ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
বিপরীতমুখী মঞ্চে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের শোক দিবসের অনুষ্ঠান
নরসিংদী, প্রতিনিধি

বেলা আড়াইটায় সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সাংসদ পক্ষের মঞ্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা চলছে। সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হাজারখানেক লোক এতে অংশ নেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংসদ নজরুল ইসলাম। সদর থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য তৌফিকুর রাহমান। এ সময় মঞ্চে ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমীরুল ইসলাম ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াৎ হোসেন মোল্লা, শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক দীপক সাহা ও জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রিপন সরকার প্রমুখ।

এর আগে বেলা একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পাশের মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতেও হাজারখানেক লোক অংশ নেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। সাবেক পৌর মেয়র কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিবপুর আসনের সাংসদ জহিরুল হক ভূঁইয়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী এবং নরসিংদী পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন ওরফে বাচ্চু প্রমুখ। অনুষ্ঠানের ব্যানারে অন্য অতিথিদের পাশাপাশি স্থানীয় সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নামও ছিল।

তবে সাংসদ পক্ষের আলোচনা সভা যখন চলছিল, তখন পাশের মঞ্চে বসে তাঁদের বক্তব্য শুনছিলেন অন্য পক্ষের অতিথিরা। সে সময় ওই মঞ্চের সামনে গণভোজ চলছিল। মাত্র ২০০ গজ জায়গার মধ্যে রয়েছে দুই আয়োজক পক্ষের অর্ধশতাধিক মাইক। আগে-পরে দুটি মঞ্চ থেকেই ভেসে আসছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গান। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের এমন আয়োজনে সমালোচনা চলছে শহরজুড়ে।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্ত থেকেই মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, আবদুল মতিন ভূঁইয়া ও কামরুজ্জামানের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু গত জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে থেকে দুই পক্ষে বিভাজিত হয়ে পড়েন তাঁরা। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন নজরুল ইসলাম। অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন আবদুল মতিন ভূঁইয়া ও কামরুজ্জামান। এরপর থেকে দুই পক্ষই নিজেদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলাদা আয়োজনে বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছে।

জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব-বিভেদ দূর করার বহু চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে। পরে ব্যর্থ হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় নজরুল ইসলাম ও আবদুল মতিন ভূঁইয়াকে। কামরুজ্জামানও আর পৌর মেয়র নন। তারপরও আলাদা আয়োজনে নিজেদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে চলছে দুই পক্ষ।

পাশাপাশি দুই মঞ্চের বিষয়ে সাংসদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শোক দিবস পালনের জন্য আমরা মঞ্চ বানিয়েছি গত ৫-৬ দিন আগেই। তারা কেন গা ঘেঁষে তাদের অনুষ্ঠানের মঞ্চ বানাল, এটা তারাই বলতে পারবে। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার জন্যই এভাবে মঞ্চ নির্মাণ করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে দাওয়াত না দিয়েই তাদের অনুষ্ঠানের ব্যানারে আমার নাম দিয়ে দিয়েছে, এটাও তাদের দৈন্যর বহিঃপ্রকাশ। আপনি তো আসেন না, ভবিষ্যতে এটা বলার জন্যই তাঁরা এই চালাকি করছেন।’

এ বিষয়ে জানতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঁইয়া ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেন এই প্রতিবেদক। দুজনই মুঠোফোন না ধরায় তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সওগাতুল আলম জানান, পাশাপাশি মঞ্চ তৈরি করে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পুলিশের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। তবে পাশাপাশি মঞ্চ বানানো হলেও অনুষ্ঠান কিন্তু একই সময়ে হয়নি। বেলা ২টার আগে-পরে দুই পক্ষই নিজেদের আয়োজনে শোক দিবসের অনুষ্ঠান পালন করেছেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ সদস্য অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান করছিলেন।

x