ঢাকা, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন
মেয়ের লাশটা চাই, মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার বিচার চাই’
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় আগুনে অন্তত ৫২জনের মৃত্যুর পর শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি আইন অমান্য করে শিশু শ্রম ব্যবহারের বিষয় আবার আলোচনায় এসেছে।

কারখানাটিতে নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১৬ জন শিশু থাকতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।

সরকারের কারখানা পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কম বেতনে শিশুদের কাজে নেয়ার অভিযোগে তারা গত ৩০শে জুন ঐ কারখানার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করেছিল।

তবে শুধু রূপগঞ্জের কারখানা নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ৪০ লক্ষ শিশু কাজ করছে বলে ধারনা করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

অভাবের কারণে শিশুকন্যা কারখানায়
মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের সোমারাণি বর্মণ এখন অন্তত তার শিশুকন্যার মৃতদেহ চাইছেন।

তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো।

তাদের এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় তার মেয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিল কারখানাটিতে আগুন লাগার বার দিন আগে।

সোমারাণি বর্মণ আগুন লাগার খবর পাওয়ার সাথে সাথে মেয়ের খোঁজে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ছুটে আসেন কারখানার সামনে।

 

সেখান থেকে ঢাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এসে মেয়ের মৃতদেহ পেতে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন।

সোমারাণি বর্মণ বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে তাদের পরিবারের কর্তার রোজগার কমে যাওয়ায় অভাবের কারণে শিশু কন্যাকে কারাখানায় কাজে পাঠিয়েছিলেন।

“মেয়ের লাশটা চাই। মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার বিচার চাই” বলেন সোমারাণি বর্মণ।

রূপগঞ্জের কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডের আগেই গত ৩০শে জুন কারখানা পরিদর্শন বিভাগ ঐ কারখানার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করেছিল কম বেতনে শিশুদের কাজে নেয়ার অভিযোগে।

কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেছেন, তারা মামলা করার আগে কারখানাটিকে নোটিশও দিয়েছিলেন।

“এরিয়ার (এলাকার) যে অফিসাররা আছেন, তারা এটা পরিদর্শন করেছেন, তারা শিশু শ্রমিক এবং ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের দেখতে পান” বলে জানান মি: বড়ুয়া।

তিনি বলেছেন, “তাদের কর্মকর্তাদের কারখানা পরিদর্শনের পর শিশু শ্রমিক নিয়োগ না করার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছিল, কারখানার মালিকপক্ষ তার জবাব দেয়নি।”

তিনি উল্লেখ করেন, নোটিশের জবাব না পাওয়ার পর গত ৩০শে জুন তারা শ্রম আদালতে মামলাটি করেছিলেন।

কারখানাটির কর্তৃপক্ষ সরকারি অধিদপ্তরের ব্যবস্থাকে আমলে নেয়নি বলে নারায়ণগঞ্জের কর্মকর্তারা বলেছেন।

ইউনিসেফ এর উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলেছে, কারখানাটিতে নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন বা তারও বেশি শিশু রয়েছে। এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, স্বজনরা যে দাবি করছেন, তার ভিত্তিতে নিহতদের মধ্যে ১৬ জন শিশু থাকতে পারে, যা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে তিনি বলেছেন, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিহতদের বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত করে তারা বলতে পারছেন না এবং ডিএনএ পরীক্ষায় কিছুটা সময় প্রয়োজন।

ইউনিসেফ কেন উদ্বিগ্ন?
এদিকে বিভিন্ন খাতে শিশু শ্রমের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।

সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষা আইন থাকলেও ৪০ লাখের বেশি শিশু বিভিন্ন খাতে কাজে রয়েছে এবং এরমধ্যে ৩০ লাখের বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজে করছে।

ঢাকায় ইউনিসেফ এর চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা ফাতেমা খায়রুন্নাহার বলেছেন, পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক বলে তারা মনে করেন।

“ইনফরমাল সেক্টরে শিশু শ্রমের হার এখনও অনেক বেশি।”

ইনফরমাল সেক্টরের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফাতেমা খায়রুন্নহার বলেছেন, ট্রান্সপোর্ট সেক্টর (পরিবহন) রয়েছে।

”এই যে কারখানাটিতে শ্রমিকরা কাজ করছিলো। এরকম অনেক কারখানা আছে। সিলভার কারখানা এবং লেদার শিল্পেও শিশু শ্রম রয়েছে,” তিনি বলেন।

তিনি মনে করেন, রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে শিশু শ্রম বন্ধ হলেও, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য যে গার্মেন্টসগুলো আছে, সেগুলোতে শিশু শ্রম আছে।

এমন তথ্য তাদের কাছে রয়েছে।

মন্ত্রণালয় কী বলছে?
তবে বাংলাদেশে শিশু শ্রমের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে ইউনিসেফ, তার সাথে একমত নন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে আব্দুস সালাম।

“চল্লিশ লাখ শিশু বিভিন্ন খাতে কাজ করছে, এটা ঠিক নয়,” তিনি বলেন।

”আমাদের যে ডাটা আছে, তাতে ১৩ লক্ষ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে আছে।”

শ্রমিক ইউনিয়নগুলো কী বলছে?
একটি শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী মোশরেফা মিশু মনে করেন, বিদেশি ক্রেতাদের চাপের কারণে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসগুলোতে শিশুশ্রম বন্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু অন্য খাতে সরকারের নজরদারি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

“ইনফরমাল খাতে সরকারের তৎপরতা এবং নজরদারি একেবারে নেই” বলে মনে করেন মোশরেফা মিশু।

কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশের ৩৮টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করে সেগুলোতে শিশুশ্রম বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

‘শিশুশ্রম বন্ধে আইন আছে’
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে আব্দুস সালাম বলেছেন, গামেন্টস এর পাশাপাশি চামড়া শিল্প, পুরোনো জাহাজ ভাঙার কাজ সহ আটটি খাতে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে।

“শিশুশ্রম বন্ধে আমাদের আইন, বিধি এবং পলিসি আছে। সুতরাং এগুলো উদ্যোগ আছে,” তিনি বলেন।

”তারপরও এই করোনার সময়ে একটা আশংকা করা হচ্ছে যে, হয়তোবা বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু যে সংখ্যায় বলা হচ্ছে, সেই সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়নি” বলে শ্রম সচিব মিঃ সালাম মনে করেন।

তিনি আরও বলেছেন, স্কুলগুলো যেহেতু এখন বন্ধ আছে, এই সুযোগে হয়তো কিশোর ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা কাজে নিয়োজিত থাকতে পারে।

সরকার এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কর্মকর্তারা শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা বলছেন।

কিন্তু মাঠপর্যায়ে আসলে কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে বা নজরদারি কতটা রয়েছে-সেই প্রশ্নই এখন তুলছেন শ্রমিক নেতাদের অনেকে।

5 responses to “মেয়ের লাশটা চাই, মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার বিচার চাই’”

  1. It’s appropriate time to make a few plans for the longer term and it is time
    to be happy. I have learn this put up and if I may just I want to suggest you some attention-grabbing things or suggestions.
    Maybe you can write next articles regarding this article.
    I want to learn more things about it!

  2. Wonderful article! This is the kind of info that are supposed to be shared around the internet.

    Disgrace on the seek engines for not positioning this put up upper!
    Come on over and discuss with my website . Thank you =)

  3. Thank you for sharing your info. I really appreciate your efforts
    and I will be waiting for your further write ups thanks once again.

  4. Hmm it looks like your blog ate my first comment (it was super long) so I guess I’ll just sum it
    up what I had written and say, I’m thoroughly enjoying your blog.
    I as well am an aspiring blog writer but I’m still
    new to everything. Do you have any tips for beginner blog writers?
    I’d certainly appreciate it.

  5. … [Trackback]

    […] Read More on that Topic: doinikdak.com/news/35685 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x