ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
বিরামপুর সীমান্তে হোমিও ঔষুধ, গ্লুকোজ ও পানি মিশিয়ে তৈরী হচ্ছে ফেন্সিডিল
মিজানুর রহমান মিজান, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ

হোমিও ঔষুধ, গ্লুকোজ ও পানি মিশিয়ে স্থানীয়রা তৈরি করছে ভেজাল ফেন্সিডিল। ভেজাল ফেন্সিডিলে ছেঁয়ে গেছে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা। তেমনি ভারত থেকে অন্য একটি ঔষুধ এনে তা বোতলে ভরে ফেন্সিডিলের মোড়ক লাগিয়ে ফেন্সিডিল নামে চালিয়ে দিচ্ছে। এই নেশা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের ত্রিমোহিনী থেকে বালুঘাট এলাকায় বেশ কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে নতুন একটি মাদকের। যা দেখতে অবিকল ফেন্সিডিলের মতো। যদিও বোতলের গায়ে ভারতীয় ‘শিমর’  জেলার নাম উল্লেখ আছে। এই বোতলগুলোকে ভারতের হিলিতে আনা হয় তরল (খালা) হিসেবে। পরে সেখান থেকে বেশ কয়েকটি স্থানে  বোতলজাত করে বাংলাদেশে ঢোকানো হয়। এ জন্য ভারতের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ জন পরিবেশক নিয়োগ করা আছে। তাঁদের মধ্যে ত্রিমোহিনীর দত্ত বাবু, তাঁর ছেলে নেপাল বাবু এবং গোপাল কালিকাপুরের মোজাফফর রহমান অন্যতম। ভারতে নতুন মাদকটির দাম মাত্র ২’শত টাকা। সেটিই বাংলাদেশে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫’শত টাকায়  বিক্রি করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক কারবারী বলেন, ফেন্সিডিলের পুরনো একটি বোতলের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা, নতুন একটি মুখ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, হোমিও ঔষুধ ও গ্লুকোজ পানিতে মিশিয়ে ৪০ টাকাসহ ১০০ মিলিলিটার  ফেন্সিডিল তৈরি করতে মোট ২৪০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু, এই বোতল বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫’শত টাকায়। হোমিও ঔষুধটি ভারতের হিলি শহর থেকে ২ হাজার টাকা বোতল কেনা হয়। সেই একটি বোতল দিয়ে ২ হাজার বোতল ফেন্সিডিল তৈরি করা সম্ভব।

স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভারতীয় অংশের বলপাড়া গ্রামের আনিছুর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফে’র) লাইনম্যান হিসেবে কাজ করেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন বলপাড়ার ইউসুফ, কালিপদ ও নিখিলচন্দ্র। উঁচা  গোবিন্দপুরের স্বপন বৈরাগী, গেদলা, পাচঁ কুড়ি, পার্থ, কালিপদ, উপক, দিপক এবং নীচা গোবিন্দপুরের মিঠুন, আশিক, নুর ইসলাম, ভোলা, শফিকুল, রুবেল, শাহিন, সুলতান, আলম, সীমান্ত সংলগ্ন চার ইউপি মেম্বার ও দুই ইউপি চেয়ারম্যানের পুত্র-ভাতিজা ও আত্মীয় স্বজনরা এগুলো বাংলাদেশে পাচার করেন। এ ছাড়া হিলি শহর, পানজুল, ত্রিমোহিনীতে বোতলের নতুন মুখ তৈরি করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক কারবারী বলেন, ‘বর্তমানে ভারত থেকে যে সব ফেন্সিডিল বাংলাদেশে পাটার করে আনা হয় তা সবই নকল ফেন্সিডিল। শুধু তা-ই নয়, কারবারীরা পানিতে হোমিও ঔষুধ ও গ্লুকোজ মিশিয়ে বাড়িতে বসেই তৈরি করছেন স্বচ্ছ ফেন্সিডিল।’ বর্তমানে ২নং কাটলা ইউনিয়নের দামোদরপুর (বাসুপাড়া) গ্রামের ৪/৫ জন নিজ বাড়ীতে নকল ফেন্সিডিল তৈরী করছে এবং এরা ভাড়া হিসেবে ভারতে গিয়েও নকল ফেন্সিডিল তৈরী করে দিয়ে আসে।

২০১৭ইং সালের ফেব্রুয়ারীতে দিনাজপুর জেলা পুলিশ প্রকাশিত ‘আলোকচ্ছটা’ নামের বই অনুযায়ী, এই উপজেলায় মাদক কারবারীর সংখ্যা ৫২ জন, সেবনকারী ৩৬ জন এবং বহনকারী ৩০ জন। বর্তমানে সেই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে মনে করছে স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয়রা জানায়, দামোদরপুর (বাসুপাড়া), কাজিপাড়া, গোবিন্দপুর ও দাউদপুর গ্রামে ৬০ টি বাড়িতে খুচরা বিক্রি হয় ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন নেশা। পাশের্^র চন্ডিপুর, কাটলাবাজার, হরিহরপুর, কাটলা হাসপাতাল মোড়, কাটলা টেম্পু মোড়, খিয়ার মামুদপুর (কসবা), কাটলা হাড়িপাড়া, দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর, চৌঘরিয়া, জোতবানি, ভাইগড়, শিবপুর, হামলাকুড়ি, করমঞ্জি ও আয়ড়া মোড়ের প্রায় ৩০০ বাড়িতে এবং বিরামপুর রেল স্টেশন, শিমুলতলী, গড়েরপাড়, মির্জাপুর, আদিবাসীপাড়া, ইসলামপাড়া (উপজেলা কারাগার), ঘোড়াঘাট রেলগুমটি এলাকায় প্রায় ৫০ স্থানে মাদক খুচরা বিক্রি হয়।

এ বিষয়ে বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, আমরা নিয়মিত মাদক কারবারীদের আটক করে মামলা দিচ্ছি। অনেক স্থানে অভিযানকালে ফেন্সিডিলের খালি বোতল পাওয়া যাচ্ছে। সেই থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ফেন্সিডিলের পুরনো বোতলেই নতুন ফেন্সিডিল ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কয়েক বোতল নতুন  নেশাজাতীয় ভারতীয় এমকেডিল বোতলসহ আসামিকে আটক করা হয়েছে।

বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা: শাহরিয়ার ফেরদৌস হিমেল বলেন, ‘নেশা এমনিতে ক্ষতিকর। এই ভেজাল নেশা আরো ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এই নেশা করলে মস্তিষ্ক বিগড়ে যাওয়াসহ মানুষের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x