ঢাকা,রবিবার ০৪ জুলাই ২০২১, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
বিশ্বে টিকা পেয়েছেন ১৩০ কোটি মানুষ, আফ্রিকায় প্রয়োগ ১%
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

পরিসংখ্যান বলছে, গোটা বিশ্বে এ পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন মোট ১৩০ কোটি মানুষ। কিন্তু এর মধ্যে আফ্রিকার বাসিন্দা মাত্র ১ শতাংশ। স্বাস্থ্যকর্মীদের বক্তব্য, টিকাকরণের সংখ্যা আরওই কমেছে গত কয়েক সপ্তাহে। যা থেকে স্পষ্ট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) টিকার সমবণ্টনের জন্য দাবি তুললেও বাস্তবে তা হচ্ছে না।

এই সমস্যা শুধু আফ্রিকার নয়। লাতিন আমেরিকা, এশিয়া, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেও একই ছবি। শুধু প্রতিষেধকের আকাল নয়, সমস্যা আরও গভীরে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই, টিকা পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবহণ ব্যবস্থা নেই, মানুষের মধ্যে টিকা সংক্রান্ত সচেতনতা নেই।

আফ্রিকায় এ পর্যন্ত ২ কোটি ৮০ লক্ষ ডোজ় এসে পৌঁছে। মহাদেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম। ধনী দেশগুলোতে অর্ধেকের বেশি বা তার কাছাকাছি টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। টিকাকরণে শীর্ষে রয়েছে ইজ়রায়েল। আমেরিকাতেও ৫১ শতাংশের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। এখন ১২ বছরের ঊর্ধ্বে হলেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। ব্রিটেনেও টিকাকরণের কাজ এগিয়ে গিয়েছে।

হু-র বক্তব্য, কোভ্যাক্স প্রকল্পের উপরে নির্ভরশীল আফ্রিকার অন্তত ৪০টি দেশ। এই প্রকল্পে তুলনায় স্বস্তার টিকা পাঠানো হচ্ছে গরিব দেশগুলোতে। মূলত এই সব দেশে প্রতিষেধকের জোগান দিচ্ছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। কিন্তু নিজের দেশের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে ওই সংস্থা।

হু সম্প্রতি জানিয়েছে, আগামী ছ’সপ্তাহে মধ্যে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার অন্তত ২ কোটি ডোজ় প্রয়োজন আফ্রিকার। এটা প্রয়োজন দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য। যাঁদের প্রথম ডোজ়টি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের দ্বিতীয়টি নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রতিষেধক নেই। এ বাদ দিয়েও প্রতিষেধকের ২০ কোটি ডোজ় চাই মহাদেশের শুধুমাত্র ১০ শতাংশ জনসংখ্যার টিকাকরণ সম্পূর্ণ করতে। হু-র আঞ্চলিক কর্তা (আফ্রিকা) মাতশিদিসো মোয়েতি বলেন, ‘‘আফ্রিকায় সংক্রমণ বাড়ছে। তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে কি না এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু সময় চলে যাচ্ছে। তাই যে সব দেশ প্রবীণদের টিকাকরণ সেরে ফেলেছে, তাদের অনুরোধ, গরিব দেশগুলোকে নিজেদের ভাগ থেকে টিকা দান করুন।’’

আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সামনের শীতে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে বিপদবার্তা রয়েছে এ দেশেও। তাদের লক্ষ্য ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ৬৭ শতাংশ টিকাকরণ সম্পূর্ণ করা। ফাইজ়ারের টিকা দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩ কোটি ডোজ় কেনার চুক্তি হয়েছে। তার মধ্যে তারা হাতে পেয়েছে মাত্র ১৩ লক্ষ ডোজ়। জুনের শেষে ৪৫ লক্ষ ডোজ় পাওয়ার কথা। জনসন অ্যান্ড জনসন-এর প্রতিষেধকও কেনার চুক্তি করেছে তারা। কিন্তু কোনও ডোজ় এ পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অবস্থা একই। এই দুই ভূখণ্ড মিলিয়ে বিশ্বের মাত্র ৮ শতাংশ জনসংখ্যার বাস। কিন্তু বিশ্বের ৩০ শতাংশ মৃত্যু ঘটেছে এই অঞ্চলে।

ও দিকে নেপালের মতো ছোট্ট পাহাড়িন দেশে সরকারি উদ্যোগেই গাফিলতি দেখছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি। পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাওয়িতে আবার টিকা ব্যবহারযোগ্য থাকার সময়ের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রতিষেধক। কোভ্যাক্স প্রকল্পে তারা টিকা পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাস্থ্য পরিকাঠামোই নেই বললেই চলে। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষিত কর্মী নেই, টিকা এক জায়গা থেকে অন্যত্র পাঠানোর ব্যবস্থা অবধি নেই। সুত্র আনন্দবাজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *