ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০২:৪১ অপরাহ্ন
নানা সংকটে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন নিজেই রোগী
এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই

নানা সংকটে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মস্তাননগর হাসপাতাল এখন নিজেই রোগী। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর ৬৯ জন কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে। এতে করে চিকিৎসকরা যেমন চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যায় পড়ছেন তেমনি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বর্তমানে হাসপাতালে যে সকল চিকিৎসক রয়েছেন তম্মধ্যে ৭ জন করোনাকালীন সময়ে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ২ জন চিকিৎসক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি।

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদ শূন্য থাকার পাশাপাশি বর্তমানে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ হাসপাতাল প্রাঙ্গনে গভীর নলকূপ স্থাপন করলেও বর্তমানে সেটাতে তেমন পানি উঠছে না। ২০১২ সালে নষ্ট হওয়ার পর হাসপাতালে নতুন এক্সরে মেশিন কেনা হয়নি। পুরাতনটা কয়েকবার মেরামত করা হলেও এখন তা আর ব্যবহার হচ্ছে না। অবশ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দাবী করেছেন এক্সরে মেশিন পুরাতন হলেও তা রাখার কক্ষটি পুরোটাই অনুপযোগী। যে কারণে বারবার ঠিক করার পরও এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে ভবন সংকটও দেখা দিয়েছে। রোগী থাকার জন্য ভবনের পাশাপাশি চিকিৎসক ও কর্মচারীদের জন্য উপযুক্ত আবাসন ব্যবস্থা নেই। পুরাতন আবাসিক ভবনের ছাদের পলেস্তার খসে পড়ছে; যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৬ জন মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসকের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ জুনিয়র কন্সালটেন্ট (সার্জারী), জুনিয়র কন্সালটেন্ট (গাইনী), জুনিয়র কন্সালটেন্ট (অর্থোপেডিক্স), জুনিয়র কন্সালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কন্সালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কন্সালটেন্ট (ই.এন.টি), সহকারী সার্জন (এ্যানেসথেসিষ্ট), ১ জন সহকারী সার্জন, ৬ জন মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারি সার্জনের পদও শূন্য রয়েছে। নিয়োগকৃত ডাক্তারদের মধ্যে বর্তমানে ৭ জন মেডিকেল অফিসার করোনাকালীন সময়ে অন্যত্র অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতেছেন। এছাড়া দুই জন সহকারি সার্জন মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীর মধ্যে ক্যাশিয়ার পদে ১ জন, ভান্ডাররক্ষক পদে ১ জন, চিকিৎসা সহকারী পদে ১০ জন, ফার্মাসিষ্ট পদে ৭ জন, কম্পাউন্ডার পদে ১ জন, সহকারী নার্স পদে ১ জন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান পদে ৩ জন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ১ জন, স্বাস্থ্য সহকারী পদে ২৬ জনের পদ শূন্য রয়েছে। ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মধ্যে ল্যাব এটেনডেন্ট পদে ১ জন, এম.এল.এস.এস পদে ৯ জন, ওয়ার্ডবয় পদে ২ জন, আয়া পদে ১ জন, কুক পদে ১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে ২ জন, ঝাড়–দার পদে ১ জনের পদ শূন্য রয়েছে।

উপজেলার কাটাছরা ইউনিয়ন থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা খালেদা বেগম বলেন, কয়েকদিন যাবৎ আমার ছেলের শরীরে এলার্জিজনিত চুলকানি দেখা দেয়। যা তার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে গেলে দেখি চর্ম রোগের কোন ডাক্তার নেই। পরে প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে ছেলেকে ডাক্তার দেখাই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে প্রধান সমস্যা হলো খাবার পানি সংকট। বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ বসানো হলেও এখন সেটাতে পানি উঠতেছেনা। হাসপাতালে ভবন সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসক ও কর্মচারীরা থাকার জন্য উপযুক্ত আবাসন নেই। হাসপাতালের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মচারী না থাকায় চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা দিতে অনেক হিমশিম খাচ্ছেন। অফিস পরিষ্কার করার জন্য আয়া, সুইপার, নিরাপত্তা প্রহরী নেই। চিকিৎসকরা নিরাপত্তা হুমকীতে রয়েছেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদের চিকিৎসকও সংকট রয়েছে। এসব বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে জানানো হয়েছে।

x