ফেনীতে দুবাই প্রবাসী স্বামীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী রোকেয়া আক্তার শিউলী (২৮) মঙ্গলবার রাতে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ধ্রুব জ্যোতি পাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টা থেকে ৭ ঘন্টা তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আদালতে রোকেয়া আক্তার শিউলী বলেন, ১৪ সালে তাদের বিয়ে হয়। ১৬তে জানতে পারে সোহেলের সাথে দুবাইতে এক মেয়ে সাথে সম্পর্ক আছে। সে দেশে আসলেও সেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতো। তার কাছে সে স্বীকার করতো না। এ নিয়ে প্রায় ঝগড়া হতো। মাঝে মাঝে সে শিউলির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। সংসার খরচের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিত। পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে তাদের মধ্যে মনমালিন্যে চলে আসছিল। গত বৃহস্পতিবার ঘটনার রাতে ওই মেয়েকে নিয়ে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সোহেল মৌখিকভাবে শিউলিকে তালাক দিয়ে শিউলি ও তার পরিবারের অনেকের কাছে ফোন করে। ওদের ফোনে বলে শিউলিকে সকালে দেওনা পাওনাসহ নিয়ে যেতে। এক সময় সোহেল তাকে সংসারের চাবি দিয়ে দিতে বলে। তখন শিউলি রাগে ক্ষোভে তাৎক্ষণিক হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। সোহেল তখনও মোবাইল টিপাটিপি করছিল। এক পর্যায়ে বাসায় থাকা বটি দিয়ে ঘাড় কোপ দিলে সে বসা থেকে মাটিতে পড়ে যায়। এতে স্বামী মারা যায়। তখন তিনি তার ছোট দুটি সন্তান (এক ছেলে-৭ ও এক মেয়ে-৪) নিয়ে বাবার বাড়ীর কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান।
তারা ফেনী শহরের সুফি সদর উদ্দিন সড়কের (নাজির রোড) বাড়া বাসায় থাকতেন।
প্রসঙ্গত- দুবাই প্রবাসী মো. সোহেলকে গত বৃহস্পতিবার রাতে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে তার স্ত্রী রোকেয়া আক্তার শিউলী । তারপর শিউলী দুই সন্তানকে নিয়ে পালিযে যায়।
প্রবাসী সোহেল খুনের ঘটনায় শক্রবার রাতে তার মা নিরালা বেগম বাদি হয়ে শিউলীকে আসামী করে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় তাকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাত ইউনিয়নের নারানকরা জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশে তার চাচা ছুট্টু মিয়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তখন দুই শিশু সন্তানকে উদ্ধার করা হয়। হত্যার কাজে ব্যবহৃত দা রাতে বাসার পাশের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়।
ফেনী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন জানান, গত রোববার রোকেয়া আক্তার শিউলীকে আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মঙ্গলবার শিউলী আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
পারিবারিক সুত্র জানায়, নিহত সোহেল প্রায় ১২ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে বসবাস করতেন। প্রায় ৮ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের ৭ বছর ও ৪ বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে। গত ১৬ জুলাই দুবাই প্রবাসী মো. সোহেল দেশে আসেন। এরপর থেকে সোহেলে সাথে তার স্ত্রী শিউলীর পরকিয়া সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই কথাকাটাকাটি হতো।
স্ত্রী শিউলী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের আবদুল মজিদের মেয়ে এবং সোহেল একই উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের খাটরা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।
Leave a Reply