বাগেরহাট প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৯৭৩ আশ্রয় কেন্দ্র। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ঘূণিঝড়ের সময় করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় ৩ লাখ লোকের থাকাসহ গবাদীপশুও রাখা যাবে। একই সাথে এসব আশ্রয় কেন্দেরাখা হয়ে হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্কসহ পর্যাপ্ত পানি ও সেনিটেশনের ব্যবস্থা। জেলা সদরসহ জেলার ৯টি উপজেলাসহ পুলিশ, মোংলা বন্দর কর্তপক্ষ, কোস্টাগার্ড, নৌবাহিনী, রেডক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জরুরী সেবা দিতে কন্টোল রুম খুলেছে। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, নৌবাহিনী কোস্টগার্ডসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ সব মিলিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ৯টি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে ১ কোটি ৮৭লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ ২৮ মেট্রিক টন শুকনা খাবার। প্রতি উপজেলায় শিশুখাদ্য ও পশুখাদ্য কেনার জন্য আলাদা ভাবে পাঠানো হয়ে ২ লাখ টাকা করে। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’ মোকাবিলায় বাগেরহাটের জনগণকে ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার, দিয়াশলাই ও ঝড়ের সময় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি রাখার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তি উদ্ধার তৎপরতা চালাতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশ সদস্যরা সব ধরনের পর্যাপ্ত যানবাহন প্রস্তুত রেখেছে। ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই সবাইকে নিটকবর্তী সাইক্লোনসহ নিরাপদ আশ্যয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’ ধেঁয়ে আসার খবরে বাগেরহাটের উপকূল জুড়ো সাধারন মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম জানান, বাগেরহাট বাগেরহাট উপকূলীয় জেলা হওয়ায় ঝড়-জলোচ্ছ্াসে এজেলার মানুষ একটু বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাই আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলার উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জসহ জেলায় ৯৭৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনে আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাকা ভবনগুলোও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পানি ও আলোর ব্যবস্থা রাখা হবে। আসন্ন ঝড় মোকাবিলা করতে ওয়ার্ড পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মোংলা বন্দরের প্রস্তুতি :
সুন্দরবনসহ মোংলা আর্ন্তজাতিক সমুদ্র বন্দর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেঁয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবেলায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। খোলা হয়েছে কন্টোল রুম। বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ সকল কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে থাককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের ৫ নম্বর বিশেষ আবহাওয়া বার্তা জারির সাথে সাথেই বন্ধ করে দেয়া হবে মোংলা বন্দরের পন্য ওঠানামার কাজ। বন্দর জেটি থেকে সরিয়ে সুন্দরবনের হারবারিয়া নদী অথবা জেটির বহিনোঙ্গরে পাঠিয়ে দেয়া হবে বানিজ্যিক সব জাহাজগুলোকে। বন্দর চ্যানেল নিরাপদ রাখতে অভ্যন্তরিন সব লাইটার জাহাজ খুলনার ভৈরব নদীর দিকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এতথ্য নিশ্চিত করেছে। সোমবার দুপুরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ মুসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহক করা ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের কাছাকাছি এলেই মোংলা বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্টগুলোকে ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ডে ও বন্দরের জেটি এলাকার আভ্যন্তরে কন্টেইনার ও অন্যান্য কার্গো সমূহকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব হতে রক্ষা করতে সিঙ্গেল টায়ারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে বেধে রাখাসহ নিজস্ব জলযানসমূহকে ২ টায়ারে বিদ্যমান বার্থসমূহে নিরাপদে নোঙ্গর করে রাখা হবে। বন্দরের আবাসিক এলাকায় নিচ তলায় বসবাসরত পরিবার ও ব্যক্তিবর্গকে দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করাসহ বন্দরের অভ্যন্তরে অন্যান্য এলাকায় বসবাসরত সকলকে মোংলা বন্দরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরের বিষয়ে সাইক্লোন সেন্টারে রাখা হবে। ঘূর্ণিঝড়ে কোন জাহাজ ও জলযান চ্যানেলে চ্যানেলে ডুবে গেলে চুক্তিবদ্ধ স্যালভেজ প্রতিষ্ঠানগুলো তা দ্রুত তা দ্রুত উদ্ধার করবে।