পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের দুটি সরকারি খালের মাছ ধরা নিয়ে ঘের মালিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি
পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের দুটি সরকারি খালের মাছ ধরা নিয়ে ঘের মালিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ঘের মালিক এলাকাবাসীকে মাছ ধরতে বাঁধা প্রদান ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করা সহ প্রভাব বিস্তার করছে। অপরদিকে বাঁধ ভেঙ্গে ঘেরের মাছ খালে চলে গিয়েছে বলে দাবী করছে ঘের মালিক। প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটন ও সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সরেজমিন সংশ্লিষ্ট খালটি পরিদর্শন করেছে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
প্রাপ্ত সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নে পার মধুখালী ও রাধা নগর নামে দুটি সরকারি খাল রয়েছে। পার মধুখালীর গৌরঙ্গ ঢালীর বাড়ী হতে মধুখালী সীমান্ত পর্যন্ত পার মধুখালীর খালটি ১.৫৬ হেক্টর ও মধুখালী সীমান্ত হতে নড়ানদী পর্যন্ত রাধা নগর খালটি ১.৫৯ হেক্টর। দুটি খাল একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত। দীর্ঘদিন পলি জমে খালের পানি নিস্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এতে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি সহ মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এছাড়া খালের আশপাশের প্রায় ২শ পরিবার খালের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ এবং আমিষের চাহিদা পূরণ করতো। মৎস্য অধিদপ্তর “জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প”র আওতায় চলতি মৌসুমের শুরুতেই খাল দুটি খনন করা হয়। যে প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু ইতোমধ্যে খননকৃত খাল উদ্বোধন শেষে খালটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে খালের নাব্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং স্বাভাবিক পানি প্রবহ সৃষ্টি হওয়ায় মৎস্য উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সরকারি খালি দুটি জনসাধারণের ব্যবহারের অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে খালের পাশের ঘের মালিকদ্বয়। ঘের মালিক আবু সুফিয়ান বিশ্বাসের দাবী ঘেরের বাঁধ ভেঙ্গে তার ঘেরের মাছ খালে চলে যায়।
এ জন্য খালের যাবতীয় মাছ ধরার অধিকার তার রয়েছে। ইউপি সদস্য চম্পক বিশ্বাস জানান, খালের দু’পাশের বাসিন্দাদের নিয়ে সুফলভোগীর দল গঠন করা হয়েছে। সেই হিসেবে খালটি সুফলভোগীদের ভোগ-দখল করার কথা। কিন্তু পাশের ঘের মালিকদ্বয় এলাকাবাসীকে মাছ ধরতে বাঁধ প্রদান সহ বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে এবং অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করা সহ প্রভাব বিস্তার করছে। মূলত ঘের মালিকরা খালটি জোরপূর্বক তাদের দখলে নিতে চাই বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, এলাকাবাসী জুন মাসের দিকে ঘের মালিককে মাছ ধরে নেওয়ার জন্য ৫ দিনের সময় দেয়। সে সময় ঘের মালিক মাছ ধরে নেয়। বর্তমানে ঘের মালিক আবারও মাছ ধরার অপচেষ্টা করছে এবং অভিযোগ দিয়ে এলাকাবাসীকে হয়রানী করছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে ঘের মালিক বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসিয়েছে। কিন্তু সেখানে সংস্কার করা হয়নি। যার ফলে পানি বাড়লেই খাল আর ঘেরের মাছ এক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ঘের মালিক যেখানকার বাঁধ ভাঙ্গার কথা দাবী করছে সেটি আসলে সরকারি জায়গা। খালের পাশ দিয়ে ঘের মালিকের নিজস্ব কোন বাঁধ নেই। খালের বাঁধ ব্যবহার করে তিনি ঘের করছেন। সরকারি জায়গায় ঘর ও বাথরুম তৈরী করে পরিবেশ নষ্টও করছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হবে বলে মৎস্য বিভাগের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ঘের মালিকদ্বয়ের হয়রানী থেকে রক্ষা পাওয়া সহ কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সরকারি খাল দুটি যথাযথভাবে ভোগ দখল করতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এমন দাবী করেছেন এলাকাবাসী।