টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে “৩ শহীদ চত্বর” স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন । বুধবার (৩০জুন) দুপুরে দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন চৌরাস্তা মোড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন “৩ শহীদ চত্বর” স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটির, আহ্বায়ক মো. রহুল আমিন, সদস্য সচিব আবীর আহম্মেদ, যুগ্ন আহ্বায়ক মো. আওলাদ হোসেন, যুগ্ন আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, যুগ্ন আহ্বায়ক মো. ফরিদ আহম্মেদ, সম্মানিত সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন লাভলু, লতিফ সিকদার, কামাল হোসেন, লিয়াকত আলী,মাসুদুর রহমান মাসুদ,আয়নাল হক প্রমুখ।
এসময় মানববন্ধনে আবীর আহম্মেদ বলেন আমি যে মোড়টায় দাঁড়িয়ছি ১৯৭১সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের হাতে এই মোড়েই বড়মিয়াচাঁন সিকদার, হাছেন সিকদার ও বানিজ সিকদার শহীদ হন। তারা এই তিন ব্যক্তি এলাসিন এলাকার অভিভাবক ছিলেন। আজকে কালের পরিক্রমায় ৫০বছর পারি হলেও তাদের এই আত্যতাগ তাদের শহীদ হওয়ার বিষয় মানুষের কাছে অজানা থাকলেও তাদের এই সৃতিকে অমলান করে ধরে রাখতে এলাসিন শহীদ সৃতি “৩ শহীদ চত্বর” ঐ তিন শহীদ এর নাম পাথরে খোদাই করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা।
এসময় মানববন্ধনে বক্তবে আওলাদ হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ আমাদের টাঙ্গাইলের ডিসি, এসপির নিকট একটাই দাবি মহান স্বাধীনতার ৫০বছর পার হলেও এই তিন শহীদ এর নামে এলাসিন শহীদ সৃতি চাই।
১৯৭১-এ এলাসিনের ৩ শহীদের অজানা অধ্যায়। ‘পাছ এলাসিন’ একটি আদর্শ গ্রাম । এর অবস্থান টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পশ্চিমাংশে। গ্রামটিতে রয়েছে ২টি প্রাথমিক, ২ টি স্বনামধন্য কিন্ডারগার্টেন, ২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,১ টি মহা বিদ্যালয় এবং মসজিদ – মাদ্রাসা , ঈদগাহ মাঠ,
খেলার মাঠ ও২টি বাজার।নতুন বাজারের ভিতর দিয়ে চলে গেছে টাঙ্গাইল-মানিকগঞ্জ মহাসড়কটি এবংউক্তবাজারের৫০০গজ উত্তরের একটি মোড় থেকে পূর্বদিকে চলে গেছে এলাসিন- দেলদুয়ার সড়ক। উক্ত মোড়টি এলাসিন বেপারিপাড়া মোড় হিসেবে পরিচিত।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে বেপারিপাড়ার ওই মোড়টিতেই ঘটে যায় হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা ।
যে ঘটনার ধকে ধকে ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে পাছ এলাসিনের শোকার্ত সিকদার গোষ্ঠী।কিন্তু স্বাধীনতার ৫০বছর গড়িয়ে গেলেও উক্ত ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনসহ অনেকের কাছেই এখনও অজানা! ১৯৭১ সালের জুলাইয়ের শেষসপ্তাহের কোন এক সকালে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর সদস্যরা এলাসিন বেপারিপাড়ার উক্ত মোড়ে গাড়ি রেখে ঢুকে পড়ে পূর্ব সিকদার পাড়ায়।হানাদার বাহিনীর সদস্যরা জ্ঞাত হয়ে ছিল বড় মিয়া চাঁনের নেতৃত্বে পূর্ব সিকদারপাড়ার সিকদারদের একটিঅংশ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে যাচ্ছে। হানাদার বাহিনী সিকদারপাড়ার তিন অভিভাবক বড়মিয়াচাঁন সিকদার, হাছেন সিকদার ও বানিজ সিকদারকে ধরে বেপারিপাড়ার ওই মোড়ে নিয়ে আসে.
অতঃপর সবার চোখ বাঁধা হয় এবং সবাই কে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়, সঙ্গে সঙ্গে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে! বড় মিয়া চাঁন হয়ত কম আহত হয়ে ছিলেন, হানা দার চলে গেছে কিনা দেখতে মাথা তুলে তাকালে হানাদারেরা ফিরে এসে বড় মিয়াচাঁনকে বেয়নেট দিয়ে ঘাওয়িয়ে ঘাওয়িয়ে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে! সেদিন ওই মোড়ে তিন শহীদের রক্তের যে প্রবাহ বয়ে যায় তা আজও সিকদার গোষ্ঠীর হৃদয় নদীতে বহমান। আর ঐ হত্যাকাণ্ডে ঐ তিন শহীদ পরিবার যে বিরাট ক্ষতির শিকার হয় সে ক্ষতির ঘানি আজও টানছে ওই তিন শহীদ পরিবার! আমি উক্ত তিন শহীদের হতভাগ্য নাতি। উনারা তিনজনই ছিলেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় দাদা। সময়ের পরিক্রমায় এলাসিন বেপারি পাড়া মোড় আজ প্রশস্ত হচ্ছে আমার শহীদ তিন দাদার প্রশস্ত হৃদয়ের মতই । তাই এলাসিন তথা এলাকার সকল মানুষেরই প্রাণের দাবি উক্ত তিন শহীদ
এর আত্মত্যাগকে অম্লান করে রাখতে ওই মোড়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে শহীদদের নাম খোদাই করে স্থাপন করলে সমৃদ্ধ হবে নতুন প্রজন্ম এবং মোড়টির নতুন নামকরণ করা হোক- “৩ শহীদ চত্বর”। এর মধ্যদিয়ে শহীদের ত্যাগের প্রতি অনেকটা সম্মান দেখানো হবে বলেই এলাকার মানুষ মনে করেন । সংশ্লিষ্ট প্রসাশনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণকরার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।