ঢাকা, রবিবার ১৯ মে ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন
দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে তালের শাসঁ
Reporter Name

আব্দুল মুমিন, রূপগঞ্জঃ তালের শাসঁ পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি খাবার। তালের শাসেঁ রয়েছে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান । এর বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ার ফলে শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আমাদের দেশে তাল সাধারণ ভাদ্র মাসে পেকে থাকে। পাকা তাল দিয়ে পিঠা পায়েস খাওয়ার প্রচলন অনেক আগে থেকেই। এছাড়াও তালের নরম শাসঁ খেতে কমবেশি সবাই পছন্দ করে। জৈষ্ঠ্য মাসে তালের শাসঁ খাওয়ার উপযোগী হয়। জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতেই গাছ থেকে তাল পেড়ে বাজারে বিক্রির ধুম পড়ে যায়। ক্রেতারা তালের শাসঁ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তালের শাসঁ কিনতে। শুরুতে দাম একটু চড়া থাকলেও ধীরে ধীরে কমে আসে। শুরু দিকে স্বল্প আয়েক মানুষজন শাসঁ না কিনলেও দাম কমার পর সব শ্রেণির মানুষ তালের শাসেঁর স্বাদ নিয়ে থাকেন।

এক মাসের জন্য এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শাসঁ বিক্রির থাকেন।  উপজেলায় তাল গাছ থাকলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে অধিকাংশ তাল আসে জেলার সোনারগাও ও আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে। এই দুই উপজেলার মানুষই তাল সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বিক্রি করেন বাজারগুলোতে।  বিক্রিও হয় বেশ ভাল। ছোট বড় সবারই তালের শাসেঁর প্রতি দুর্বল। এ বিষয়ে কথা হয়  উপজেলার নগরপাড়া গ্রামের তার বিক্রেতা সলিম মিয়ার সাথে। তিনি জানান, বছরের অন্য সময়গুলোতে অন্যান্য পেশার সাথে জড়িত থাকলেও এক মাসের জন্য তালের শাসঁ বিক্রি করে থাকি। এক মাসে আয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা হয় বলে জানান তিনি। তালাশকুট এলাকার তাল ব্যবসায়ী সামছুল হক জানান, রূপগঞ্জে তালের শাসেঁর চাহিদা অনেক। দামও ভাল পাওয়া যায় আর বিক্রিও সন্তোষজনক তাই গত বিশ বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনে তালের শাসঁ বিক্রি করে থাকি।

তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তাই সবার হাতে পোঁছে যায় কঁচি তালের শাস। বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাস কেটে সারতে পারছেনা, ক্রেতারা দড়িয়ে রয়েছে শাস নিতে। জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার গৃহস্তদের গাছের তালের শাস যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ সকল বয়সী লোকের মাঝে এই তালের শাসের কদর দিন দিন বেড়েই চলছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের ডা. ফয়সাল আহমেদ বলেন, প্রচ- গরমে তালের কচি শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি। তালে আছে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৮ গ্রাম খাদ্যপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম আঁশ। গরম শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে এর মধ্যে আছে ৭৭.৫ ভাগ জলীয় অংশ। ০.৫ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক।অবাক করার মতো খাদ্যশক্তি রয়েছে তালের শাঁসে। প্রায় ৮৭ কিলোক্যালোরি। ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে

উপজেলার জাঙ্গীর, বাগবেড়, টিনর, ইছাপুরা, রাতালদিয়া বরুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাল গাছ রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগে এর কোন পরিসংখ্যান নেই। তালের শাস অতি সু স্বাদু হওয়ায় সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে তালের শাস একটি জনপ্রিয় ফল। এখন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এবং অলিতে গলিতে তালের শাস বিক্রি করে অনেক হত দরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণবাঘ এলাকার আলম মিয়া জানান, তিনি প্রতিবছরই এ দিনে তালের শাস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেরে এনে শাস বিক্রি করেন। তবে গাছ ওঠে, বাঁধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্ট কর। বৈশাখ মাস থেকে জৈষ্ঠের অর্ধেক পর্যন্ত এ দেড় মাস চলবে তালের শাস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ শাস বিক্রি করা যায়। একটি শাস আকার ভেদে ১০ থেকে ১৫টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে তার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। তালের শাস বিক্রি করে চার জনের সংসার ভালই চলছে।
তালের শাসের ক্রেতা সামসু উদ্দিন জানান, তালের শাস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাস ক্ষেতে ভালই লাগে। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে তাল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে, কবির সে কবিতার মতো সারি সারি তাল গাছ রাস্তার দুধারে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আবাসন গড়ায় রূপগঞ্জের গ্রাম অঞ্চলের তাল গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। বরুণা এলাকার কৃষক রমজান মিয়া জানান, এক সময় মানুষ সখ করে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তালের বীচ বোপন করতো। গাছ থেকে তাল পারা খুব কষ্টকর কাজ হওয়ায় মাঝে তালগাছ বোপন কমে গিয়েছিল। এলাকা ভেদে একটি তালে পাইকারি দাম তিন থেকে চার টাকা। খুরচা দশ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফলে তালের চাহিদা বেড়েছে। আনেকে আবার তাল গাছ বোপনের দিকে ঝুকছে।

রূপগঞ্জে পাইকারী তাল শাস বিক্রেতা সামছুল হক জানান, আমরা একটি গাছের তাল ৩০০ থেকে ৪০০টাকায় কিনে থাকি। ঢাকায় নিয়ে এক হাজার তাল শাস ২ থেকে ৩হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকি। তিনি জানান এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত তাল শাস বিক্রি করা যাবে। তালের শাসের পুষ্টি গুনাগুণ সম্পর্কে ডা. মেহেদী হাসান বলেন, তালের শাস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। গরমের দিনে তালের শাসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দুর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, এ, বিকমপ্লেক্সসহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাস রক্তশূন্যতা দুর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।

One response to “দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে তালের শাসঁ”

  1. agen slot says:

    … [Trackback]

    […] Here you can find 7074 additional Info to that Topic: doinikdak.com/news/16331 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x