মোঃ শরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে রাইসমিলের চুল্লিতে পুড়ে নারী এনজিও কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত নারী এনজিও কর্মী উপজেলা সদরের চাটিপাড়া গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের সেঝো মেয়ে ও স্থানীয় এনজিও সেবালয়ের কর্মী এবং অংশীদার সুরমা আক্তার (৩৩)।
বুধবার (১২ মে) সন্ধ্যায় ইফতারের পর বাড়ির পাশের থ্রি স্টার রাইস মিলের ধান সেদ্ধ বয়েল করার তুস জালিত চুল্লির আগুনে পুড়ে মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে। সাত মাস আগে মেয়েটির ডিভোর্স হয় কালিহাতী পৌর এলাকার সওদাগর পাড়ার আসাদ সওদাগরের সাথে।
কালিহাতী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় আধা ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে এনে একটি পুরোপুরি পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করে কালিহাতী থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেন।
বড় (মেজো) বোন সুমনা জানান প্রতিদিনের মতোন ইফতারের পরপর সুরমাকে দেখতে না পেয়ে সুরমার জামাই আসাদকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোনের কাছে যাওয়ার সময় আসাদের ফোন আসলে আমি জিজ্ঞেস করলে সে বলে আমি দেখতেছি। কিছুক্ষণ পর রাইস মিলের পাশ থেকে লোকজনের কোলাহল শুনতে ও খবর পাই। দৌড়ে গিয়ে দেখি চুল্লির ভিতরে একটা মানুষ তুসের আগুনে জলছে। ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা এসে আগুন নেভাতে নেভাতেই মারা যায়, মৃত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
ডিভোর্সের পরেও কেনো আসাদ তাকে ফোন করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম স্বামী মারা যাবার পর আসাদের সাথে প্রেম হলে ওদের বিয়ে হয়। ডিভোর্সের পরও আসাদ আমার বোনকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করতো, ঈদ কেনাকাটা করার জন্য ওকে টাকার চাপ দিচ্ছিলো। ডিভোর্সের আগেও সুরমাকে অমানবিকভাবে মারধর ও মানসিকসহ নানান রকম নির্যাতন করতো। মাঝে মাঝেই প্রচন্ডরকম মেরে মারাত্মক আহত করে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যেতো, ওদের বাড়িতেও অনেক সময়ই মারতো, অসহনীয় হয়ে গেলেই বোন আমার সাথে শেয়ার করতো। বিয়ের কিছুদিন পর সুরমা আসাদকে মোটরসাইকেল, ফার্নিচার কিনে দেয় ও বাড়িতে টয়লেট নির্মাণ করে দেয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা লোন করে দিয়েছে, তারপরও আসাদ আমার বোনের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েই যেতো। আইনি পদক্ষেপ কেনো নেননি জানতে চাইলে বলেন, সুরমার নিষেধের কারণে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, খুব ভালবাসতো আসাদকে। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের উপরও রামদা নিয়ে আসতো। যেভাবেই মারা যাক না কেনো সুরমার মৃত্যুর কারণ আসাদই। ডিভোর্সের আগেই আসাদ বলতো বড়জোর বাঁচবেই আর এক বছর।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম, নজরুল ও সামাদ সহ আরো ৩/৪ জন বলেন, সুরমাই যে আগুনে পড়েছে আর পড়লেই যে জীবিত পড়েছে তার কোনও সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী নেই। সাবেক স্বামী সওদাগর আসাদ ভালো মানুষ নয়, সে তাঁকে অমানুষিক নির্যাতন করতেন এবং এখনও বিরক্ত করতেন বলে আমরা শুনেছি। তাছাড়া এনজিও বা স্থানীয় কোনও কারণেও তো এরকম হয়ে থাকতে পারে।
কালিহাতী থানার উপ-পরিদর্শক সাজাউল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এ বিষয়ে বলেন, খবর পেয়ে আমরা এসে লাশ উদ্ধার করে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
কালিহাতী থানার ওসি সওগাতুল আলম বলেন, আমরা সকল দিক বিবেচনায় নিয়ে এ মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।