রিয়াজ মাহমুদ, পটুয়াখালী থেকে: প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় আবহাওয়া অধিদপ্তর কতৃক যে পূর্বাভাস দেওয়া হয় তাবোঝেনা উপকূলের অনেক মানুষ। এছাড়া পাকা রাস্তার অভাব জরাজীর্ণ সাইক্লোন সেল্টারের কারণে মানুষ ঘরে অবস্থানকরে। এতে দূর্যোগের সময় নিজ বসত ঘরে বা কর্ম এলাকায় অবস্থান করে ফলে ঘূর্ণিঝড় এলে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি ওসম্পদ বিনষ্ট হয়।
রাঙ্গাবালী উপজেলার দক্ষিণ চরমোন্তাজের স্লুইসগেট এলাকার মান্তা সম্প্রদায়ের বাসিন্দা মো.
আক্কাস আলী বলেন, আমাদের জন্ম-মৃত্যু সব এই নৌকায়। মাছ ধরে আমাদের জীবন চলে। সিগনাল কি তাতো জানিনা।
তিনিআরও বলেন, নদীর জোয়ার ভাটা দেখে আমরা কিনারায় ফিরি। আমাগো নৌকায় কোন রেডিও, টিভি নাই। গাঙ্গে (নদী) থেকেআইলে মানুষ কয় তাই শুনি। বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ এলাকার বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, আমরা চরের মানুষ। আমাগো কারেন্ট নাই। টিভি, রেডিও কিছু নাই। কি দিয়া হুনমু সিগনাল? মাঝে মধ্যে প্রশাসন আয় তহন বুঝি আবহাওয়া বেশি খারাপ।
নদীতে পোয়া (ছেলে), হে (স্বামী) মাছ ধরতে যায়। আল্লাহ চাইলে বাঁচি আয়। আর নয়তো শেষ। মির্জাগঞ্জএলাকার বাসিন্দামোশাররফ বলেন, এখনও মির্জাগঞ্জের মানুষ অনেক অসচেতন। ঘূর্ণিঝড়ের সিগনাল বারলে ও প্রশাসন থেকে মাইকিংকরলেও তারা নিজ বসত ঘর থেকে সাইক্লোন সেল্টারেে অবস্থান করে না। গলাচিপা চরকাজল ইউনিয়নের পূর্ব দক্ষিণচরআগস্তি এলাকার বাসিন্দা আফজাল ফরাজি বলেন, আমাগো দূরভোগের শেষ নাই। সিগনাল পড়লেও সাইক্লোন সেল্টারেযেতে পারি না।
দির্ঘদিন যাবৎ রাস্তা খারাপ। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ঘর থেকে বের হলেও মরমু আর ঘরে থাকলেও মরমু।
গলাচিপা চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরবিশ্বাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল বলেন, চরবিশ্বাসইউনিয়নের চরবাংলার সাইক্লোন শেল্টারটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছরই ঝড়ের সময় এভবনটিতে দুর্গত মানুষকে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এদিকে চরকাজল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রুবেল বলেন,
ছোটশিবা সালেহিয়য়া দাখিল মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের সাথে দেড়’শ ফিট রাস্তা পাকা। কিন্তু বাজার থেকে ওইসাইক্লোন শেল্টার পর্যন্ত সংযোগ দিতে প্রায় ছয় হাজার ফুট রাস্তার কাচা রয়েছে। ফলে এখানের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এ ছাড়াও আমাদের পাশের ইউনিয়নের পূর্ব দক্ষিণ চরআগস্তি, দক্ষিণ চরআগস্তি ও দক্ষিণ চরবিশ্বাস
(চৌকিদার বাড়ি) এলাকার সাইক্লোন শেল্টারের সাথে মূল সড়কে রাস্তা এখনো পাকা করা হয়নি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সৈয়দ কিশোর বলেন, সচেতনাতার অভাব, অশিক্ষিত ও সল্প শিক্ষিত এলাকার মানুষের কাছে নিজের জীবনের চেয়ে গৃহপালিত পশুর জীবন অনেক মুল্যবান মনে করেন। ফলে ঘুর্নিঝড় সময় মাইকিং করেও তারা বাড়ি ছেড়ে পরিবারের সকল সদস্য আশ্রয়কেন্দ্রে যাননা।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মাসুদ রানা ঢাকাপোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় ৫-৬-৭ বিপদ সংকেত ৮-৯-১০ মহা বিপদ সংকেত এ সংকেত গুলোর সময় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন পোর্ট বাসমুদ্র বা নদীর তীরে পতাকা উত্তলন করা হয়। নদী বন্দর গুলোতে নদী বন্দর কতৃপক্ষ বিভিন্ন সাইন ব্যবহার করেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজ পূর্বাভাস দেওয়া।
সচেতন করার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। সোমবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের জরুরী প্রস্তুতি সভায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় চর ও দ্বীপ সমূহের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিপদ সংকেত দেখানোর জন্য সাংকেতিক পতাকা টাঙানো ব্যসস্থাকরা হয়েছে। সংকেত বাড়ার সাথে সাথে মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আনতে প্রশাসন ও সেচ্ছাসেবকরা কাজ করবে।