ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
ঘুরে আসুন চিনামাটির পাহাড়
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

কখনও কি চিনামাটির পাহাড়ের নাম শুনেছেন? বাংলাদেশেই এই পাহাড়ের অবস্থান। এটি নেত্রকোণা জেলার বিরিশিরি অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। সেখানকার বিজয়পুর সাদা মাটির জন্য খ্যাত। দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ও এর আশপাশের এলাকায় আছে চিনামাটির খনি। চিনামাটি মূলত সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল।

এটি এক দিকে যেমন দর্শনীয় স্থান, পাশাপাশি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোলঘেঁষা সীমান্তবর্তী এলাকা। চিনামাটির পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে সেখানে ভিড় জমায় পর্যটকরা। এখানেই আছে নীল জলের সোমেশ্বরী নদী।

বর্ষায় সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী বিরিশিরির সৌন্দর্য বেড়ে যায় অনেক গুণ। পাহাড় থেকে নেমে আসা উত্তাল ঢলের রুদ্ধরূপ বর্ষায় বিরিশিরি ঘুরতে আসা পর্যটকদের দেখায় তার বন্য সৌন্দর্য্য।

দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিজয়পুরে সাদা মাটি অবস্থিত। বাংলাদেশের মধ্যে প্রকৃতির সম্পদ হিসেবে সাদা মাটির অন্যতম বৃহৎখনিজ অঞ্চল এটি।

নেত্রকোণা জেলার উল্লেখযোগ্য প্রকৃতিক সম্পদ হলো বিজয়পুরের সাদামাটি। ১৯৫৭ সালে ভূ-তত্ত্ব জরিপে দুর্গাপুর উপজেলা বাগাউড়া গ্রামে সর্বপ্রথম সাদা মাটির সন্ধান পাওয়া যায়।

১৯৬৪ থেকে ১৯৬৫ সালে সরকারের খনিজ সম্পদ বিভাগ এ সাদা মাটির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ১৩টি কূপ খনন করে। খনিজ সম্পদ ব্যুরোর ১৯৫৭ সালের তথ্যানুযায়ী, এ এলাকায় চিনামাটির মজুদ প্রায় ২৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

প্রতিদিন হাজারও শ্রমিক মাটি খননের কাজ করছে খনিজ প্রকল্পগুলোতে। এরপর তা পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিরামিক শিল্পের কারখানাগুলোতে। চিনামাটির এসব টিলা বা পাহাড় দেখতে খুবই মনমুগ্ধকর। লাল, সাদা, নীলাভসহ বাহারি সেখানকার মাটির রং।

চীনেই প্রথম এমন ধূসর সাদা মাটির সর্বপ্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এ কারণেই এ সাদা মাটিকে চিনামাটি বলা হয়। এ মাটিকে সাদামাটি বলা হলেও এর রং হালকা ধূসর থেকে সাদাটে রঙের। একবারে সাদা নয়। কোনো কোনো স্থানে এটি নানা রঙের দেখায়। আবার কোথাও মসৃণ অথবা খসখসে।

ছোট বড় টিলা, পাহাড় ও সমতল ভূমি জুড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। পর্যটকরা মুগ্ধ হয়ে সেখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকেন। সমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকিশা বা মোটরসাইকেলে আধা কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে বিজয়পুরের সাদামাটি অঞ্চলে যাওয়া যায়।

 

বিরিশিরিতে আরও যেখানে ঘুরবেন

চিনামাটির পাহাড় আর সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য ছাড়াও বিরিশিরিতে আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে। যেমন- পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি, তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড মনি সিংহের স্মৃতিভাস্কর, সেন্ট যোসেফের গির্জা।

এছাড়াও দূর্গাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চুড়ায় রানীখং গীর্জা অবস্থিত। এই পাহাড় চূড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন সবটুকু উপভোগ করা যায়। বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানী দীঘি। সেখান থেকেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।

 

কীভাবে যাবেন?

ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস ছাড়ে। ভাড়া পড়বে ২৫০-৩৫০ টাকা। ৫-৭ ঘন্টার মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর বিরিশিরিতে। বাস সুখনগরী পর্যন্ত যাবে। সেখান থেকে নৌকায় ছোট নদী পার হতে হবে।

ওপার থেকে রিকশা, টেম্পু ,বাস বা মোটর সাইকেলে দূর্গাপুর যাওয়া যায়। রিকশায় গেলে ৮০-১০০ টাকা। বাস বা টেম্পুতে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। এছাড়াও মোটর সাইকেলে ২ জন ১০০ টাকা লাগবে।

তারপর বিরিশিরি বাজার থেকে ব্যাটারি রিকশা ভাড়া করে চিনামাটির পাহাড়সহ আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন। পুরো দিনের জন্য ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা। ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যেই উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি, রাণীখং চার্চ,সোমেশ্বরী নদী, গারো পল্লী, কমলা বাগান ও চীনামাটির পাহাড় ঘোরা হয়ে যাবে।

কোথায় থাকবেন ও খাবেন?

দুর্গাপুরে থাকার জন্য ভালো মানের বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস আছে। এছাড়াও দুর্গাপুরে আরও কিছু মধ্যম মানের হোটেল আছে। এসব হোটেলে ১৫০-৪০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা আছে।

যে রেস্ট হাউজে থাকবেন সেখানেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন মধ্যমানের রেস্টুরেন্টে ভাত, ডাল থেকে শুরু করে সব ধরনের মাছ আর মাংস খেতে পারবেন বিরিশিরিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x