ঢাকা, শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
করোনার চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে মোংলায় ইউপি নির্বাচন চান না সাধারণ মানুষ
জাহিদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি

হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করায় মোংলায় চলছে কঠোর বিধি নিষেধ। এখানকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, দ্বিতীয়বারের মত আরো এক সপ্তাহের কঠোর বিধি নিষেধ জারি করতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন’র আগামী ২১ জুন ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণায় এখানকার সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। তারা বলছেন, করোনার ভয়াবহতার মধ্যে এখনই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করা হলে এ মহামারীর সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে ঘরে ঘরে।

উপজেলা প্রশাসনও সাধারণ ভোটারদের সাথে মত প্রকাশ করে এই সময়ে নির্বাচন করতে নারাজ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, মোংলায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছি। তাই এরই মধ্যে একটা নির্বাচন হলে সেটি হবে খুবই আশংকাজনক এক পরিস্থিতির। তাই এই আশংকার কথাটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। মহামারীর মধ্যে নির্বাচন যাতে না করা হয়, খুব শিগগিরই এর একটা পজেটিভ সিদ্ধান্ত আসবে বলেও আশা করেন ইউএনও কমলেশ মজুমদার।

ভৌগলিক আর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোংলা বন্দর। একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় বসবাস প্রায় দুই লাখ মানুষের। ঘনবসতি পূর্ণ এ উপজেলায় ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। উপজেলাটি এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষণ বিবেচনায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের হারও শতকরা ৭১ ভাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এখানে চলছে কঠোর বিধি নিষেধ। তাই উপজেলার বাসিন্দারা অনেকটা ঘর বন্দি হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে আগামী ২১ জুন ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখো দিয়েছে।

উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মজিদ, মোঃ খোকন ও আলমগীর হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে একদিকে কঠোর বিধি নিষেধ আবার একই সময়ে নির্বাচন! এটতো মরণ ডেকে আনা। উপজেলার আরেক ইউনিয়ন চিলার বাসিন্দা কুলসুম বেগম ও জাহানারা খানম বলেন, করোনার মধ্যে কিভাবে নির্বাচন হয়? এতে আরও বেশি করোনা হবে। এই সময়ে নির্বাচনের দরকার নেই বলেও দাবী তোলেন তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের মোংলা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মোঃ নুর আলম শেখ বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচন হচ্ছে একটা উৎসব, এই নির্বাচনে চায়ের দোকানে, মাঠে ঘাটে সবাই গায়ে গায়ে মিশে একাকার হয়ে যাবে। করোনার সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতে মোংলায় নির্বাচন দেয়া হলে যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিবে তা মোকাবেলা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহনের তারিখ নির্ধারণের খবরে কিছুটা প্রচার প্রচারণার প্রস্তুতি নেয় প্রার্থীরা। চলমান বিধি নিষেধ চলায় তাই ১০ জুন পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

মোংলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আছেন। তাই এখানে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। ইউনিয়ন ছয়টিতে নারী ও পুরুষ মিলে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৯ হাজার ৫৪০ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x