টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে নিষিদ্ধ চায়না জাল ও কারেন্ট জালের সয়লাব দেখা গেলেও এখন পর্যন্তও প্রশাসন এসব জাল ও কারেন্ট জাল বন্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পৌজান, হামিদপুর (কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী), বল্লা, এলেঙ্গা হাটে এ সকল অবৈধ জাল অবাধে বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, চারান বাজারের ডিলার শহিদ, মজনু ও বকুল এবং হামিদপুর বাজারের ডিলার সাত্তার এদের মাধ্যমে কালিহাতী উপজেলা সহ আশে পাশের উপজেলাতে এসব নিষিদ্ধ চায়না জাল ও কারেন্ট জাল অবাধে বিক্রি হচ্ছে। হামিদপুরের পিন্টু, রুবেল ও হাফেজ এবং চারানের আবেদ আলী, শের আলী ও হারুন, কালা মিয়া ডিলারদের নিকট থেকে কমিশনে এসব জাল পাইকারি ক্রয় করে বিভিন্ন হাটে খুচরা বিক্রি করে থাকেন। তবে এ বিষয়ে বিক্রেতাদের কেউই মুঠোফোনে বা সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।
চায়না জাল দিয়ে প্রতিনিয়তই রুই, কাতলা, বাঘাইড়, আইড়, চিতল, টেংরা, ও শিং মাছের পোনাসহ সব ধরনের মাছ মেরে ফেলা হচ্ছে। উপজেলা বিভিন্ন নদ-নদী বা ডুবাতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ জাল ও কারেন্ট জাল। যার ফলে ভবিষ্যতে বড় মাছের সংকটে পড়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার কোকডহরা ইউনিয়নের বলধি লাঙ্গলীয়া নদীতে জাল থেকে মাছ ধরছেন বাবুল মিঞা। জালের এক মাথায় (প্রান্তে) পাঁড় ঘেঁষে বাশের খুটিতে পুরাতন কাপড় বেধে লম্বা-লম্বি বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে মাছ যেনো জালে না ঢুকে পার হয়ে যেতে না পারে। কি কি মাছ ধরেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এহন নদীতে পানি কম বৃষ্টির পানি, ছোট পুটি, সিলভারের পোনা, ছোট টেংরা, শিং মাছ এগুলা ধরা পড়তাছে, কাঁকড়া, পানি আওয়া শুরু হইলে ছোট-বড় সকল মাছই এই জালে আটকে। সুতায় দেশীয় ভাবে তৈরী এ জাল দেড় থেকে আড়াই ফুট এক প্রান্তে ৭ ফুট গোলাকার, বাকিটা চার কোণা, জাল ভাঁজ করে গুটিয়ে রাখা ও সহজে বহন করা যায়। চিকন এক ধরণের লোহার শলাকা গোল করে তিন-চার ফুট পরপর বসিয়ে বাহিরের দিক থেকে জাল লাগিয়ে ভিতরেও একটি জাল বিশেষ কায়দায় লাগানে যা ধীরে ধীরে শেষ প্রান্তে সংকুচিত, পুরো ফাঁকা করে দুই মুখ খোলা করে তৈরী। জাল পাঁতার সময় যে দিকে মাছের চলাফেরা বেশি সেদিকটা খোলা রেখে অপর মুখ (প্রান্ত) রশ্মি দিয়ে বেধে আটকে দেয়া হয়। জালের ভিতরে মাছ চলাচল করতে পারার কারণে তাজা থাকে। আকার ভেদে ত্রিশ ফুট মাপের জাল আড়াই হাজার টাকা, পঞ্চাশ ফুট মাপের জাল সাড়ে তিন হাজার টাকা ও আশি ফুট মাপের জাল দশ হাজার টাকায় খুচরা কিনতে পাওয়া যায়। দেশীয় কারেন্ট জালে মাছ আটকে পড়ে , দামও কম পাওয়া যায়, জাল থেকেও মাছ ছাড়ানো কষ্টকর ও সময়সাধ্য। চীনের তৈরী এ বিশেষ জালে ছোট-বড় সকল প্রকার মাছই আটকা পড়ে। মাছ বের করে আনাও সহজ এবং তাজা থাকে, দামও বেশি পাওয়া যায়। আষাঢ় মাস থেকে আশ্বিন পর্যন্ত এই চার মাস নদী-নালা, খাল-বিল, নামা জায়গাতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। এ ছাড়া পানি বেশি হলে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় নদীনালা, বিল-ঝিল, খানাখন্দরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমান তানজিন অন্তরা এ বিষয়ে বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার ও সংরক্ষণে হুমকিতে ও কারেন্ট জাল এধরনের জাল কোন কোন এলাকায় ব্যবহার হচ্ছে আমাদের জানা নেই, জানতে পারলে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। কালিহাতী উপজেলা মৎস্য অফিসার তাহমিনা আক্তার তামান্না বলেন, এই জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। এটা মাটির সাথে আটকে থাকে যার ফলে ছোট বড় সব মাছ আটকে যায়। এই জালের ব্যবহার থেকে সকলকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হলো। যদি কেউ না মানে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই মাসে আমরা উপজেলার চারান এলাকায় অভিযান চালিয়ে চায়না জাল পুড়িয়ে দিয়েছি।