ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
আশ্রয়
পিনাক দাস

রৌদ্রময় দিনে আকাশে কালো মেঘ। ছায়া নামছে চারিদিকে। ফিঙে পাখিরা উড়ে এসে বসেছে পাতা শূন্য গাছটায়। তাদের মধ্যে একটি ফিঙে উড়ে গেল এ গাছ ছেড়ে আরেকটি গাছে।গাছ থেকে উড়তে আর বসতে কিনা তার পাখা ঝাপটানি!  কিন্তু আমাদের ঝাপটানি শেষ হবে কবে?

একটি আশ্রয়ে থেকে ও অনেক গুলো আশ্রয় এর প্রয়োজন হয়। সেদিন বৈশাখী ঝড়টি যেন বিশাল দৈত্য রূপে আসছে। এই বুজি শুকনো ডালটা ভেঙে পড়ে! বুজি তচনচ করে যাবে ওপারের বন-জঙ্গল। শনশন বাতাস দেখে পাখিরা বাসায় ফিরে যাচ্ছে। বাসায় হয়তো বাচ্চারা অপেক্ষা করছে। প্রজাপতি, ফড়িংয়েরা ভয়ে লতার ঝোপের ভেতর আশ্রয় নিয়েছে। তারপর চারদিক ধেয়ে নেমে পড়লো বৃষ্টি, সেই সাথে প্রবল বাতাস। আমরাতো সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে পূর্বেই নিরাপদ আশ্রয়ে বসে আছি। পাখিরা বাসায় এসেছে ঠিকি, কিন্তু ভয় কাটেনি। মাঝে মাঝে হয়তো শুনা যাচ্ছে পাশের গাছের উঁচু ডালে বাস করা শালিকের বাসা ভেঙে পড়ল। বাসায় ছিলো ডিম। আর হয়তো কয়েকটি দিন, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। মনে হয় কড়ই গাছে বাস করা কোকিলের বাসা থেকে নবজাতক কোকিল বাতাসের সাথে উড়ে গিয়ে পড়েছে কোনো এক স্থানে। হয়তো সময়ের পূর্বে আসতে না পেরে অন্য কোন ডালে কোকিল মা তার ছানার জন্য উদ্ধিগ্ন হয়ে বসে আছে। কে দেবে তাকে শান্তনা?

নবজাতক কোকিল ছানা কিছুই বুঝতে পারছে না, যে সে এখন কোথায়?  কি করবে? সে মাকে খুঁজছে।

বিদ্যুৎ চমকানো দেখে বনের ধারে চেয়ে থাকা শিয়াল তার গর্তে ঢুকতে চাইছে। কিন্তু ঢুকতে পারে নি। কারণ, বনের আর পথের নেমে আসা পানিতে তার গর্ত ভরে গেছে। এখন কে দেবে তাকে আশ্রয়?

ওপারে উড়ে যাওয়া ফিঙে পাখিটি হয়তো ঝড়ের কবলে পড়ছে।  বাতাসের সাথে সংগ্রাম করছে,  কিন্তু পারে নি। কিভাবেই বা পারবে? পাতা শূন্য গাছে বাতাস একটু বেশি লাগবে। তবে সেই আশ্রয়তে কি হলো তার?

চোখের আড়ালে থাকা পিঁপড়েদের কিনা অবস্থা! মাঠে-ঘাঠে যেখানে তাদের বাসা সবি ধুয়ে মাটিতে মিশে গেছে। কতো পিঁপড়া ভেসে গেছে পানির স্রোতে। মৃত্যু না হওয়া পিঁপড়ার দল হয়তো খুশিতে আবার ছুটচ্ছে। কিন্তু তাদের কি হলো যারা এমন আশ্রয়ে ছিলো?

জড় তামার সুবাদে রাস্তায় পুনরায় গাড়ি চলাচল শুরু হলো। এমতো অবস্থায় বনের ধারে লতাপাতার ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকা সোনা ব্যাঙ হয়তো মাঠের জমা পানিতে যেতে চাইছিলো। কিন্তু কালো রাস্তায় কোন এক সর্বনাশী তার প্রাণ নিয়ে নিলো। তাহলে কেমন আশ্রয় পেলো সে?

ঝড়ের তান্ডব দেখে ভয় পাওয়া বন বিড়ালটি পূর্বেই সুযোগ বুঝে তার বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেই ভয় মনে হয় মৃত্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা শুকনো গাছটি ভেঙে পড়লো এই বাসার উপর। এমন আরও কতো কি!

যাইহোক, অনেকক্ষণ হলো ঝড় থেমে গেছে। আমরা সেই আশ্রয়ের খুঁজে।  অনেক গুলো আশ্রয় না হলে বোধ হয় জীবন পরিপূর্ণ হয় না। গণমাধ্যমে খবর চলছে, ঝড়ের বিস্তারিত বলা হচ্ছে,  যে মানুষের কি কি ক্ষতি হলো?  বনের পাশে কয়েকটি বাড়ি থেকে বাচ্চাদের  হৈচৈ আসছে। কি খুশি! ঝড় থেমে গেছে। হটাৎ কেন যেন সবাই নদীর দিকে দৌড়াতে লাগলো। ও হ্যা, নদীর পাড়ে থাকা দুটি ঘর নাকি ভেঙে নদীতে পড়ে গিয়েছে। তবে তারা কি পেয়েছিল আশ্রয়?

ওদিকে কোকিল মা তার বাচ্চাকে না পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে। অনেকের বাসা নষ্ট হয়েছে,  কারো বা মৃত্যু ও হয়েছে। আরও কতো কি!

সেসব কে-ই দেখে আর শুনে। সবশেষে শান্ত হয়ে গেল পরিবেশ, নেমে এলো রাত্রি। পাখিরা আবার বাসা বুনতে লাগলো। ঝড় হবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। সর্বদা বুঝি প্রস্তুত থাকতে হয়। ঝিঁঝিঁপোকারা আপন মনে গান গাইতে লাগলো। আকাশে তারা ওটার বালাই নেই। সূর্যদয় কখন হবে, এমন অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে হুতোম প্যাঁচাটি। বাসা হারা শিয়াল গুলো রাঁ তুলছে ক্ষণে ক্ষণে। এমনটা যেন কেউ চায় না। সবাই চায় ভালো আশ্রয়। তবে নিরাশ হওয়ার কিছুই নেই, কেননা কোন না কোন ভাবে সবাই আশ্রয় পেয়ে যাবে।

 

3 responses to “আশ্রয়”

  1. … [Trackback]

    […] Here you will find 38512 more Information to that Topic: doinikdak.com/news/34828 […]

  2. … [Trackback]

    […] Find More Info here to that Topic: doinikdak.com/news/34828 […]

  3. ai nude says:

    … [Trackback]

    […] Find More Info here on that Topic: doinikdak.com/news/34828 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x