ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন
কপোতাক্ষের কপিলমুনিতে নতুন করে সেতু’র স্বপ্ন শুরু
মোঃ মনিরুল ইসলাম, পাইকগাছা(খুলনা)

অবশেষে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে কপোতাক্ষের কপিলমুনিতে সেতু নির্মাণ প্রকল্প। ইতোমধ্যে সরকারের এলজিইডি এ সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌছেছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র। আর এ সম্ভাবনায় ভর করে আবারো ব্রিজের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন জনপদের মানুষ।  একটি মাত্র ব্রিজ। সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে অনেকগুলো স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু। আধুনিক কপিলমুনির রুপকার রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু জনপদের উন্নয়নে বানিজ্যিক সম্প্রসারণ তথা কপিলমুনিতে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা ও তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কোলকাতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্তোরনে কপোতাক্ষের কপিলমুনিতে একটি সেতু বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জনপদের মানুষকে। সেই থেকে শুরু সেতুর জন্য স্বপ্ন দেখা। ইতোপূর্বে এখানে সেতুর বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেও শেষ করা যায়নি। আর এর সাথে অপমৃত্যু ঘটে দীর্ঘ দিনের লালায়িত অনেকগুলো স্বপ্নের। তবে সর্বশেষ ফাইল চালাচালির এক পর্যায়ে উপরে উঠে এসেছে কপিলমুনির সেতু বাস্তবায়নের বিষয়টি। শুরু হয়েছে আবারো স্বপ্নের বীজ বুননের।

কপোতাক্ষের কপিলমুনি কেন্দ্রিক সেতুর বাস্তবায়ন হলে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে কপিলমুনির। বর্তমানে দু’টি রোড ক্রস করে ভোমরা থেকে কপিলমুনির দুরত্ব প্রায় ৪০/৪৫ কিলোমিটার যা, কমে অর্ধেকে চলে আসবে। তাও আবার কোন ক্রস রোড নয়, সরাসরি। আর এমনটি হলে দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি কেন্দ্রিক গড়ে উঠবে বহুমাত্রিক বানিজ্যিক জোন। যেখান থেকে এর সুবিধা পৌছে যাবে সাতক্ষীরার আশাশুনি, তালা, খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, ডুমুরিয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা তথা সরাসরি খুলনায়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত হিমায়িত চিংড়ি। এর উৎপাদনস্থল সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট হলেও দীর্ঘ দিনেও এর কোন নির্দিষ্ট জোন গড়ে ওঠেনি। সেতুটিকে কেন্দ্র করে বিস্তির্ণ জনপদের পারষ্পরিক স্বার্থ সুরক্ষায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় গড়ে উঠতে পারে চিংড়ি জোন। এছাড়া সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে অত্রাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক দাম থেকে বরাবরই বঞ্চিত হন এ অঞ্চলের কৃষকরা। সেতুটির বাস্তবায়নে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগে ব্যবস্থা স্থাপন হলে বাজার ব্যবস্থাপনায়ও ঘটবে আমুল পরিবর্তন। এছাড়া ভারত থেকে ভোমরা হয়ে সরাসরি আমদানি পণ্য যেমন পৌছে যাবে কপিলমুনিতে তেমনি রপ্তানি পণ্যও সরাসরি পৌছাবে ভারতে।

আর সরাসরি আমদানি রপ্তানির বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বানিজ্যিক সম্প্রসারণে নতুন মাত্রায় যুক্ত হবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।  প্রসঙ্গত, জনদাবির প্রেক্ষিতে সরকার সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯শ ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা ব্যয় বরাদ্দ করে। পরে কাজের মানোন্নয়নে ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়ে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা করা হয়। সেতুটির নির্মাণ কাজ পান সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম এ্যাড শেখ মো: নুরুল হকের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এন হক এসোসিয়েট। প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা আই এফ আই সি ব্যাংক খুলনা হতে উত্তোলন করে এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে ঐসময় আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতায় বন্ধ থাকে সেতুর নির্মাণ কাজ। এমন পরিস্থিতিতে সেতুর বাকি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে অপর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিলেও সাতক্ষীরা পাউবোর ভ্রান্ত ধারণার উপর ভর করে বিশেষত, কপোতাক্ষ নদের স্রোতে বাঁধা পাওয়ার আশংকার কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি পত্রে একবারে বন্ধ হয়ে যায় সেতুর সামগ্রিক নির্মাণ কাজ। সেই থেকে গত ১৮ বছর বন্ধ রয়েছে এর নির্মাণ কাজ। এরআগে সেতুর এপ্রোচ সড়ক নির্মাণে দু’পারে জমি অধিগ্রহন ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে মাটি ভরাট করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে পাউবোর আশংকায় সেতু নির্মাণকাজ বন্ধ হলেও নদের বুকে থেকে যায় সেতুর নির্মাণাধীন ১৮টি পিলার। এরপর ২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদ খননে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ও খেশরা ইউনিয়নের ১৯ টি গ্রামসহ বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার মানুষ সাঁকো পার হয়েই আসে বিনোগঞ্জ (কপিলমুনি) কেন্দ্রীক ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে। বিশেষ করে উৎপাদিত ও নিত্য প্রযোজনীয় পণ্য সরবরাহে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় সাঁকোটি। কপিলমুনি বিনোদ স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ্যাড.দীপঙ্কর সাহা জানান, আধুনিক কপিলমুনির স্থপতি রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু কপোতাক্ষের উপর সেতু নির্মাণে তৎকালীন কোলকাতা রিজার্ভ ব্যাংকে এক লক্ষরও বেশি পরিমান টাকা রেখে যান। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত সম্পর্কের অবনতির আগ পর্যন্ত বিনোদ বিহারী সাধু প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির ও সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক প্রতি বছর ঐ টাকার লভ্যাংশ হিসেবে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা পেত। এ ব্যাপারে কপিলমুনি ইউপি চেয়াম্যান মোঃ কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান, কপোতাক্ষের উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। বর্তমান সরকারের সময়ে আমরা সেতু বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতেই পারি। দীর্ঘ দিন ব্রীজটির বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এস,এম মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজ জানান, তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্রীজটির বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, কপোতাক্ষের উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণে প্রকৃত পক্ষে কোন বাঁধা নেই। সারাদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর যে পরিমাণ উন্নয়ন কাজ তরান্বিত করছে তাতে করে শুধু দরকার আমাদের সদিচ্ছা। দু’পারের জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়ায় বিষয়টি যথাযথ দেশপ্রেমিক এলাকার কৃতি সন্তানদের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে দৃষ্টিগোচর করালে বিষয়টি আবারো আলোচনায় আসে। তিনি ধারণা করছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কপিলমুনিতে কপোতাক্ষের উপর সেতু বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌছেছেন। খুব শিঘ্রই এ সংক্রান্তে কোন ভাল খবর আশা করছেন তিনি।

One response to “কপোতাক্ষের কপিলমুনিতে নতুন করে সেতু’র স্বপ্ন শুরু”

  1. … [Trackback]

    […] Read More here on that Topic: doinikdak.com/news/35478 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x