পর্যটক বরণে প্রস্তুত সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে খুলেছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বুকিং শুরু হয়েছে হোটেল মোটেলগুলোতে।
পর্যটন ব্যবস্থাপকরা জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনার জন্য স্থবির হয়ে পড়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এভাবে আর কয়েক মাস বন্ধ থাকলে আরো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এদিকে পর্যটনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক সময়ে খুলে দেওয়া হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। শুরু হয়েছে শরৎকাল। পাহাড়ে বৃষ্টির আমেজ কাটেনি এখনো। সবুজ বন, ফুল ফলে পরিপূর্ণ এখন পাহাড়। পাহাড়ি ছড়া, ঝরনাগুলো ফিরে পেয়েছে আপন রূপ।
সিলেটের অন্যতম পর্যটননগরী গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে রয়েছে পর্যটকদের মন ভুলানো আকর্ষণীয় বিভিন্ন স্পট। রয়েছে পাহাড় ও ঝর্ণা। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা- যে কোনো রূপের সৌন্দর্য সবসময় থাকে এখানে। সকাল থেকেই সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তিনটি পর্যটন কেন্দ্র জাফলং, বিছনাকান্দি ও রাতারগুলে পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। তবে, জাফলংয়ে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম লক্ষ্য করা গেছে। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার প্রথম দিনে সহস্রাধিক পর্যটকে মুখর ছিলো এই স্পটটি। জাফলংয়ের জিরোপয়েন্টে পানি থাকায় সেখানে না নেমে নৌকা দিয়ে পর্যটকরা ছুটে যাচ্ছেন মায়াবী ঝর্ণায়। বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাফলংয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দী থাকার পর মনকে একটু প্রশান্তি দিতে তারা ভ্রমণে এসেছেন। এতদিন লকডাউনের কারণে পর্যটন স্পট বন্ধ থাকায় কোথাও যাওয়া হয়নি। এখন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় তারা বেড়াতে এসেছেন।
সিলেটের পর্যটনে প্রাণ ফিরছে-
এক পর্যটক বলেন, আমি অনেক আগে একবার এখানে এসেছিলাম তবে, আগের তুলনায় জাফলংয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবেশ অনেক ভাল হয়েছে। এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণে আসার কথা থাকলেও বেশিরভাগ পর্যটককে তা মানতে দেখা যায়নি। জাফলংয়ের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দোকানপাট বন্ধ থাকায় পণ্য সামগ্রিতে ধুলা-বালি জমে অপরিস্কার হয়ে পড়ছিল। এখন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে দোকান খুলেছেন। তিনি জানান, করোনার কারণে দোকানপাট বন্ধ রাখায় প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দোকানে মালামাল তুলেছেন। তাই এ ক্ষতি পোষিয়ে উঠতে প্রায় বছর খানেক সময় লাগতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্র খোলা থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। সংগ্রাম ক্যাম্প পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্টের পরিচালক সানি আহমেদ জানান, পর্যটন স্পট খোলে দেয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে খুশির আমেজ দেখা গেছে। দোকানপাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সবাই দোকানে বসেছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় হোটেল ব্যবসায়ীরা স্টাফ খরচসহ বিভিন্ন ব্যয়ে লোকসানের মুখ দেখছেন। আমাদের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকায় কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।
সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রে লোক সমাগমে নিষেধাজ্ঞা-
জাফলং ফটোগ্রাফার সমিতির সভাপতি সোহেল আহমেদ জানান, আমাদের সংগঠনসহ ওই এলাকায় প্রায় চার শতাধিক ফটোগ্রাফার রয়েছেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় সবাইকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। গতকাল থেকে স্পট খোলায় বেশিরভাগ ফটোগ্রাফার কাজে এসেছেন। জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইউনিট ইনচার্জ মো. রতন শেখ জানান, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্র খোলে দিয়েছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন আছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং মুখে মাস্ক পড়ে পর্যটকদের ভ্রমণে আসতে হবে। অন্যথায় আমরা তাদের ফিরিয়ে দেবো।
গোযাইঘাটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দে উপচে পড়া ভিড়, এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাহমিলুর রহমান জানান, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই পর্যটকরা বেড়াতে আসতে পারবেন।
সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র গুলোর নানা প্রস্তুতি-
সরকারের নির্দেশনা না মানলে জরিমানা গুণতে হবে। তাই পর্যটকরা যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্পটে আসেন সে লক্ষে উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বিধিনিষেধ অমান্য করা হলেই শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য, সিলেটের গোয়াইনঘাট যা পর্যটন নগরী খ্যাত এজন্য যে প্রকৃতি কন্যা জাফলং ও মায়াবতী ঝর্না,দ্বিতীয় সুন্দরবন বা সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল,পান্তমাই,বিছনাকান্দি, জুগির কান্দি জ্বলা বন,তামাবিল স্থল বন্দর,বিভিন্ন পিকনিক সেন্টার,চা বাগান সহ অসংখ্য প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র।
সবগুলো পর্যটন কেন্দ্রেই পর্যটকদের আগমন যেন আবদ্ধ পাখি হঠাৎ স্বাধীন করে দেয়া ছাতক পাখির গতির মত আগমন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার পাশাপাশি জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ,কোম্পানিগঞ্জ, জকিগঞ্জ,সিলেট সদর সহ সমস্ত সিলেট জুড়ে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র, যা সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের আগমনে যেন বইছে নতুন সজীবতা।
রাষ্ট্রের পাশাপাশি সর্বমহলের একটাই আশাবাদ আগত সকল পর্যটকবৃন্দ সহ সবাই যেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলেন।
Leave a Reply