আপনারা অনেকেই জানেন সিলেটে অনেক দর্শনীয় স্থানের কথা। তার মধ্যে সাদা পাথর একটি।
সিলেট থেকে আনুমানিক ত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত এ জায়গাটি। সিলেটের গোয়াইঘাটের ভোলাগঞ্জে এটি অবস্থিত।
ওখানে যেতে হলে প্রথমে গাড়ি ভাড়া করবেন। সিলেট শহরের আম্বরখানা ছেড়ে এয়ারপোর্টের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আপনি দেখতে পাবেন,রাস্তার দুই পাশে নয়নাভিরাম সিলেটের মালিনীছড়া চায়ের বাগান।
এয়ারপোর্ট রোড ধরে আরো ও অনেক দূরে গিয়ে রাস্তার ধারে ডান দিকে পাবেন পাখিবাড়ি। এ পাখি বাড়িটির কথা অনেকেই জানেন। প্রতিদিন অনেক মানুষ এবাড়িতে পাখি দর্শনে যান। গাছে গাছে পাখির কলকাকলীতে মুখোরিত এ বাড়িতে ঢুকা মাত্রই আপনি দেখতে পাবেন গাছে গাছে পাখি পাখি আর পাখির বাসা, বাসায় বাসায় পাখির ছানা আর ছানা। ও বাড়িতে আছে একটি পুকুর। পুকুরের চার পাশে বিভিন্ন গাছ আর সেসব গাছে গাছে আছে পাখি আর পাখি। এসব দেখে আপনি রওয়ানা দিন ঐ ভোলাগঞ্জে। কারণ আসার সময় ক্লান্ত শরীর নিয়ে এসব দেখতে আর ভালো লাগবে না। তাছাড়া সন্ধ্যা নেমে আসে।
ভোলাগঞ্জে যাবার পথে পথেও কিন্তু অনেক প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে বটে! পানিতে টুই টুম্বুর নদী, হাওর, বহুদূরে উঁচু উঁচু পাহাড়, পাহাড় বেয়ে নামছে ঝর্ণা ধারা। দেখবেন সাদা সাদা মেঘ পাহাড়ে বসে আছে। যত কাছে যাবেন পাহাড়গুলোকে দূর থেকে নীল দেখালেও পরে সবুজ আর সবুজ দেখাবে । আরো দেখবেন নদী। নদীতে বড় বড় নৌকো, লঞ্চ আর ছোট ছোট নৌকো আর জেলেদের মাছ ধরা।
যা বলছিলাম। ওখানে পৌঁছে আপনাকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। একেক নৌকায় ওরা আট জনের বেশি মানুষ বহন করেনা। এতে এক্সিডেন্টের ঝুঁকি বেশি তাই।
ভোলাগঞ্জ থেকে নৌকো নিয়ে আপনি সোজা সাদা পাথরে চলে যাবেন। নৌকায় যেতে যেতে ও দেখবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
ওখানে নৌকো থেকে নেমে আপনি দেখতে পাবেন পাথর আর পাথর। গন্তব্যে যেতে হলে এসব পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটেই যেতে হবে।
এসব পাথরে খালি পায়ে বা উঁচু কোন জুতো নিয়ে হাঁটতে যাবেন না। রোদের প্রকোপে পাথরগুলো এত গরম হয় যে খালি পায়ে হাঁটাই যায় না। পাথর গুলোতে হাঁটবেন সাবধানে৷ পড়লে মাথা ফাটবে, পা বা হাত ভেঙে যেতে পারে।
পাথরের তীর ঘেঁষেই নদী। নদীতেও আছে অনেক অনেক পাথর। আকাশ নীল থাকলে পানির রঙ ও কিন্তু নীল থাকবে আর আকাশ মেঘলা থাকলে পানির রঙ থাকবে কালচে।
যতটুকু পাথর আপনার পা ছুঁয়ে যাবে ততোটুকুই আপনার জন্য নিরাপদ। এর পরে আর আপনার জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। কারণ এত বেশি স্রোত থাকে যা সাঁতার জানা মানুষের পক্ষে ও কন্ট্রোল করা সম্ভব না, কোনমতেই না।
ওখানে আছে অনেক টিউব। আপনি পছন্দ করে টিউব ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু দয়া করে এই টিউব নিয়ে কখনো ডেঞ্জার পয়েন্টে যাবেন না। এতে করে আপনি ভারসাম্যও হারাতে পারেন। তেমনি একটি ঘটনা আমার চোখের সামনেই ঘটলো। আরেকজন ডেঞ্জার পয়েন্টে সাঁতার কাটতে গিয়ে পরে আধমরা হলেন। এখন তিনি কেমন আছেন জানিনা।
আসলে কী জানেন, ওখানে যাবার পর সবাই সবার আনন্দ নিয়েই ব্যস্ত থাকে মানে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে । কেউ কারো দিকে তেমন খেয়াল করেনা। এতে করে এই দূর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। তাই কেউ কারো সন্তানকে কারো সাথে দেবেন না দয়া করে। কারো ওপর নির্ভর করবেন না কিছুতেই।
মহিলারা ওখানে গেলে পানিতে নামার আগে, পোশাক আশাকের ব্যাপারে বেশ সতর্ক থাকতে হবে । সুঁতি কাপড় অবশ্যই ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন। কারণ চাক্ষুষ সাক্ষী, ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। পাতলা কাপড় ও কিন্তু না। তাছাড়া এমন কিছু কালার আছে যা আপনারাই বুঝবেন ওগুলো কালারের কাপড় না পরাই ভালো। ঐ কালারের কাপড় ভিজে যাবার পর আপনি নিজেই বিব্রতবোধ করবেন এবং মাটি হয়ে যাবে আপনার সকল আনন্দ। গয়নাঘাটি না পরাই ভালো। কখন পানিতে পড়ে যায় তাও বুঝা মুশকিল।
আপনাদের মোবাইল, ক্যামেরা পানিতে সাবধানে ধরবেন। স্রোতের টানে পা পিছলে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
একজন বিশ্বস্ত মানুষ টাকা দিয়ে হলেও বলে কয়ে সাথে করে আনবেন আপনার জিনিসগুলো পাহারা,দেবার জন্য। তাকেও মাঝে মাঝে উপভোগের একটু সময় দিলে ভালো হয়।
সবাইকে ছাতা, মাথায় বড় ক্যাপ রাখা ভালো। যদিও আপনার বডি পানিতে আরাম পাচ্ছে অথচ মুখ কিন্তু সূর্যের আলোতে একেবারে পুড়ে যাবে। এতে দেখা যাবে আপনার চেহারায় মেছতা দেখা দিয়েছে। ওপরে উল্লেখিত সব গুলোই কিন্তু বিছনাকান্দি, জাফলং শ্রীপুর লালাখাল ইত্যাদি জায়গায় এসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৫ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের ওখানে না নেয়া ভালো।
কিছু খাবার সাথে নেয়া ভালো। সাঁতার কাটলে অনেক ক্ষুধা পায়।
আপনি ওখানে যা খাবেন তার ময়লাটা একটা পলিথিনে ভরে অন্য কোথাও ডাস্টবিনে ফেলুন। ভুলেও এখানে সেখানে বা পানিতে ফেলবেন না। আসার সময় নিয়ে আসুন অথবা ওখানে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন।
মনে রাখবেন, এসব জায়গা থেকে সন্ধ্যার আগেই কিন্তু বাড়ি ফেরা ভালো ; যদিও রাস্তাঘাট এখন অনেক উন্নত হয়েছে তারপরও ।
এসব জায়গায় যাবার দর্শনের জন্য বর্ষাকালই উপযুক্ত সময় ।
স্বাগতম সিলেট পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। সবাইকে ধন্যবাদ।
লেখকঃ গল্পকার ও প্রাবন্ধিক।
Leave a Reply