ঢাকা, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন
কাঞ্চন পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এখন মাদকসেবীদের আখড়া
Reporter Name

আব্দুল মুমিন, রূপগঞ্জ :  রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রবেশমুখের ফটক ভাঙাচোরা হওয়ায় মাদকসেবীরা অনায়াসে ভেতরে ঢুকে মাদকের আসর বসায়।

নানা জটিলতা, লোকবল সংকট ও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ঠিকমতো না আসার কারণে এখানে রোগীও আসছে না। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাঞ্চন পৌর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রবেশমুখে প্রধান ফটকটি ভাঙাচোরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে রয়েছে পচা পানির ডোবা। এই ডোবার দুর্গন্ধে এখানে রোগী ও চিকিৎসকদের টেকা দায়। ফলে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনায়াসে ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ থাকার কারণে মাদকসেবীরা দিনদুপুরে এখানে মাদকের আসর বসায়। ফলে সাধারণ রোগীরা আসতে ভয় পায়।

এ ছাড়া লোকবল সংকট ও ওষুধ সংকট তো রয়েছেই। তাই রোগীরা কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে এ হাসপাতালে আসা ভুলেই গেছেন। স্থানীয়রা জানান, কাঞ্চন পৌর এলাকার বাসিন্দা হাজী সেরাজুল মোল্লার দান করা ৩০ শতক জমিতে ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করা হয় এ কেন্দ্রটি। সারা দেশের মতো স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অর্থায়নে কাঞ্চন পৌর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি ও গর্ভকালীন সেবায় মা ও শিশুসহ সাধারণ রোগী সেবার জন্য এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়

। ২৭ বছর ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করে আসছেন একই এলাকার বাসিন্দা এসওসিএমও জহিরুল ইসলাম, ইউনিয়নভিত্তিক পরিদর্শক হিসেবে লুৎফর রহমান। এছাড়া বিধি মোতাবেক এখানে একজন করে এসওসিএমও, ফার্মাসিস্ট, এফডব্লিউভি, আয়া এবং এমএলএসএস থাকার নিয়ম থাকলেও ফার্মাসিস্ট ও এলএমএসএস নিয়োগ নেই শুরু থেকেই। ফলে ওষুধ বিতরণ ও রোগী সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বিএনপি সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বর্তমান সরকারের লোকজন এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে অবহেলিত অবস্থায় এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চরম বেহালে পরিণত হয়। কাঞ্চন পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, “বেহাল এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি।

এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তবে পৌর সভার পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনের অংশে বালু ভরাট করে এবং সামনের অংশে প্রাচীর দিয়ে নিরাপদ পরিবেশ করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি, যা আগামী অর্থবছরেই সমাধান হবে।”  কাঞ্চন পৌর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রবেশ করে দেখা যায়, এখানে দায়িত্বরত এসওসিএমও জহিরুল ইসলাম মিয়া এবং এফডব্লিউভি সুমা রানী ছাড়া কেউই কার্যালয়ে উপস্থিত নেই। খাতা কলমে ইউনিয়ন পরিদর্শক পদে লুৎফর রহমান নামের একজন দায়িত্বে থাকলেও নিয়মিত অফিস করেন না তিনি। লুৎফর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অফিসের কাজে বাইরে আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হামিদুল্লাহ বলেন, “এ হাসপাতালে এলেই বলে ডাক্তার নেই, আবার ওষুধ নেই।” কেন্দুয়ার বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগে ২৪ ঘণ্টাই সেবা দিতো। এখন বেহাল দশা ও ওষুধ না পেয়ে কেউ আর এখানে আসে না।” দায়িত্বরত এসওসিএমও জহিরুল ইসলাম মিয়া বলেন, “রোগীরা সেবা নিতে আসেন। তবে তাদের মনমতো ওষুধ দিতে না পারায় ক্ষোভ জানিয়ে চলে যান। শুরু থেকেই ফার্মাসিস্ট পদ শূন্য এখানে। তাই সব কাজ আমাকেই করতে হয়। এসব কারণে প্রকৃত সেবা না পেয়ে পরে আর রোগীরা আসতে চায় না।”  তিনি আরও বলেন উপজেলা থেকে যে পরিমাণ ওষুধ দেয় তা পর্যাপ্ত নয়। তবে মাসে ৪ শতাধিক রোগী এখানে সেবা নেয়।  এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নুর জাহান আরা খাতুন বলেন, “কাঞ্চন পৌর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্যাগুলো জেনেছি। ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়ে এসব সংকটের সমাধানে কাজ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x