ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন
নারী: পৃথিবীতে আল্লাহর অনন্য সুশোভিত সৃষ্টি
আবদুর রশীদ

পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা সবই মানুষের জন্য ৷ আর মানুষের জন্য যে বস্তুগুলো সুশোভিত করেছেন তার প্রধান হল নারী ৷ পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রূপা, চি‎‎হ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত । এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী । আর আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল ৷’ (সূরা আল-ইমরান: ১৪) উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ৫-৬টি বিশেষ সুশোভিত বস্তুর কথা তুলে ধরেছেন ৷ কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা প্রধান সুশোভিত বস্তু হিসেবে উল্লেখ করেছেন নারীকে ৷ সুতরাং বুঝা যায় নারী কতটা ছলনাময় বস্তু !

মানুষের জন্য যত বিনোদনের বস্তু রয়েছে, তার মধ্যে নারী প্রধান ৷ একমাত্র নারী মানুষের মানসিক, দৈহিক ও জৈবিক চাহিদা মিটিয়ে থাকে; অন্য কোনো বস্তু এত উচ্চ পর্যায়ের বিনোদন যোগান দিতে পারে না ৷ তাই, সাধারণত মানুষ নারীর প্রতিই সবচেয়ে বেশি দূর্বল হয়ে থাকে ৷ নারী হচ্ছে শয়তানের আসল হাতিয়ার ৷ সে নারীকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে মানুষের সামনে তুলে ধরে ৷ নারীকে এক বিপদজনক ফাঁদ হিসেবে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে রাখে ৷ হাদিসে এসেছে, রাসূল(স:) বলেছেন- আমার (ইন্তেকালের) পরে আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য নারী অপেক্ষা অধিক ফিতনার শঙ্কা আর কিছুতেই রেখে যাইনি। (সহীহ বুখারী: ৫০৯৬; মুসলিম: ২৭৪০; তিরমিযী: ২৭৮০; ইবনু মাজাহ: ৩৯৯৮; আল জামি: ৫৫৯৭)

পৃথিবীতে যত অশ্লীলতার বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে তার মূলে আছে নারী ৷ যদি প্রতিটি স্তরে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখা মিলবে নারীর বিশেষ বিশেষ ছলনা ও তার অশ্লীলতার ফাঁদ ৷ নারীর অশ্লীলতার ছলনা ছড়িয়ে দিতে বর্তমান মিডিয়া হচ্ছে শয়তানের সেরা একটি মাধ্যম ৷ মিডিয়ায় প্রবেশ করতেই উপস্থিত হয়ে পড়ে নারীর বেহায়াপনা দৃশ্য ও বিজ্ঞপ্তির অসারতা ইত্যাদি ৷ ইউটিউবে কুরআন পাঠ, নাত, সংগীত ইত্যাদি শুনার সময় নারীর অশালীন এডের উপস্থিতি এক মহা বিপদ সংকেত ৷ সার্চ না করলেও যেন অটোমেটিক্যালি সামনে উপস্থিত হয়ে পড়ে অশালীন দৃশ্য ৷ ভুলে যদি কেউ একবার ওই গর্তে পা বাড়াই, তাহলে ব্যয়ভিচারের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত না পৌঁছে ক্ষান্ত হয় না ৷ কারণ এতে শয়তান সবচেয়ে বেশি আনন্দ-রস ছিটাতে থাকে ৷ ফলে এর থেকে বেঁচে থাকাও সহজ নয় ৷

হাসপাতালের রিচিপশন পোস্ট, কোম্পানির প্রধান ডেস্ক, বিভিন্ন শো রুমের মূল ধাপে নারীদের উপস্থিতি এক বিরাট ছলনা ৷ ক্রেতাকে আকর্ষণীয় করে তুলতেই মূলত প্রতারণার বিশেষ ফাঁদ ৷ যতগুলো নিউজ চ্যানেল রয়েছে প্রায় সবগুলোতে সংবাদ ডেলিবারি দেয় নারী শৌ করে ৷ যে কোনো কিছুর বিজ্ঞাপন করা ব্যানার ও পত্রিকার হেড কলাম ও বিনোদন পাতায় নারীর অস্তিত্ব বিরাজমান ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদনের স্থানে নারীদের প্রধান ভুমিকা লক্ষ্য করা যায় ৷ প্রতিটি মার্কেট প্লেস ও হাট-বাজারে নারীদের সমাগম অত্যধিক ৷ ভালোবাসা দিবস, নারী দিবস, জন্মদিন ইত্যাদি বিভিন্ন উৎসব পালিত হয় নারীকে কেন্দ্র করে ৷ এসব উৎসব অবাধ নারীর সংস্পর্শে জড়িয়ে পড়ার ফাঁদ ৷

প্রাতিষ্ঠানিক ইংরেজি সাহিত্যসহ অনেক সাহিত্যে বিশেষ করে ১ম-১০ম শ্রেনীর পাঠ্য বইয়ে সরাসারি ও কার্টুন আকৃতির নারীর ছবিও বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত ৷ এসবও কিন্তু ছলনার একটা অংশ, যদিও এর মারাত্মক কোনো প্রভাব প্রকাশিত নয় ৷ পরীক্ষার কেন্দ্রে নারী-পুরুষ পাশাপাশি বসার অবাধ ব্যবস্থাও একপ্রকার ছলনার ষড়যন্ত্র ৷ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নারী-পুরুষের যৌত অংশগ্রহণ পুরোপুরি নারীকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা প্রধান লক্ষ্য ৷ শয়তান সবসময় নারীকে প্রধান প্রধান স্থানে ব্যবহার করে থাকে যেন সহজে পুরুষ প্রতারিত হতে পারে ৷ বিমান, ও রেস্টুরেন্টে নিয়োজিত ওয়েইটার থাকে আশালীন কাপড় পরিহিত সাজগোছ করা নারী ৷ এসব শয়তানের সৃষ্টি করা প্রতারণার জাল ৷ এছাড়াও যে কোনো প্রকার প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে নারী প্রদর্শন প্রথম অবস্থানে ৷ এমন কোনো বিজ্ঞাপন সহজে খোঁজে পাওয়া সম্ভব না যেখানে নারীকে ব্যবহার করা হয়নি ৷ চিন্তা করুন, প্রতিটি সেক্টরে নারীর অস্তিত্ব লক্ষ্যণীয় ৷ পৃথিবীতে যত কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, সে সবের পিছনে বেশিরভাগ থাকে নারী ৷ অবাধ ভালোবাসা নামে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ৷

সুতরাং, নারী মানুষের জন্য সবচেয়ে সুশোভিত বস্তু হিসেবে স্পষ্টরূপে প্রতিয়মান ৷ শয়তান নারীকে ব্যবহার করাতে তার উদ্দেশ্য বেশিরভাগই সফল হয় ৷ কেননা পুরুষ সহজে নারীর ফাঁদে পা বাড়ায় ৷ ইসলাম বিরোধী যত পরিকল্পনা ইহুদী-খ্রিষ্টানদের রয়েছে, তার মধ্যে নারী হল অন্যতম ৷ মুসলিমকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য তারা বিশেষ করে নারীকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ৷ অতএব, আমাদের উচিত মহান আল্লাহ তা’য়ালার আইন অনুযায়ী সর্বদা নারীর অশালীন কজ থেকে নিজেদের বাঁচানো ৷ পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে । এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র । নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত ৷ আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে । আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না । তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে । আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে । আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে । হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার ।’ (সূরা নূর, আয়াত:৩০-৩১)

পুরুষ যেহেতু নারীদের প্রতি দূর্বল, তাই তাদের ফাঁদে পা বাড়ানো স্বাভাবিক ৷ সে জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয় ৷ অতএব, আমাদের কর্তব্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা ৷ মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার এবং নারীর ছলনা থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুক ৷ আমিন !

লেখক:
শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম
সদস্য, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x