ঢাকা, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৪ অপরাহ্ন
বিরামপুরে মৃত থেকে জীবিত হতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শিল্পী সুজিত
মিজানুর রহমান মিজান, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

গান আর তবলা বাজিয়ে সংসার চলে অসহায় সুজিত সরকারের। জেলা প্রশাসনের দেওয়া গত তিন মাস আগে ব্যাংকে করোনা প্রণোদনার একটি চেক ভাঙাতে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনে সুজিত চন্দ্র সরকার জানতে পারেন তিনি মৃত! সেই থেকে কাগজে-কলমে মৃত থেকে জীবিত হতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তবলা শিল্পী সুজিত চন্দ্র সরকার। সুজিত চন্দ্র সরকারের (৫৩) বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার ২নং কাটলা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম অভিনাশ চন্দ্র সরকার। মূলত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তবলা বাজিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাঁর কষ্টের সংসার। দেড় বছর ধরে দেশে করোনা মহামারি ও চলমান লকডাউনে আয়ের সে পথও বন্ধ থাকায় অনেকটা বিপাকে।

সুজিত চন্দ্র সরকার জানান, ‘গত সাংসদ নির্বাচনে আমি ভোট দিতে পারিনি। তখনো জানি না আমি কাগজে-কলমে মারা গেছি। ইউপি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারিনি। প্রণোদনার টাকা তুলতে ব্যাংকে গিয়ে এনআইডি কার্ড যাচাই করতে গিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় আমি মারা গেছি। শুধু তাই নয়, আমি জ্যান্ত মানুষটি কাগজে-কলমে মৃত মানুষের সামনেই বলতেও লজ্জা লাগে।’‘ভোটার তালিকায় তাঁর নাম বহাল ও ডেটাবেইস স্ট্যাটাস সংশোধন করতে এর মধ্যে তিনি স্থানীয় ২নং কাটলা ইউনিয়ন থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নিকট থেকে জীবিত আছেন মর্মে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আর এসব প্রমাণপত্র নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছয় বারেরও বেশি যোগাযোগ করা হলেও তিনি এখনো জীবিত হতে পারেননি।’

সুজিত চন্দ্র সরকার জানান, ২০১৭ইং সালে একই নামের আমার প্রতিবেশী ও সম্পর্কে আমার ভগ্নিপতি সুজিত রায় মারা যান। সে সময় ভোটার তালিকা হালনাগাদে মৃত ভগ্নিপতি সুজিত রায়কে মৃত না দেখিয়ে আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে। ভোটার তালিকা সংশোধন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলাতে অনেক বার গিয়েছি। কিন্তু, কাজ হয়নি। শুধু তাই নয়, চলতি বছর গত ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছয়বার গিয়েছি। সেখানে যে সব কাগজপত্র চেয়েছে সেগুলো সব দিয়েছি। এরপরও কোনো ভালো খবর পাইনি। শুধু নির্বাচন অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। ভোটার তালিকায় আমার নাম জীবিত হিসেবে সংশোধনের জন্য আবেদন অনলাইনে পাঠানো হয়েছে।

সুজিত চন্দ্র সরকার আরো জানান, চলতি বছর মার্চ মাসে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক স্যার আমাকে অস্বচ্ছল শিল্পী হিসেবে আমাকে পাঁচ হাজার টাকার চেক দিয়েছেন। কিন্তু, ভোটার তালিকায় আমি মৃত থাকায় সেই চেক ভাঙাতে পারছি না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আতাউল হক জানান, ভোটার তালিকায় সুজিত রায়ের তথ্য সংশোধন করার জন্য বিরামপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন তাঁর এনআইডি কার্ডটি সার্চ দিয়ে দেখতে হবে। কাজটি কোন অফিসে কি পর্যায়ে আছে। সুজিত চন্দ্র সরকারকে তাঁর বর্তমান এনআইডি কার্ড নিয়ে অফিসে আসতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার জানান, ‘শিল্পী সুজিত চন্দ্র সরকারের সমস্যার কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ভোটার তালিকায় তাঁর তথ্যগত সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x