টানা দেড় বছর করোনার মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অপরিণত বয়সের মেয়েদের বিয়ের ঘটনা ঘটছে। দারিদ্র পীড়িত এ জনপদে কন্যা সন্তানকে বোঝা হিসেবেই এখনো দেখেন পরিবারের লোকজন
বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় নারী ও শিশু নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারীর তথ্যানুযায়ী সাত মাসে এ উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের ১হাজার ৫শ ১২টি বাল্যবিয়ে সংগঠিত হয়েছে। বাল্যবিবাহের হার অনুযায়ী যথাক্রমে এক নম্বরে আছে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে ৪৭০টি, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বড়বগী ইউনিয়ন। সেখানে বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়েছে ৪৬৪ টি, তৃতীয় অবস্থান সোনাকাটা ইউনিয়নে ৩৪৪ টি এবং চতুর্থ স্থানে ছোটবগী ইউনিয়নে ২৩৪টি বাল্য বিয়ে সংগঠিত হয়েছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় জাগোনারীর ডোর টু ডোর জরিপে ৪ টি ইউনিয়নে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ফলে এ উপজেলার বাল্যবিয়ের হার বাস্তবতার আলোকে আরও অনেক বেশি বলে আশংকা করছেন অনেকেই।
নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর লোকেরা গৃহস্থালীর আয় কমে যাওয়া, ক্ষুদ্র ব্যবসায় ধসসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। এসব চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এবং বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে উচ্চ সংখ্যক বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটিয়েছে।
বাল্যবিয়ের দৃশ্য উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে হরহামেশাই ঘটছে। উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পায়রা, আন্ধার মানিক নদী এসব নদীর চরাঞ্চলে প্রাইমারী কিংবা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণ্ডি পাড় হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। প্রত্যন্ত এসব চরাঞ্চল গুলোতে ধর্মীয় চিন্তা, কুসংস্কার ছাড়াও অভাব অনটন, দারিদ্র্যতার কারণে অল্প বয়সে বিয়ে দেন অভিভাবকেরা। কন্যা শিশুদের নিরাপত্তার অভাব, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা, মেয়ের বয়স বাড়লে বাড়ে যৌতুকের টাকার পরিমাণ, কম বয়সী মেয়েদের প্রতি বরের চাহিদা বেশি, যৌতুকের পরিমাণও কম লাগে ইত্যাদির কারণে বাল্যবিবাহের প্রবনতা অনেক বেশি।
যৌতুকের টাকা কিংবা অভাবের কারণে বাল্যবিয়ের বিচ্ছেদ ঘটছে অহরহ। কাজীরা বাল্যবিয়ে পড়ার কারণে বিয়ের আসল কাগজপত্র দেয় না। ফলে আইনি সহযোগিতা থেকেও মেয়ের অভিভাবকরা বঞ্চিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওছার হোসেন বলেন, তালতলী গরীব এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল, এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিক্ষাব্যবস্থা খুব দুর্বল। সেজন্য অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই এলাকায় বাল্যবিয়ের প্রকোপ বেশি বিষয়টা সত্যিই। তারপরও আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কাজী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের নিয়ে প্রায় আমরা মিটিং করি। প্রতিরোধের জন্য আমরা সহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা আমাদেরসহায়তা করে। আর এখানে সমস্যা হচ্ছে এখানে মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে খুবই দুর্বল। এটা বাল্যবিবাহ অন্যতম কারণ। যোগাযোগ অবস্থা খারাপের কারনে আমরা অনেক সময় খবর পাইনা। আবার খবর পেয়ে আমরা যেতে যেতে বিয়েটা হয়ে যায়। তবে বাল্যবিয়ের হার গত বছরের পর আস্তে আস্তে কমে আসছে।