ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন
বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে রাক্ষসী রূপ: ৫ বসতবাড়ি বিলীন
বানারীপাড়া প্রতিনিধিঃ

বরিশালের বানারীপাড়ায় রাক্ষসী সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রুদ্ররূপ ধারণ করেছে।

গত এক সপ্তাহে উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের নাটুয়ারপাড় গ্রামে পাঁচটি বসতবাড়িসহ বড় একটি এলাকা বিলীন হয়ে গেছে।

ওই এলাকায় এখনও বেশ কয়েকটি বৃহৎ আকারের ফাটল রয়েছে। কয়েক বছর ধরে  অব্যাহত ভাঙনের ফলে বানারীপাড়ার মানচিত্রই যেন পাল্টে গেছে। মানচিত্রে গ্রামগুলোর নাম থাকলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে বছরের পর বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও বালু উত্তোলন বন্ধ কিংবা  ভাঙন রোধে  কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। বানারীপাড়া উপজেলাকে সন্ধ্যা নদী দু’ভাগে বিভক্ত করেছে।

এর পূর্ব পাড়ে পৌরসভাসহ তিনটি ইউনিয়ন এবং পশ্চিম পাড়ে বাইশারীসহ পাঁচটি ইউনিয়ন অবস্থিত। বাইশারী ইউনিয়নটি সন্ধ্যা নদীর তীরে অবস্থিত।

এক সময় ওই ইউনিয়নে বহু রাইস মিলসহ ধানের বিশাল হাট বসত, যা দক্ষিণ বাংলার ঐতিহ্য বহন করত। কালের বিবর্তনে আজ তা কেবলই ধুসর স্মৃতি। বেশ ক’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট ,গাছপালাসহ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি সন্ধ্যা গহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, ডান্ডোয়াট ফেরিঘাট থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে নাটুয়ারপাড় গ্রামের অবস্থান।

এক সময় আরও একটি গ্রামের পর ছিল এ গ্রামটি। ভাঙতে ভাঙতে আজ গ্রামটির শেষ প্রান্ত অবশিষ্ট রয়েছে। স্থানীয়রা জানান ,এক সময় গ্রামটিতে বহু মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার রয়েছে। ভাঙনের যা গতি তাতে যে কোনো মুহূর্তে তাও বিলীন হয়ে যেতে পারে ।

গত এক সপ্তাহে ওই গ্রামের হাফেজ আ. রব,সামসুল হক সরদার, শহীদুল ইসলাম, সুলতান ব্যাপারি ও কবির সরদারের গাছপালাসহ বসত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ওই এলাকায় এক সময় টিন-কাঠের বড় বড় দোতলা ঘর ও পাকা দালানসহ নানা স্থাপনা ছিল আজ তা কেবলই স্মৃতি। কিছু দিন আগে উত্তরকুল মসজিদ রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ফেলানো হয়েছিল। সে কারনে ওখান থেকে না ভাঙলেও পাশ থেকে অনবরত ভাঙছে। গত বছর বর্ষা মৌসুমে সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের দাসেরহাট এলাকায় একরাতে ১৬টি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে গিয়েছিল।

এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের নাটুয়ারপাড় ছাড়াও উত্তর নাজিরপুর ও শিয়ালকাঠি,সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের মসজিদবাড়ি,নলশ্রী ও দাসেরহাট,চাখার ইউনিয়নের চাউলাকাঠি,কালিরবাজার ও হক সাহেবেরহাট,সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের খোদাবখশা ও খেজুরবাড়ি,সদর ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মণকাঠি,জম্বদ্বীপ ও কাজলাহারসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এর আগে এসব গ্রামের শতশত বসতবাড়ি,ফসলী জমি, ইটেরভাটা,স্কুল, কলেজ,মসজিদ,মাদ্রাসা  ও রাস্তাঘাট নদী গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে হাজারো পরিবার ভিটেমাটিসহ সবকিছু হারিয়ে  নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম ও খেজুরবাড়ি আবাসন। এদিকে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সন্ধ্যা নদী থেকে অনিয়মান্ত্রিকভাবে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে বছরের পর বছর ভাঙনে বিলীণ হয়ে যাচ্ছে বিস্তির্ণ জনপদ। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধ ও ভাঙন রোধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা।

তারা এ ব্যপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা জানান, নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানানো হয়েছে।

One response to “বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে রাক্ষসী রূপ: ৫ বসতবাড়ি বিলীন”

  1. 토렌트 says:

    … [Trackback]

    […] There you can find 99319 additional Information on that Topic: doinikdak.com/news/40234 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x