ঢাকা, শনিবার ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন
খ্যাতিমান নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কাদেরী আর নেই
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিউরোসার্জন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এল এ কাদেরী (৮১) আর নেই।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ক্যান্সারের কাছে হার মেনে খ্যাতিমান এ চিকিৎসক ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এল এ কাদেরী স্যার দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রামের বেসরকারি (সিএসসিআর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বিশিষ্ট নিউরো সার্জন অধ্যাপক ডা. এল এ কাদেরী হাটহাজারী পৌরসভা এলাকার ফটিকা গ্রামের কড়িয়ার দিঘীরপাড়স্থ আব্দুল লতিফ উকিল বাড়ির মৃত আব্দুল লতিফ উকিলের বড় ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তার একমাত্র পুত্র ইঞ্জিনিয়ার রিয়াদ কাদেরী বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর লন্ডনের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে এমএস ডিগ্রি গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি লন্ডনে কর্মরত এবং স্ত্রী ডা. ফারজানা নাজনীনসহ সেখানে বসবাস করছেন।

পাশাপাশি তার একমাত্র কন্যা ড. সোনিয়া কাদেরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে স্বর্ণপদকসহ এমএসসি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। বর্তমানে স্বামী ইঞ্জিনিয়ার জাফরউল্ল্যাহ আরিফ লিটনসহ আমেরিকায় বসবাস করছেন।

এদিকে নগরীতে তিন দফায় পৃথক জানাজা শেষে সোমবার বিকালে গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা রহমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে চতুর্থ দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত।

অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরী ১৯৪১ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩৪৫, নবাব সিরাজদৌল্লা রোডস্থ পৈত্রিক বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম শহরেই তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। ১৯৫৭ সালে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে আইএসসি পাশ করার পর চমেকে এমবিবিএস এ ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে স্বর্ণপদকসহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

১৯৭১ সালে লন্ডনে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশের চিকিৎসকদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন নামে সংগঠন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি চিকিৎসা অবদানের জন্য মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক ও মানবাধিকার শান্তিপদক পেয়ে সম্মানিত হন। বিএমএ সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ’৯০ সালে তিনি পেশাজীবী জনতার নেতা হিসেবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ও সাহসী ভূমিকা রাখেন।

সামাজিক দায়িত্ব ও পারস্পরিক সহমর্মিতার নৈতিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী অধ্যাপক ডা. এলএ কাদেরী বিভিন্ন সময়ে চমেক প্রাক্তন ছাত্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার দুবার নির্বাচিত সভাপতি, চমেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব সার্জনস এর সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি, বহুবার চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কর্মজীবনে তিনি অসংখ্য সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x