আব্দুল মুমিন, রূপগঞ্জ: হাওয়াই মিঠাই! শিশুদের মন ভোলানো প্রাণজুড়ানো পছন্দের অন্যতম খাবার। মুখে দিলে নিমিষেই হাওয়ার মতো মিলিয়ে যায়। এক সময় গ্রামের মেঠো পথে হাঁক ডেকে সুর করে ডাকতেন “ সুস্বাধু মিষ্টি হাওয়াই মিঠাই” ফেরিওয়ালারা আর বিক্রি করতেন শিশুদের কাছে।
শিশুরা ডাক শুনেই বাবা-মার কাছে বায়না ধরতো এ মিঠাই খাওয়ার জন্যে। তবে বড়দের খাবারের তালিকায়ও জায়গা রয়েছে বাহারি রংয়ের, হরেক আকৃতির হাওয়াই মিঠাইয়ের। কালের পরিক্রমায় এখন তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে হাওয়াই মিঠাইয়ের ফেরিওয়ালাদের সংখ্যা। কারণ বর্তমান আধুনিক যুগে প্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয়। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন মানুষের গোরদোরায় হাজারো নামি দামি খাবার। তাছাড়া হাওয়াই মিঠাইকে অস্বাস্থ্যকর ও নিন্মমানের খাদ্য হিসেবে গন্য করে তা শিশুদের খেতে দেন না অনেক অভিভাবকরা।
তাই পরবর্তী প্রজন্মকে এ পেশায় দিক্ষিত করতে চান না হাওয়াই মিঠাইওয়ালারা। বিশেষ প্রক্রিয়ায় চিনিকে তাপ দিয়ে মেশিনে হাত ঘুরিয়ে হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা হয়। সাদা ও গোলাপী এ দু ধরনের হাওয়াই মিঠাই হয়ে থাকে। গ্রামে ভেনের ওপর হাওয়াই মিঠাই তৈরির সরঞ্জাম সাজিয়ে নিয়ে হাওয়াই মিঠাই তৈরি করতে দেখা যায়। কাঁচ দিয়ে ঘেরা বক্সে ছোট ছোট গোলাকার এবং বড় আকারের হাওয়াই মিঠাই পলিথিনে মুড়িয়ে বাঁশের সাথে বেঁধে ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন সুরে ডেকে ডেকে এগুলো বিক্রি করে থাকেন। জলিল মিয়া একজন হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা। তিনি প্রায় এক যুগ ধরে হাওয়াই মিঠাই তৈরি ও বিক্রি পেশার সাথে জড়িত। এ কাজ করেই তার ৪ সদ্যেসের সংসারের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তিনি জানান, আর পরি না বাপ। এগুলো আর পোলাপানরা খায় না। আধুনিক যুগে চিপস, বার্গার, চকলেট আর জুসের দিকেই শিশুদের নজর বেশি। তাছাড়া হাওয়াই মিঠাই এখন বিলুপ্তির পথে।
তবে বংশ পরমপরায় জাত ব্যবসা ধরে রাখতে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছি। বয়সও হয়েছে এখন আর পারিনা। ছেলেপুলেকে এ পেশায় আনবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জলিল মিয়ার সোজাসাপটা জবাব, যতদিন পারবো এ ব্যবসা আমি চালিয়ে যাবো। তবে আমার সন্তানদের এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করবো না। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, এ পেশার লোকজনদের মানুষ সন্মানের চোখে দেখে না। এছাড়া এ পেশায় ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে। হাওয়াই মিঠাইওয়ালা রিপন মিয়া জানান, এক একটি হাওয়াই মিঠাই তৈরি করতে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম চিনি খরচ হয়। চিনিসহ অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ৫ টাকার মতো পড়ে। আর বিক্রি হয় প্রতিটি ১০ টাকা করে। তিনি আরো বলেন, হাওয়াই মিঠাই মূলত দু’ধরনের তৈরি করা হয়। সাদা এবং গোলাপী রংয়ের। গোলাপীটি তৈরিতে একটু বেশি খরচ হয়।
এতে গোলাপী রঙ মেশানো হয়। এক কেজি চিনি দিয়ে প্রায় ৫০/৬০ পিস হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা যায়। হাওয়াই মিঠাই গ্রামের বিভিন্ন স্কুলের গেটে, ছোট বাজার এবং বিভিন্ন মেলায় গিয়ে বিক্রি করা হয়। সম্প্রতি উপজেলার খামার এলাকায় হাওয়াই মিঠাই কেনার সময় মাহির, মাইশা, তামিম, মঞ্জু, হামিম, মুক্তা, মনিসহ কয়েক জন শিশু বলেন, হাওয়াই মিঠাই! ওহ! মজাই আলাদা। একবার খাইলে বার বার খেতে মন চায়। এটি খেতে আমাদের অনেক ভাল লাগে। রূপগঞ্জ বেকার বন্ধু কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ঝন্টু মোহাম্মদ বলেন, একটা সময় গ্রাম-গঞ্জের রাস্তায় পিতলের ঘন্টায় টুং টাং আওয়াজ হলেই শিশুরা ছুটে যেতো। পুরানো লোহা জাতীয় পদার্থ, প্লাস্টিক, পরিত্যাক্ত ব্যাটারি, ছেড়া জুতার বিনিময়ে মিলতো হ্ওায়াই মিঠাই। আর এখন কালক্রমে দেখা মিললেও লাগে নগদ টাকা। তবে বাচ্চাদের জন্যে খুবই একটা মজার খাবার এটা। মুখে দিলেই নাই।
… [Trackback]
[…] Read More on that Topic: doinikdak.com/news/15841 […]
… [Trackback]
[…] Information to that Topic: doinikdak.com/news/15841 […]
… [Trackback]
[…] Read More on that Topic: doinikdak.com/news/15841 […]
… [Trackback]
[…] Info to that Topic: doinikdak.com/news/15841 […]
… [Trackback]
[…] Read More Info here on that Topic: doinikdak.com/news/15841 […]
… [Trackback]
[…] There you will find 18851 additional Information on that Topic: doinikdak.com/news/15841 […]
… [Trackback]
[…] Information to that Topic: doinikdak.com/news/15841 […]