করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঠাকুরগাঁও জেলায় ১৭ জুন বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। ১৬ জুন বুধবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ফেইসবুকে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপের একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম ও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৬ জুন বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক জানান। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুরো ঠাকুরগাঁও জেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট-বিপণিবিতান খোলা থাকবে। হোটেল রেস্তোরাঁসমূহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু পার্সেল খাবার ও অনলাইনে বিক্রয় করতে পারবে। কোনোভাবেই কেউ হোটেল-রেস্তোঁরায় বসে খেতে পারবে না। সকল প্রকার গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। চালকসহ যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে।
বিনোদন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, কোচিং সেন্টার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চাওয়ালা, ফেরিওয়ালাসহ বিভিন্ন প্রকার ভাসমান ব্যবসায়ীর (হকার) দোকানের বিক্রয় কার্যক্রম সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। পশুরহাটসহ সকল সাপ্তাহিক হাট আগামী সাত দিন বন্ধ থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বড়মাঠে) গণজমায়েত বা কোনো ধরনের জটলা করা যাবে না। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে; তবে প্রয়োজনে আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করতে বলা হয়। সীমান্ত এলাকায় অবৈধভাবে মানুষের চলাচল বিজিবি কঠোরভাবে নজরদারি করবে এবং স্থানীয় ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এক্ষেত্রে বিজিবিকে সহযোগিতা করবে।
কাঁচা বাজার ও মাছ বাজারে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে। সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি জরুরি সেবা এর আওতাবহির্ভূত থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকার কর্তৃক ইতোপূর্বে জারি করা অন্যান্য বিধিনিষেধ যথারীতি বলবৎ থাকবে এবং আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার সাংবাদিক মজিবর রহমান শেখ কে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মিলিয়ে এক দিনে সর্বোচ্চ।
তিনি জানান, নতুন শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলায় ৩৫ জন, বালিয়াডাঙ্গীতে ১১, রানীশংকৈলে ৭, পীরগঞ্জ ও হরিপুরে ৪ জন করে আছেন। আগের ২৪ ঘণ্টায় ৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৩ জনের করোনা পজিটিভ আসে। শনাক্তের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৭৪। তিনি বলেন, জেলায় শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৭৮টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ১১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের গড় হার ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫১ জন। ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন বলেন, চলতি মাসে ঠাকুরগাঁওয়ে হঠাৎ করেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু ও শনাক্ত উভয় বেড়ে যায়। এ মাসের ১৫ দিনে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৪২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, আর ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনা শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। মাহফুজার রহমান আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের নতুন রেকর্ড হওয়ায় জরুরি আলোচনা সভা আহ্বান করে ঠাকুরগাঁও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। সভায় জেলায় সাধারণ মানুষের চলাচলে ৭ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ জারির সিদ্ধান্ত হয়।
“এই ৭ দিন পর্যবেক্ষণ শেষে যদি করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়, তাহলে লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম, সাংবাদিক মজিবর রহমান শেখ কে বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে ঠাকুরগাঁও জেলায় করোনা পরিস্থিতি অবনিত হয়েছে। মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করতে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে চলমান বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
… [Trackback]
[…] Info on that Topic: doinikdak.com/news/26492 […]
… [Trackback]
[…] Find More on to that Topic: doinikdak.com/news/26492 […]
… [Trackback]
[…] Read More here to that Topic: doinikdak.com/news/26492 […]
… [Trackback]
[…] Info on that Topic: doinikdak.com/news/26492 […]