে দলের শীষ নেতাকমী এমনকি সাধারণ মানুষ আসতো এ বাড়িতে। এখন কেউ আসে না। চাচায় মারা যাওয়ার পর পুরো বাড়িটি ভুতুরে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

One response to “রূপগঞ্জের চৌধুরী বাড়ি এখন যেন ভুতুড়ে বাড়ি”

  1. … [Trackback]

    […] Information to that Topic: doinikdak.com/news/43513 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x