ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৪ অপরাহ্ন
মিরসরাইরায়ে সড়ক সংস্কারে বিএসএফ’র বাধা, দুর্ভোগ চরমে
Reporter Name

মিরসরাই প্রতিনিধিঃ মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব অলিনগর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি সড়ক সংস্কারে বাধা দিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ।

এটি ভাতর-বাংলাদেশ সীমান্তের আমলীঘাট ওবায়দুল হক খন্দকার সড়ক নামে পরিচিত। বাধার কারনে গত ৭ মাস ধরে ওই রাস্তার সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে আছে। সংস্কার কাজের মাঝ পথে বাধা পড়ার কারনে বিপাকে পড়েছেন সড়কটির ব্যবহারকারী কয়েক হাজার মিরসরাইবাসী। জরুরী খাদ্যশস্য পরিবহন, রুগী পরিবহনসহ যাবতীয় স্বাভাবিক চলাচলে মারাতœক বাধাগ্রস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা। সংস্কারে বাধার পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দীর্ঘ ৭ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো কোন সুরাহা আসেনি বিএসএফ এর পক্ষ থেকে।

স্থানিয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, গত সাত মাস আগে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ নোমেন্স লেন্ড এরিয়ার মধ্যে পড়েছে অভিযোগ এনে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয় আমাদের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন ওবায়দুল হক খন্দকার সড়কটি। বাংলাদেশী সীমান্ত বাহিনী বিজিবির সাথে পতাকা বৈঠকে সুরাহার মাধ্যমে কাজের অনুমোদন দেওয়ার কথা কিন্তু কয়েকবার পতাকা বৈঠক হলেও রাস্তা সংস্কারের কোন সুরাহা হয়নি।

স্থানীয় হাফেজ আহম্মদ জানান, ফেনী নদীর ভাঙ্গনে শত বছরের পুরনো রাস্তাটির বেশকিছু অংশ নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় নিজেদের অর্থায়নে মেরামত করে চালু রাখা হয়েছিল মানুষের চলাচলের জন্য। বর্তমানে সরকারীভাবে টেন্ডার করে ব্রিক সলিংয়ের কাজ চলছিল। যেখানে সরকারিভাবে টেন্ডার হয়েছে, সরকারী টাকা খরচ করে সংস্কার করা হচ্ছে চেয়াম্যান মেম্বার সবাই জানে।  বিএসএফ সংস্কার কাজে বাধা দেয়ার কারনে গত সাত মাস রাস্তাটি অচল হয়ে আছে কেউ কি দেখার নেই? ফেনী নদীর মাঝ বরাবর থেকে দেড়শ গজ ভারতীয় সীমান্তে কাটাতারের বেড়া দিয়েছে বিএসএফ। সেই হিসেবে ১৫০ গজ হিসেব করলে আমার বাড়িঘর কিছুই নাই সব নোমেন্স ল্যান্ডে পড়ে গেছে। আমরা কোথায় যাবো এখন?

স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম জানান, প্রতি মাসে দুই বার করে পতাকা বৈঠক হয় বিএসএফ ও বিজিবি। যুদ্ধের ৩ বছর পর থেকে এই বাড়িতে আছি আমি। কখনো ভারতীয় বাহিনীকে দেখিনি এই রাস্তা নিয়ে কথা বলতে কিন্তু বর্তমানে তারা রাস্তার কাজে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে।

রাস্তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বীথি বিল্ডকমের অংশীদার সেলিম উদ্দিন জানান, সাড়ে ১১’শ মিটার রাস্তার মধ্যে ৫ শত মিটার রাস্তা নিয়ে বিএসএফ বিজিবি বরাবর আপত্তি করে কাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করে। এতে বিজিবি নোটিশের মাধ্যমে আমাদের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলে এবং পতাকা বৈঠকে সুরাহা করা হবে বলে জানান। আমরা ঠিকাদারী নিয়ম অনুয়ায়ী এলজিইডিকে লিখিত জানাই ও বিরোধপূর্ণ এলাকা ব্যাতীত বাকি অংশ কাজ সম্পন্ন করি।

মিরসরাইয়ের ইতিহাস বিশ্লেষক ডা. জামশেদ আলম জানান, স্বাধীনতার পরেও ফেনী নদীর মালিকানা ছিল বাংলাদেশের। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা মুজিব চুক্তিতে ভারত ফেনী নদীতে ভাগ বসায়। সেই অযুহাতে ওই এলাকায় যেকোন উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদান করে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আজাদ উদ্দিন জানান, সড়ক সংস্কারে বাধা দানের পর গত বিজিবি ও বিএসএফের সাথে বৈঠক হয় কয়েকবার। বৈঠকের ভিত্তিতে বিএসএফ সড়কটি সংস্কারের অনুমতি দিয়েছিল তবে কোন এক কারনে সেই অনুমতি আবার ফেরত নিয়ে যায় তারা। তবে সাম্প্রতিক একটি মতবিনিময় সভায় বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বিএসএফ পুণরায় উক্ত সড়ক সংস্করের অনুমতি প্রদান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

স্থানীয় অলিনগর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মাজেদ জানান, এই ব্যাপারে আমরা করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের সাথে আলোচনা করে ভারতীয় ক্যাম্প কমান্ডার ববরাবরে চিঠি দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারনে পতাকা বৈঠক বন্ধ থাকায় বিএসএফএর সাথে সমাধান সুলভ আলোচনা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি অচিরেই চিঠির জবাব আসবে এবং রাস্তা সংস্কার কাজের বাধা উঠিয়ে নিবে বিএসএফ।

x