ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন
নিজ কলেজের মাঠে অধ্যক্ষের ৫ টুকরা লাশ, মাথা আশকোনার ডোবায়
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

ঢাকার আশুলিয়ায় নিখোঁজের ১৯ দিন পর মিন্টু চন্দ্র বর্মণ (৩৬) নামের এক কলেজ অধ্যক্ষের ৫ টুকরা লাশ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। সোমবার দুপুর ১টায় নিজ প্রতিষ্ঠান আশুলিয়ার বেরন ছয়তলা রূপায়ন স্বপ্ন নিবাস আবাসনের সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠের একপাশ থেকে তার ৫ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নিহত মিন্টু চন্দ্র বর্মণ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বাড়াইপাড়া গ্রামের শর্ত বর্মণের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার বেরন ছয়তলা রূপায়ন স্বপ্ন নিবাস আবাসনের সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।

র‌্যাবের মিডিয়া উইং মঈন খান জানায়, নিহত মিন্টু চন্দ্র বর্মণ ও আব্দুল মোতালেব দুই বন্ধু মিলে দুই বছর আগে আশুলিয়ার ছয়তলা এলাকায় সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকেন মিন্টু চন্দ্র বর্মণ। কিছুদিন পর থেকেই তারা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এক পর‌্যায়ে ৭ জুলাই মিন্টু চন্দ্র বর্মণকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার বন্ধু মোতালেব, রবিউল ও তার ভাগ্নে বাদশা।

ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় কোচিং শেষে ওই স্কুলের ১০৬ নম্বর কক্ষে মিন্টুকে ডেকে নিয়ে যান মোতালেব ও বাদশা। মিন্টু ১০৬নং কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই বাদশা ও মোতালেব দরজা আটকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে মিন্টু অচেতন হয়ে পড়লে শাবল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

পরে তার মৃতদেহকে ছয় টুকরো করে মাথা রাজধানীর আশকোনার একটি ডোবায় ফেলে দেয়। বাকি পাঁচ টুকরো তারই গড়া সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আঙিনায় পুঁতে রাখে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব আরও জানায়, মিন্টু বর্মণকে হত্যার পরিকল্পনা প্রথমে ওই স্কুলের একটি কক্ষে ৭ জুলাই ফয়সালা হয়। পরে ১৩ জুলাই থেকে তাকে ওই স্কুলেই হত্যা করা হয়। এর পর থেকে মিন্টুর পরিবার তাকে খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে ২২ জুলাই তার ছোটভাই দীপক চন্দ্র বর্মণ আশুলিয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

পরে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। র‌্যাব এর পর থেকে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের মোবাইলে ট্র‌্যাকিং করে জানাতে পারে, তারা প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন করছে। এতে র‌্যাব সদস্যদের সন্দেহ হয় যে স্কুল প্রতিষ্ঠাতারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।

রোববার রাতে স্কুল প্রতিষ্ঠাতা রবিউলকে রাজধানীর আব্দুল্লাপুর থেকে আটক করা হয়। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টু বর্মণকে হত্যার কথা স্বীকার করেন রবিউল। তার দেয়া তথ্যমতে তার ভাগ্নে বাদশাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে এবং মোতালেবকে ঢাকার আশকোনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তাদের দেয়া তথ্যমতে, স্কুলের আঙিনা থেকে মিন্টুর শরীরের পাঁচটি অংশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় স্কুলে তল্লাশি চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত শাবল, দাঁ, হাতুড়ি এবং রক্তমাখা জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। স্কুলের আঙিনায় মাটিচাপা থেকে মিন্টুর খণ্ডিত দেহ উদ্ধার করা হলেও তার মাথা উদ্ধার হয়নি।

র‌্যাব জানায়, হত্যাকারীরা তার মাথার অংশ আশকোনার একটি ডোবায় ফেলে দিয়েছে। মাথা উদ্ধারে সেখানে কাজ করছে র‌্যাব।

এ সময় র‌্যাবের ফরেনসিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আশুলিয়া থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের পদস্থ কর্মকর্তা, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x