ঢাকা, রবিবার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন
বরিশালে আসলে কী ঘটেছিল
মিজানুর রহমান, বরিশাল থেকে

বুধবার রাতে আচমকা উত্তপ্ত হয়ে উঠে বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্স। রাত ৯টার দিকে মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং নগর ভবনের কর্মীরা ব্যানার অপসারণে উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় অভিযান শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে এটা স্পষ্ট যে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের একেবারে সামনে যাওয়ার পরই তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসাররা বাধা দেন। মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলা কম্পাউন্ডের দেয়ালের বাইরে ব্যানার অপসারণে ইউএনও’র তরফে কোনো বাধা দেয়া হয়নি। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলছিলেন, ঘটনার ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল আনসাররা প্রতিরোধ না করলে ইউএনও’র জীবন হুমকির মুখে পড়তো। রোববার ঘটনাস্থলের আশেপাশের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেদিন হামলাকারীরা ইউএনও’র সরকারি বাসভবনের মূল ফটকের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। একজন ব্যবসায়ী বলেন, ব্যানার অপসারণে বাধা দেয়ায় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইউএনও’র বাসভবন লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিল। ওই বাসভবনের গেটেই পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে এবং হামলাকারীদের সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে।

এ সময় আনসারদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালায় তারা। এতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা আরও মারমুখী হয়ে ওঠে। দুইপক্ষের সংঘর্ষে ওসি, প্যানেল মেয়রসহ ২০/২৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এমন বয়ান পাওয়া গেলেও প্রশাসন ও মেয়র এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেছেন, বুধবার রাতে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করে। এসময় ইউএনও’র কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদের পরিচয় জানতে চান। এরপর তারা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এসময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়। খবর পেয়ে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানালে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আর ইউএনও মুনিবুর রহমান ঘটনার পরে গণমাধ্যমের কাছে বলেন, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসে। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তারা গালিগালাজ করে এবং ইউএনও’র বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। ঘটনার পর থেকে ওই ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাসার ভেতরে অস্থায়ী তাঁবু নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে পালাক্রমে ১২ জন পুলিশ ও ৮ জন আনসার দায়িত্ব পালন করছে।

বরিশাল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মুনিবুর
ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান। গত ১০ই আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলির আদেশ পান তিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সচিব আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত জনস্বার্থে জারিকৃত ওই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঠ প্রশাসন অর্থাৎ বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক চেয়েছিলেন সদর উপজেলায় গৃহীত শোকাবহ আগস্টের সরকারি কর্মসূচিগুলো শেষ হওয়ার পর তাকে বিদায় জানাতে। তবে সেটা আর হয়ে উঠেনি। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন এখন সহসাই ইউএনও মনিবুর রহমানের (১৭২০৯) কেন্দ্রীয় আদেশ হয়তো বাস্তবায়ন হবে না। ঢাকায় তার বদলি প্রলম্বিত হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন- এখন তার বদলির আদেশ কার্যকর করলে মাঠে ভিন্ন বার্তা যাবে। এ নিয়ে রাজনীতি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যরকম আলোচনা হবে। এমনিতেই বরিশাল উপজেলা কম্পাউন্ডের বুধবারের রাতের ঘটনা আজ জাতীয় রাজনীতিতে মুখ্য আলোচ্য হয়ে ওঠেছে।

উপজেলা প্রশাসন থেকে ডিসি অফিস হয়ে কাশিপুরের বিভাগীয় সদর দপ্তর- পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরিজ আলোচনায় ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনাকে বরিশালের রাজনীতি তথা ‘মেয়র ভার্সেস আদারস’ দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ-বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই ঘটনার আগ পর্যন্ত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে থাকা সাদিকবিরোধী নেতাকর্মী কোণঠাসাই ছিলেন। আর প্রশাসন ছিল বেকায়দায়। নানা ইস্যুতে মেয়র ও প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ভিন্নমত স্পষ্ট হতো। ক’মাস ধরে তো মুখ দেখাদেখিই বন্ধ। সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে প্রশাসন ও পুলিশের বৈরী সম্পর্কের জেরেই উপজেলা কম্পাউন্ডের রক্তাক্ত ঘটনা। যা আজ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে! তবে ওই ঘটনার পর এখন অনেক কিছুই সামনে আসছে।

বিসিসিতে ৩০ জন সাধারণ ও ১০ সংরক্ষিত কাউন্সিলরের কমপক্ষে ২৫ কাউন্সিলরের সঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সম্পর্কের অবনতির বিষয়টিও বেশ আলোচনায়। তার মধ্যে অন্তত ২০ জন কাউন্সিলের সঙ্গে মেয়রের সম্পর্ক চরমে ওঠেছে। কাউন্সিলদের অভিযোগ, মেয়র একক সিদ্ধান্তে পরিষদ পরিচালনা করেন। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ১৪টি স্থায়ী কমিটি গঠন করেননি তিনি। এমনকি বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের অকার্যকর রেখে মেয়র তার অনুগত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকে সব ধরনের ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন।

কাউন্সিলররা এতটাই কোণঠাসা যে, তাদের অনেকের সচিব ও অফিস সহায়কও নিয়োগ বা প্রত্যাহার হয় মেয়রের একক সিদ্ধান্তে। মেয়রের সঙ্গে বৈরিতায় বেশির ভাগ কাউন্সিলর তাকে যেমন এড়িয়ে চলছিলেন, তেমনি মেয়রও নানাভাবে ‘যন্ত্রণা’ দিচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, মেয়রের কারণে নগর ভবনের স্থায়ী কর্মচারীদের একটি অংশও কোণঠাসা। দুর্নীতিবাজ তকমা দিয়ে ৪৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বন্ধ রয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জনকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান, দুজন নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রধান বাজেট কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন ওই তালিকায়। তবে নগর ভবনে মেয়র সমর্থক স্থায়ী অস্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যাও কম নয়। তাছাড়া সংখ্যার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তারা প্রভাবশালী। যার জেরে ইউএনও’র বাসায় হামলা এবং পরবর্তী ঘটনাগুলোতে নগর ভবন কর্মচারীদের এই সম্পৃক্ততা। ময়লা অপসারণে ঘোষিত ‘ধর্মঘট’ পালন তার নমুনা মাত্র।

17 responses to “বরিশালে আসলে কী ঘটেছিল”

  1. Do you have a spam issue on this blog; I also am a blogger, and I was wanting to know your situation; we have developed some nice procedures and we are looking
    to trade strategies with others, be sure to shoot me an email if
    interested.

  2. Ttryxy says:

    lasuna sale – cheap himcolin cheap himcolin online

  3. Xychcq says:

    buy besivance eye drops for sale – sildamax pill sildamax usa

  4. Tbhwxy says:

    order gabapentin 800mg pill – buy gabapentin tablets buy azulfidine paypal

  5. Ugwlup says:

    order benemid 500 mg online cheap – tegretol order order tegretol sale

  6. Junufn says:

    cheap celebrex 200mg – buy celecoxib for sale purchase indomethacin without prescription

  7. Nxpwgt says:

    brand colospa – brand pletal 100mg pletal 100 mg oral

  8. Atbleo says:

    diclofenac sale – purchase cambia generic aspirin generic

  9. Ztvzhv says:

    purchase rumalaya – buy generic shallaki for sale elavil 10mg usa

  10. Rydcui says:

    order pyridostigmine 60mg sale – buy cheap generic azathioprine azathioprine without prescription

  11. Enzoqg says:

    brand diclofenac – purchase voveran sale nimodipine where to buy

  12. Hewyqu says:

    mobic 15mg tablet – purchase maxalt without prescription toradol 10mg for sale

  13. Cikrlc says:

    buy periactin 4 mg – tizanidine tablet oral zanaflex

  14. Oyyjpb says:

    order trihexyphenidyl pill – buy diclofenac gel online where can i buy diclofenac gel

  15. Djwmab says:

    order cefdinir without prescription – buy clindamycin cheap

  16. Naftah says:

    buy isotretinoin – buy avlosulfon 100 mg generic buy deltasone 40mg

  17. Quxwcc says:

    prednisone 20mg us – brand prednisone 10mg elimite cost

Leave a Reply

Your email address will not be published.