আব্দুল্লাহ- আল- মুজাহিদ: আজ যদি মহান নাট্যকর শেক্সপিয়ার বেঁচে থাকতেন; তাহলে, হয়ত তিনি তাঁর অমর সৃষ্টি ‘দ্যা ম্যারসেন্ট অভ ভেনিসের’ তৃতীয় অংকের প্রথম দৃশ্যটি পালটে দিতেন। সেখানে তিনি হয়ত Hath not a jew eyes, hath not a jew hands,organs, dementions,senses, affection, passions? এই সংলাপের jew এর বদলে philitine ব্যবহার করতেন। এক সময় বিশ্বব্যাপী অত্যাচারের যাঁতাকাল শিকার ইহুদিরা আজ ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষদের উপর যা অত্যাচার করছে তার জন্য তাদের কোনো-ই অপরাধ নেই। আজ যদি এ জন্য জার্মান তথা ইউরোপিয়ানদের কিছু মূল্য দিতে হত; তাহলে যুক্তির খাতিরে কিছুটা মেনে নেয়া হয়ত সম্ভব ছিল। আসলে এ-ই পৃথিবীতে সবচেয়ে লাঞ্চিত জাতি ছিল ইহুদিরা। তারা হাজার বছর ধরে যন্ত্রণা ভোগ করে আসছিল। ইউরোপের কোথাও তাদের জন্য এতটুকু জায়গা ছিল না। হিটলার তাদেরকে যেভাবে হত্যা করছিল এবং গ্যাস চ্যাম্বারে পুড়ে মেরেছিল তা মানব ইতিহাসের জগণ্য ইতিহাস। ‘সিন্ডার লিস্ট’ নামের সিনেমাটি দেখলে গা শিহরিয়া উঠে। একবার অক্সর্ফোড ইউনিয়নের বিতর্কে এক ইহুদি বিশেষজ্ঞ বলেছিল, সেই ইহুদিরা যদি সেই সময় ইউরোপে না থেকে কোনো মুসলিম রাষ্ট্র তথা মধ্যপ্রাচ্যে থাকত তারা তখন সবাই বেঁচে যেত। ইতিহাস বলে, মুসলিম রাষ্ট্রে বহাল তবিয়তে সম্মানের সাথে ইহুদিরা অতীতে বাস করেছেন। ১৯২৪ সালের বেলফোর ঘোষণার আগেও মুসলিম ও ইহুদিরা পরস্পরের বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত খেতেন। কিন্তু প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশদের চালে এবং তুরস্কের পরাজয়ে সেই অঞ্চলের স্তিতি অবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। এ-র সঙ্গে ইহুদিদের প্রতিশ্রুত ভূমির স্বপ্ন এবং সেই সাথে নিউকনদের যিশু আশার প্রত্যাশায় ইহুদি তোষণ আমেরিকান রাজনৈতিকদের ম্যানিয়ায় পরিণিত হয়েছে এবং সাথে আরো জটিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ তো আছেই। ইহুদি লবি এবং এদের স্বজাত্যবোধ এত বেশি শক্তিশালী যে সবকিছুকে তারা কিনে নিতে পারে।লেখক শংকর তাঁর ‘এপার বাংলা ওপার বাংলার’ লিখেছেন একজন ইহুদি লেখকের বই ভাল না হলেও তারা কিনে লেখককে ধন্য করে। স্টিফেন এম ওয়ালেট এবং জন যে মিয়ার্সসেইমার তাঁর’ ইসরাইল লবি এন্ড ইউএস ফরেন পলিসিতে’ চমৎকারভাবে এ-ই প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।মানুষ যে তার অতীত খুব দ্রুত ভুলে যেতে পারে তার বড় উদাহরণ এ-ই ইহুদি জাতি। তবে সবাই নয়। এমন অনেক ইহুদি আছেন তারা সেই ১৯২৪ সাল থেকেই খোদ ইহুদিদের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। নয়ম চমস্কির মতো ইহুদিরা এ-ই চরমপন্থার বিরোধী এবং একে উপনিবেশবাদ বলে অভিহিত করছেন। এটা আশার কথা, এবার প্যালেস্টাইনের পক্ষে বিশাল জন সমর্থন ছিল।
কিন্তু, খোদ ইউরোপের অনেক দেশে ইহুদিদের সমালোচনা করলে শাস্তি পেতে হয়। সেখানে পাশ করা আছে ‘ইহুদি বিদ্বেষ বিরোধী’ আইন যা থেকে বৃটেনের করবিন ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলহান ওমরের ভারসাম্যপূর্ণ সমালোচনাও এ-ই ধারা থেকে রেহাই পায় নি। এইভাবে গণতন্ত্রের ধব্জাধারীরা বুদ্ধিবৃত্তিক সমালোচনাকে রুদ্ধকরে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের সবক সমান তালে দিয়ে যাচ্ছেন। অরিন্টালিজমের লেখন অ্যাডওয়ার্ডস সাইদের কথা আসা যাক। তিনি বুদ্ধিজীবিদের সম্পর্কে বলেছিলেনঃ
“যারা সহজে সরকার ও কোনো সংস্থার সাথে সহঅবস্থান না করে পিছনে পরে থাকা সমস্যাগুলোকে সামনে তুলে ধরে তারাই বুদ্ধিজীবী”
কিন্তু এবার আমরা ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে দেখলাম সব মিডিয়াগুলো যুদ্ধের প্রাইম সময়ে যুদ্ধের সংবাদে প্যালেস্টাইন শিশু ও নারী হত্যা ও আক্রমণের দৃশ্য দেখাছে না। বিবিসি তো সেই সময়ে ভ্রমণ বিষয়ে ডুকুমেন্টারি দেখাচ্ছিল। ফলে, সেই পুরাতন ফিলিস্তিনিদের সমস্যা এবং যুদ্ধের ফলে শিশু, নারী হত্যা তাদের কবারেজ থেকে হারিয়ে গেছে। এ আসলে মানবতার আর এক অবমাননা, পক্ষপাতিত্বের আড়ালে মানবতাকে ধব্বংশ করার পায়তারা। এমনকি APPএ-র একজন সাংবাদিক ইমিলি উয়িল্ডারকে সত্য কথা বলার জন্য চাকুরি হারাতে হয়েছে। ফেসবুক ও টুইটারও নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারে নি।
আসলে, কিছু কিছু মানুষ আছে এরা সব সময় শুধু ধর্মান্ধ না চিন্তান্ধ বটে।এরা সবাই দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের বিরোধী। এরা হিংসার শক্তিতে কথা বলে, ভালোবাসা এদের কাছে পরাজিত। এরা আসলে কেউ নয় শক্তির পূজারী ইসরাইলের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে পদদলিত করতে চায়।এভাবে দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানকে গলাটিপে হত্যাকরে ইসরাইল খুব বেশিদিন বাচঁতে পারবে না; অন্তত ইতিহাস তাই বলে। আব্রাহাম লিংকনের কথায় বলা যায়, ” তুমি সব সময় সব মানুষকে ঠগাতে পারবে না”।এবার হামাসের কৌশল ও ইসরাইলি নাগরিকদের গর্তে লুকিয়ে থাকা এ-ই কথা মনে করিয়ে দেয়, নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়? আমি আশাবাদী এবং যুদ্ধবিরোধী মানুষ। একদিন হয়ত পাশাপাশি দুইটা রাষ্ট্র গঠিত হবে। আমরা তখন হয়ত প্যালেস্টাইনে চা খেলে ইসরাইলে গিয়ে কফি খাবো। বিশ্ব আর বেশি যুদ্ধ দেখতে চায় না এবং আশা করতেই পারি পাশাপাশি দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র।
লেখক:
আব্দুল্লাহ- আল- মুজাহিদ
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজ, নাটোর
Leave a Reply