ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন
বিরামপুরে রাস্তা নেই তবুও সরকারি টাকায় সেতু
মিজানুর রহমান মিজান, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ

মানুষ চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। বিশেষ কোনো রাস্তার প্রয়োজনও নেই। তবুও ফসলি মাঠের মাঝখানে উনিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে একটি সেতু। এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির মাত্র দুই বিঘা জমির ফসল ঐ মাঠ থেকে বাড়িতে তোলার রাস্তা সহজ করতেই সরকারি খরচে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

যদিও সেতুর দুই পাশে নতুন সংযোগ সড়ক কবে তৈরি করা হবে তা কর্তৃপক্ষসহ ঐ জমির মালিকও বলতে পারেন না।

দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ডের পূর্বপাশের্^ ফসলি মাঠে এ সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু, দুই পাশে সংযোগ সড়কহীন অবস্থায় একাকী দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। বুধবার (১৪ জুলাই) সরেজমিনে ঐ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জোতবানী গ্রামের পূর্বপাশের্^ মাঠের মধ্য দিয়ে একটি খাঁড়ি (ক্যানাল) শৈলান ও বেনুপুর গ্রাম হয়ে খিয়ারমামুদপুর গ্রামে গেছে। খাঁড়ির উপরের যে অংশে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তার পশ্চিমপাশের্^র গ্রাম থেকে মাঠে আসার একটি অসম্পন্ন সরু রাস্তা থাকলেও পূর্ব পাশের্^ কোনো রাস্তা নেই।

তবে মাঠের কৃষকরা শুনেছেন, সেতুর দুই পাশের্^ সড়ক তৈরি হবে। কিন্তু, সেই সড়ক কবে হবে এবং কেন হবে তা কেউ জানেন না। মাঠে কাজ করা কৃষক আব্দুর রহিম জানান, এ সেতুটি আমাদের কোনো কাজে আসবে না। সেতুর ডানপাশ দিয়ে খাঁড়িটির একটি শাখা মাঠের দক্ষিণ দিকে প্রায় ২’শ গজ দূরে গিয়ে শেষ হয়েছে।

খাঁড়িটির প্রধান অংশ পূর্ব দিকে শৈলান গ্রামে চলে গেছে এবং খাঁড়িটির ডান তীর ঘেঁষে রেকর্ডের রাস্তা রয়েছে। যেটি শৈলান গ্রামে নবনির্মিত সেতুর সংযোগ রাস্তার সাথে মিশেছে।

সেতুর পূর্বপাশের্^ ২নং কাটলা ইউনিয়নের শৈলান গ্রামের কৃষক সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই সেতুটি সরকারি খরচে কেন তৈরি করা হয়েছে। তার সঠিক কারণ আমি এখনও জানতে পারিনি।’

সেতুর পূর্বপাশের্^র কোনো কৃষকের জমি সেতুর পশ্চিমপাশের্^ নেই। শুধুমাত্র পশ্চিমপাশের্^র জোতবানী গ্রামের আজিজুল হক নামের এক ব্যক্তির দুই বিঘা জমি সেতু সংলগ্ন পূর্বপাশের্^ আছে। আর ঐ দুই বিঘার জমির ফসল বাড়িতে সহজভাবে তুলতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করেই সেতুটি তৈরি করা হয়েছে। মাঠে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে জোতবানী গ্রামের কৃষক আজিজুল হক বলেন, খাঁড়ির পূর্বপাশের্^র মাঠে জোতবানী গ্রামের অনেক কৃষকের জমি রয়েছে। খাঁড়ির উপরে কোনো সেতু না থাকায় জমির ফসল বাড়িতে নিতে অনেক অসুবিধা হয়। খাঁড়ির পূর্বপাশের্^ জোতবানী গ্রামের কতজন কৃষকের জমি আছে এমনটি জানতে চাইলে আজিজুল হক সেটির উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কারো দরকার না হলে সরকার এখান থেকে সেতুটি তুলে নিয়ে যাক! এ বিষয়ে ৬ নং জোতবানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কাবিখা প্রকল্পের ‘‘চল্লিশ দিনের কর্মসূচি’’র মাধ্যমে আগামীতে ঐ সেতুর দুইপাশের্^ রাস্তা তৈরি করা হবে। ফাঁকা মাঠে রাস্তাহীন জায়গায় কেনো সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: কাওসার আলী বলেন, ‘সেতু হওয়ার আগে ঐ স্থানটি পরিদর্শনের সময় এলাকাবাসীর জোরালো দাবির প্রেক্ষিতেই সেখানে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’তিনি আরো জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উনিশ লক্ষ

টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার বলেন, ‘ সেতু নির্মাণের জায়গাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

One response to “বিরামপুরে রাস্তা নেই তবুও সরকারি টাকায় সেতু”

  1. … [Trackback]

    […] Find More here to that Topic: doinikdak.com/news/36544 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x