ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৬ অপরাহ্ন
ঠাকুরগাঁওয়ে তরমুজের ফলনে ধস লোকসানে চাষিরা 
Reporter Name

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার পাইকপাড়ায় তরমুজের ফলন নিম্নমানের বীজের কারণে ভালো হয়নি । তরমুজের ফলন কম হওয়ায় এবার ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের বীজ ব্যবহারের কারণে ফলন খারাপ হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে খরার প্রকোপ।

স্বাদে ভরা রসালো তরমুজ ফলের জন্য এক সময় ঠাকুরগাঁও বিখ্যাত ছিল। এপ্রিল-মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে শত শত ট্রাক তরমুজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেত এ এলাকা থেকে। গত বছরও এখানে তরমুজের ভালো ফলন হয়েছিল। কিন্তু এবারের দৃশ্য ভিন্ন। নিম্নমানের বীজ আর খরার কারণে মাঠজুড়ে তরমুজ ক্ষেত থাকলেও তাতে কোনো ফল নেই। এ কারণে মোটা অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ১০৬ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩৮ টন হিসেবে প্রায় ৪ হাজার টন তরমুজ ফলনের আশাবাদী কৃষি বিভাগ। ঠাকুরগাঁও জেলায় তরমুজ সংগ্রহ শুরু হলেও হাতেগোনা কয়েকজন সামান্য পরিমাণ বিক্রি করেছেন। গত বছর তরমুজের আবাদ হয়েছিল ১৩০ হেক্টর জমিতে। ফল হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার টন। হতরমুজ দ্রুত পচনশীল রসালো সুস্বাদু ফল। আগে শুধু মাটিতে চাষ করা হতো।

এখন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মাচা করেও চাষ করা হচ্ছে। কম খরচে বেশি লাভ পাওয়ায় মাটিতে চাষ বেশ উপযোগী। প্রথমে তরমুজ বীজ থেকে চারা করতে হয়। তার পরে সেই চারা প্রস্তুতকৃত গর্তে লাগাতে হয়। সঠিক পরিচর্যার পরে ১১০-১২০ দিনের মধ্যে তরমুজ ফল সংগ্রহ করা হয় মাটি থেকে। এ বছর আবহাওয়া উপযোগী না থাকায় ঠাকুরগাঁও জেলায় তরমুজে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেক আশা নিয়ে চাষিরা তরমুজের চাষ করলেও এখন হতাশায় ভুগছেন। ধারদেনা ও সার, বিষের বাকি শোধ করতেই হিমশিম অবস্থা তাদের। ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রহিমানপুরের পাইকপাড়া, বিমানঘাঁটি, জামালপুরের ভগদগাজী, বড়দীঘি, মোহন ইক্ষু খামার, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া, আমজানখোর,  রানীশংকৈল উপজেলার জনগাঁও, চাঁপাপাড়া এলাকায় তরমুজের গাছ ভালো হলেও ফল আসেনি। এতে চাষিরা আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন। ঠাকুরগাঁও  জেলার সদর উপজেলার রহিমানপুরের পাইকপাড়া গ্রামের তরমুজ চাষি আব্দুল জলিল বলেন, দুই একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছিলাম। খরচ হয়েছিল দেড় লাখ টাকা। তরমুজ ভালো হলে বিক্রি করতাম কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা।

অথচ দুই একরের তরমুজের মাঠ থেকে ১২ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। ধারদেনা করে তরমুজের চাষ করেছিলাম, এখন কেমনে ঋণ শোধ করব সেই চিন্তায় আছি। একই এলাকার চাষি নুর হোসেন বলেন, দুই একর জমিতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে তরমুজের চাষ করেছিলাম। এক টাকার তরমুজও বিক্রি করতে পারিনি। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি। তিনি বলেন, গাছ হলেও কোনো ফল আসেনি। মনে হয় সংগৃহীত তরমুজের বীজগুলো পুরাতন ছিল। তরমুজ গাছে দু-একটি ফল এলেও তা বড় হয়নি, ভাইরাসে নষ্ট হয়ে গেছে। দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মাসুদ রানা বলেন, আগে ঠাকুরগাঁও জেলার তরমুজ বিভিন্ন জেলায় যেত। এবার অন্য জেলা থেকে তরমুজ ঠাকুরগাঁও জেলায় আসছে। স্বাভাবিকভাবেই দাম বেশি থাকায় কিনে খেতে পারছি না। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, লাভজনক ফসল হিসেবে তরমুজ বেশ পরিচিত। ঠাকুরগাঁও জেলার তরমুজ বেশ ভালো উৎপাদন হয়। অনেক চাষি তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। কিন্তু এ বছর বেশ কিছু চাষি তরমুজ চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গাছ হলেও তেমন ফল না আসায় লোকসান হচ্ছে চাষিদের। কী কারণে তরমুজ গাছে ফল আসেনি, তার কারণ জানার চেষ্টা করছি। আগামীতে তরমুজ চাষিরা যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

One response to “ঠাকুরগাঁওয়ে তরমুজের ফলনে ধস লোকসানে চাষিরা ”

  1. … [Trackback]

    […] Read More Information here to that Topic: doinikdak.com/news/13123 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x