মহান আল্লাহ তা’য়ালা প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে ভালোবাসার বীজ বোনে দিয়েছেন ৷ ফলে প্রতিটি সৃষ্ট প্রাণীর মধ্যে নানান প্রকৃতির ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে ৷ পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত-অপরিচিত সবার মাঝে পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা এক মহা প্রাকৃতিক নিয়ম ৷ ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন রকম ভালোবাসার সূচনা হয় ৷ অসহায়, মাজলুম, বিপদগ্রস্থ, বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশী, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ভিন্ন ভিন্ন ৷ কিন্তু, সব ভালোবাসার সৃষ্টি কেবল হালালের জন্য ৷ আল্লাহ তা’য়ালা যেমন ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেনে, তেমনি তার ব্যবহারের বিধানও দিয়েছেন ৷ যখন সঠিক স্থানে প্রয়োগের পরিবর্তে অনুপযুক্ত স্থানে প্রয়োগ হয়, তখন বিপর্যয় ঘটে ৷
সর্বপ্রকার ভালোবাসার মধ্যে একটি হল নারী-পুরুষের পরস্পর ভালোবাসা ৷ দূর্ভাগ্যবশত, তা কেবল অন্যায় পথেই বেশি ব্যবহৃত হয় ৷ ভালোবাসা হালাল যদি স্ত্রীর সাথে হয় ৷ অপরদিকে ভালোবাসা হারাম যদি পর নারীর সাথে হয় ৷ বর্তমান নারী-পুরুষের ডিজিটাল শব্দে ব্যবহার করা ভালোবাসার সম্পর্ক একটি মারাত্মক অবৈধ সম্পর্কের মিলনমেলা, যার আড়ালে বিদ্যমান নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা ৷ এই অবৈধ সম্পর্ক কেবল একটি অপরাধে সীমাবদ্ধ রাখে না; বরং হাজার অপরাধের সাথে সাক্ষাৎ ঘটায় ৷ বর্তমান অবৈধ সম্পর্ক পরিবার ধ্বংসের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি ৷ স্বামী থাকা অবস্থায় পর পুরুষের সাথে রাত্রি যাপন, স্ত্রী থাকা অবস্থায় পর নারীর সাথে রাত্রি যাপন সাধারণ কোনো অপরাধ নয়; বরং মহা অপরাধ৷ যার ফলে সংসারে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটে থাকে অত্যদিক ৷
অন্যদিকে একটু বয়স পাকা হয়ে উঠতে না উঠতেই তরুণ-তরুণীর যৌবনের তাড়না এক প্রবল শক্তিশালী জলস্রোতের মতো ধেয়ে যাচ্ছে অবৈধ মিলনের পথে ৷ চোখে চোখে কথা, হৃদয়ে সৃষ্ট উত্তাল ঢেউয়ের মারাত্মক প্রবণতা ও আকাশচুম্বী গল্প গুজবের অসারতা ধীরে ধীরে ধাবিত করে জন্ম দেয় অবৈধ যৌন সম্পর্কের পতিতালয় ৷ পাশ্চাত্য নোংরা সংস্কৃতির অনুসরণে বর্তমান তরুন-তরুণী রেস্টুরেন্ট, পার্ক, নানাবিধ অনুষ্ঠান ও উৎসব ইত্যাদিতে অবাধ মেলামেশায় ডুবন্ত ৷ এরূপ অবাধ যৌন সম্পর্কের ফলে জারজ নবজাতকের খোঁজ মিলে ডাস্টবিন, বার্থরুম ও জলাশয়ে ৷ পত্রিকার হেডলাইনগুলো যেন চিৎকার করে বলে, “আমি নবজাতকের দোষটা কোথায়?” যদি একটি অবৈধ সম্পর্কের অপরাধ ঢাকতে গিয়ে ভিন্ন একটি জঘন্য অপরাধের আশ্রয় নিতে হয়, তাহলে এমন সম্পর্কের মূল্য কই? এমনকি অবৈধ সম্পর্কের তাড়নায় গলায় ফাঁস কিংবা অপরাধ চাপা দিতে পিতা-মাতা খুন, স্বামী হত্যা ও স্ত্রী হত্যা ইত্যাদিও সংঘটিত হয় ৷ এমন এমন অপরাধের সূচনা ঘটে যা কল্পনার অতীত ৷
তাই, এমন অপরাধ নির্মূল করতে হলে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য ৷ একমাত্র কুরআন ও হাদীসের আইন প্রয়োগ করা হলে কেবল এমন অপরাধ রোধ করা সম্ভব হবে ৷ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ’টি করে বেত্রাঘাত কর ৷ আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে ৷ আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে ৷’ (সূরা নূর : ২)
আয়াতে কারিমা থেকে স্পষ্ট যে, অবিবাহিত নর-নারীর জিনা বা ব্যভিচারের শাস্তি হল ১০০ করে বেত্রাঘাত ৷ হাদীস থেকে জানা যায় যে, বিবাহিত নর-নারীর জিনা বা ব্যভিচারের শাস্তি হল জন সম্মুখে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা ৷ যদি এমন বিধান সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করা হত, তাহলে কখনো এমন প্রকৃতির অপরাধ সংঘটিত হত না ৷ একবার যদি কেউ এমন শাস্তির সম্মুখীন হয়, তাহলে দ্বিতীয়বার কারো এমন অবৈধ পথে পা রাখার সাহস হবে না ৷
মূলত এই অপরধের সূচনার ধরন হরেক রকমের হয়ে থাকে ৷ তবে বিশেষ করে এই অপরাধের পিছনে প্রাথমিক স্তর হল দেখা, দেখা থেকে শুরু হয় চ্যাটিং, ফোনালাপ ৷ ফোনালাপের পর কোনো পার্কে ঘোরাফেরা এবং এক পর্যায়ে তা ব্যভিচারের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে ৷ তাই উচিত হলো প্রথমত নিজেদের দৃষ্টিকে নিম্ন রাখা ৷ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে ৷ এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র ৷ নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত ৷ আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে ৷ আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না ৷ তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে ৷ আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ৷ আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে ৷ হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার ৷’ (সূরা নূর: ৩০-৩১)
আল্লাহ তা’য়ালা অন্যত্রে ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ ৷’ (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২)
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন আমার সকল মুসলিম তরুন-তরুণী ভাই ও বোনদের দ্বীন বুঝার এবং ঘৃণ্য এই অবৈধ সম্পর্ক থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন ৷ আমিন !