ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৪ অপরাহ্ন
বিরামপুরে বৃষ্টির অভাবে আমন চাষীরা বিপাকে
মিজানুর রহমান মিজান,বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ

খাদ্য শস্যের ভান্ডার হিসেবে বেশ সু-পরিচিত দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলা। এ উপজেলায় বৃষ্টির অভাবে কৃষকেরা আমন ধানের চারা রোপনে বিপাকে পাড়েছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে পানি নেই। অনেক জমি পানির অভাবে ফেটে যাচ্ছে। ভরা বর্ষা মৌসুম চললেও বৃষ্টির অভাবে প্রচন্ড রোদে পুড়ছে আবাদি জমি। ফলে কৃষকেরা তাঁদের জমিতে আমন মৌসুমে আমনের চারা রোপনকরতে পারছেন না।

শ্রাবণ মাস প্রায় শেষ হতে চললেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানির অভাবে কৃষকরা তাঁদের আমন ধানের চারা রোপন করতে হিমশিম খাচ্ছে। গ্রাম বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘শ্রাবণের ১৬ ও ভাদ্র মাসের ১৩, এর মধ্যে যত পারো আমন চারা রোপন করো।’

শ্রাবণ মাসে অধিক বৃষ্টির কারণে আমন ধানের চারা রোপনের মোক্ষম সময় হলেও এবার বৃষ্টির পানির অভাবে কৃষকরা পড়েছে বিপাকে। ফলে বৃষ্টির পানির অভাবে শ্রাবণ মাসে আবাদি জমি শুকিয়েফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। অথচ শ্রাবণের ২০ তারিখ পার হলেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না। আকাশে মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও বৃষ্টি হচ্ছে না।

আর মাঝে মাঝে যে বৃষ্টি হচ্ছে চাহিদার তুলনায় এতই নগণ্য যে, জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় সাথে সাথেই ঐ পানি শুষে নিচ্ছে মাটি। ফলে কৃষকদের মাঝে শুরু হয়েছে হাহাকার। অর্থশালী কৃষকরা তাঁদের শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে আমন ধান রোপন শুরু করলেও গরীব চাষিরা পড়েছেন বেকায়দায়।

সরজমিনে জানা যায়, বিরামপুর পৌরশহরের দাঁশাআড়া গ্রামের কৃষক সেকেন্দর আলী বলেন, শ্রাবণ মাস আসলে পানিতে জমি থইথই করে। কিন্তু, এবার পানির অভাবে জমি ফেটে গেলেও এখন পর্যন্ত পানির দেখা মিলছে না। এভাবে যদি চলে তাহলে তো জমি পড়ে থাকবে, আবাদ করা যাবে না। বিছন যে গাড়বো, সেই পানিও দিতে হচ্ছে শ্যালো মেশিন দিয়ে। বৃষ্টির অভাবে আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কা শুধু আমার নয়। দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সকল কৃষকদের।

সেকেন্দর আলী আরো বলেন, তাঁর ৭ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ হয়। এ জন্য প্রায় ৪৫ শতক জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করেছি। চারাও বড় হয়েছে। শুধু-ই পানির অভাবে আমন ধানের চারা রোপন করতে পারছি না। এ বছরই শুধু নয়, গত কয়েক বছর ধরেই আবহাওয়া এমন বিড়ম্বনায় ফেলছে। শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। বোরোর মতো আমনের ফলনও হয় না।

উপজেলার ৫নং নং বিনাইল ইউনিয়নের হেড়মা গ্রামের কৃষক আবু হোসেন আবু বলেন, আমি ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করছি। প্রতি বছরের ন্যায় আগাম আমন চাষের জন্য মাঠে নেমেছি। আগাম আমন ধান চাষ করলে একদিকে যেমন ভালো ফলন হয়। অন্যদিকে পোকা-মাঁকড় কম থাকায় ভালো ফসল পাওয়া যায়। কিন্তু, ভরা আমন মৌসুমে জমিতে পানি না থাকায় শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে আমন রোপন করতে হচ্ছে।

চকমাধব গ্রামে রইচ উদ্দিন মন্ডল বলেন,সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি ও তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে মাঠে দিন-রাত বীজতলা থেকে চারা তোলা, জমি চাষ ও মই দিয়ে আমন ধান রোপন করি। আমি এ মৌসুমে ১৭-১৮ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করছি। আগাম আমন ধান চাষ করলে একদিকে যেমন ফলন ভালো হয়। তেমনি পোকা-মাঁকড় কম থাকায় ভালো ফসল পাওয়া যায়। তবে ভরা মৌসুমে জমিতে পানি না থাকায় আমনের আবাদ ব্যাবহত হওয়ার আশংকা করছি।

আমাইল গ্রামের হামিদুল ইসলাম বলেন, আমন আবাদের জন্য জমিতে চাষ দিয়েছি। কিন্তু, পানির অভাবে আমন রোপন করতে পারছি না। কোথাও এক ফোটা পানি নেই। এ অবস্থায় কিভাবে আমন রোপন করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা খরার কথা স্বীকার করে বলেন, আমন রোপনের সময় চলছে। এসময় বৃষ্টি দরকার। বৃষ্টির অভাবে জমিতে পানি নেই। এবার আমনের আবাদ ১৫ দিন পিছিয়ে যেতে পারে।

বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নিক্সন চন্দ্র পাল বলেন, জমিতে পানি না থাকায় একদিকে যেমন আমন আবাদে বিলম্ব হচ্ছে অন্যদিকে উপকারও হবে। জমিতে পানি না থাকায় কৃষকদের আগাম চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে জমির যেমন আগাছা দমন হবে। তেমনি বৃষ্টি হলে চাষকৃত জমি উর্বর হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

তীব্র খরার কারণে জমিতে পানি না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আমন রোপনের সময়। এখনই আমন রোপনের উপযুক্ত সময় চলছে।

এসময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে কৃষকদের বিকল্প উপায়ে সেচ দিয়ে জমিতে আমন রোপনের পরামর্শ দেয়া হবে। তবে অনেক কৃষকই পুকুর বা ডোবা থেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিয়ে আমন রোপন করছেন। আবার কেউ কেউ বিদ্যুৎ চালিত পাম্প দিয়েও পানি সেচ দিয়ে আমন রোপন করছেন।

কৃষি অফিসার আরো বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় এবার ১৭ হাজার ৪’শত ১১ হেক্টর জমিতে আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমন আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার ৭’শত ৩০জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে কৃষি প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

ধানের অধিক দাম ও কৃষি প্রণোদনা পেয়ে কৃষকরা লক্ষ্য মাত্রার অধিক বীজতলায় বীজ বপন করেছেন। ইতিমধ্যে কৃষকরা কেউ কেউ সেট দিয়ে আগাম জাতের আমন চারা রোপন শুরু করেছে। কৃষকদের রোপনকৃত চারার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গুটি স্বর্না, স্বর্না-৫, ব্রি-৩৪, ৫১, ৭১,৭৫, হাইব্রিড ও বিনা-১৭, ২০ জাতের ধান।

x