ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়াপদার ভেঁড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুকিতে
Reporter Name

তৃপ্তি রঞ্জন সেন পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়াপদার ভেঁড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। মঙ্গলবারের জোয়ারে স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে এক ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে। তবে এর থেকে রাতের জোয়ারে পানি আরো অধিক বৃদ্ধি পেলে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে কিংবা পানি উপচে পড়ে লোকালয়ে ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশংকা করছেন। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইতে দেখা যায়। ঘুর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। অপরদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ জায়গা পরিদর্শন করেছেন। এমপি বাবু, উপজেলা প্রশাসন এবং দলীয় লোকজনদের সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামতের কাজ তদারকিসহ বাঁধ মেরামতে স্থানীয় লোকজনদের উৎসাহ দিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে, জেলার পাইকগাছা উপজেলার প্রায় ইউনিয়নের চারিদিকে রয়েছে নদী। ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত পাইকগাছা উপজেলা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়াপদার ভেঁড়িবাঁধগুলি মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় জোয়ারের পানি অধিক পরিমানে বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। ফলে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। উপজেলার একেবারেই শেষ ইউনিয়ন গড়ইখালী। যার একপাশে রয়েছে সুন্দরবন। বিগত বছরগুলিতে বিভিন্ন দুর্যোগের সময় ইউনিয়নে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখন সে সকল ক্ষয়ক্ষতির পরিমান পুষিয়ে উঠতে পারেনি এলাকাবাসী। এরমধ্যে আবার ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় ইয়াস। ইউনিয়নের কুমখালীর (খুদখালী) ফকির বাড়ির সামনে ১০/১২ নং পোল্ডারের শান্তা স্লুয়েজ গেটে সংলগ্ন ও গাংরখি নদীর গেটের দুইপাশে ভাঙ্গনের কারনে মারাত্মক ঝুকির মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন সময় ইউপি চেয়ারম্যান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও তা কাজে আসেনি বলে চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বিশ্বাস জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান জানান, বাঁধের অবস্থা খারাপ হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী নিজে উপস্থিত থেকে কর্মসৃজন কর্মসুচির লোক দিয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্র বাঁধ মেরামত করা হয়ে যাবে। তবে সেটি পুরোপুরি ঝুকি মুক্ত নয়। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মিজানুর রহমান মিজান বলেন, এই মুহুর্তে ভাঙ্গন ঢেকাতে না পারলে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে কিংবা ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে গড়ইখালী ইউনিয়ন সহ পার্শ্ববর্তী অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। দেলুটির ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানিয়েছেন, ইউনিয়নের জিরবুনিয়ার চৌমূহনী, দেলুটির শিবসা নদীর পাশে, ২২ নং পোল্ডারের দারুন মল্লিক, কালীনগর, তেলেখালি, দূর্গাপুর ও বিগরদানার বাঁধ মারাত্মক ঝুকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষক সুকৃতি মোহন সরকার জানিয়েছেন, জোয়ারের পানির তোড়ে মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে চকরিবকরি প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেলে কর্মসৃজন কর্মসুচির লোকজন ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সেটি আপাতত মেরামত করা গেছে। তবে সেটি শঙ্কামুক্ত নয়। লতা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, ইউনিয়নের উত্তরকাঠামারী, লতা ও ধলাই এলাকার বাঁধ ঝুকির মধ্যে রয়েছে। সোলাদানা ইউপির চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হক জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের নুনিয়াপাড়া, হরিখালীর বাঁধ মারাত্মক ঝুকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এদিকে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মান্নান গাজী জানান, সোলাদানা ইউনিয়নের ২৩নং পোল্ডারের পাটকেল পোতা, আমুড়কাটা স্লুইচ গেট, বাসাখালী ও পতন, বেতবুনিয়া ও সোলাদানার আবাসন এলাকার আঁধা কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। গদাইপুরের ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জুনায়েদুর রহমান জানান, ইউনিয়নের বয়রা, বাইশারাবাদ, হিতামপুর ও পুরাইকাটী এলাকার আঁধা কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। রাড়–লীর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ গোলদার জানান, ইউনিয়নের ৯নং পোল্ডারের মালোপাড়া ও ভড়ভুড়িয়ার গেট এলাকার ১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে দুপুরের কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি উপচে মালোপাড়া তলিয়ে যায়। লস্করের ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানিয়েছেন ভড়েঙ্গারচক গেট, বাইনতলা, আলমতলা হাটখোলা, আলমতলা দক্ষিণ বিলের গেট, লস্করের বাইনতলা খেয়াঘাট থেকে কড়–লিয়া ব্রিজপর্যন্ত ওয়াপদার বাঁধ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে স্থানীয় লোকজনদেরকে সাথে নিয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x