ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
বালিয়াডাঙ্গীতে রহস্যজনক আগুনের ঘটনায় নারী সহ আটক- ১২ জন
Reporter Name

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের লাহিড়ী সাবাজপুর ছোট সিংগিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামে ১ মাস ধরে ঘর-বাড়িতে বিভিন্ন সময় আগুন লাগার কারণ বের করতে কাজ করছে পুলিশ। আগুনের রহস্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঐ গ্রামের ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামে গত ২৯ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে আগুন লাগা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঐ গ্রামে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে বলে জানান,’ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘গ্রামে হঠাৎ ধরা আগুনের উৎস খুঁজে বের করতে রাত-দিন পাহারা বসাই আমরা। পুলিশ যখন পাহারায় থাকে তখন আগুন লাগে না। ‘এ ঘটনাটিকে আমার সন্দেহজনকভাবে দেখছি। তাই ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’ তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে আগুন আতঙ্কে আছেন ঐ গ্রামের লোকজন। বালিয়াডাঙ্গী  উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গ্রামে গিয়েও আগুনের কারণ বুঝে উঠতে পারছে না।

গত ২৯ মার্চ শবে বরাতের রাতে মফিজুল হকের বাড়িতে প্রথম আগুনের ঘটনা ঘটে। ঐ দিন তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও পরদিন ৩০ মার্চের আগুনে তিনটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হঠাৎ জ্বলে ওঠা এ আগুনে পুড়েছে খড়ের গাদা, ঘরের আসবাবপত্র, বিছানা, খাদ্যশস্যের বস্তা এমনকি কাপড়চোপড় । লেগে যাওয়া আগুন সহজে নেভানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি পানির পাম্প। উঠানে নানা পাত্রে জমিয়ে রাখা হয়েছে পানি। গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ একদিন আমার খড়ের ঘরে প্রথমে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভান। আমি মনে করছি কেউ হয়তো সিগারেট খেয়ে আগুন ফেলে চলে গেছে। কিন্তু এরপর আমার ভাতিজা মামুনের ঘরের বারান্দায় গুঁজে রাখা কয়েকটি দাওয়াত কার্ডে আগুন লাগে।’ আরেক বাসিন্দা আব্দুল আজিজ জানান, মাসখানেক ধরে চার-পাঁচটি পরিবারের মধ্যে কারও না কারও ঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। একই বাড়িতে একাধিকবারও আগুন লেগেছে।

সব মিলিয়ে ৫০ বারের বেশি আগুন ধরার ঘটনা ঘটেছে। তবে গত কয়েক দিন ধরে আগুন ধরার ঘটনা বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার ও শনিবার আট-নয়বার আগুন ধরেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ঘটনা ঘটছে বেশি। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কুলসুম বেগম বলেন, ‘আগুনে পুড়ে যাওয়ার ভয়ে হামরা কেহ ঘরত আলনাত কাপড় থুই না। কয়েকবারের আগুনত মোর শাড়ি, মোর স্বামীর লুঙ্গি, জামা, তোশক পুড়ে গেছে… গ্রামের সবাই আগুনের ভয়ে ঘুমবা পারি না। সবাই মিলে সবার বাড়ি যায় আগুন খুঁজে বেড়াছি। কার বাড়িত আগুন লাগেছে।’ চাড়োল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার চ্যাটার্জী জানান, আগুনের কথা শুনে তিনি গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছেন কয়েকবারই।

তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার ঘটনাটা আসলে অবাক করার মতো। আগুনে পুড়ে যাওয়া খড়ের স্তূপ, আসবাব, কাপড়চোপড় দেখেছি। সান্ত্বনা দিয়েও তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাটাতে পারিনি। আমি আমার ইউনিয়নের দুইজন গ্রাম পুলিশকে ঐ গ্রাম পাহারা দেয়ার জন্য রাখছি।’ আগুনের উৎস খুঁজে পায়নি ফায়ার সার্ভিসও। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার শফিউল্লাহ বসুনিয়া বলেন, ‘প্রথম আগুন লাগার দিনই আমি ওই গ্রামে গিয়েছিলাম। একটি আগুন নেভানোর পর আরেকটি জায়গায় আগুন লাগে। সেটাও নেভাই। এরপর সেখানে কাপড়চোপড় ও ঘরের জিনিসে বারবার আগুন লাগছে। কী কারণে এমন ঘটছে, আমরা বলতে পারছি না।’

গ্রামটি ঘুরে দেখেছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যোবায়ের হোসেন, তিনি বলেন, ‘আগুনের কারণ উদ্ঘাটনের জন্য আমরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তাকে বলেছি। রাসায়নিক বিষয় নিয়ে যেসব দফতর কাজ করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত এ ঘটনার সুরাহা হবে।’ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, কম্বল ও অন্যান্য সহায়তা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

3 responses to “বালিয়াডাঙ্গীতে রহস্যজনক আগুনের ঘটনায় নারী সহ আটক- ১২ জন”

  1. … [Trackback]

    […] Here you can find 30729 additional Information on that Topic: doinikdak.com/news/12308 […]

  2. … [Trackback]

    […] Info on that Topic: doinikdak.com/news/12308 […]

  3. … [Trackback]

    […] There you can find 30157 additional Information on that Topic: doinikdak.com/news/12308 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x