রংপুরের মিঠাপুকুরে গত মাসের ২৭ মে নানীর ঘরের মেঝে খুড়ে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশু রহিমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর পুলিশ সেই হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী রাজা মিয়াকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সে উপজেলার বুজরুক সন্তোষপুর গ্রামের শামীম মিয়ার ছেলে। গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে ফরিদপুর নগরকান্দা থানার তালমার মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ ও পরিবার সুত্রে জানা যায়, গত মাসের ২৬ মে বিকেলে মায়ের কাছ থেকে দশটাকা নিয়ে বাড়ির পাশের একটি দোকানে পটেটো কিনতে যায় শিশু রহিমা। এরপর আর বাড়িতে ফিরে আসেনি রহিমা। এরপর রহিমার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করতে থাকে। ঘটনার ১ দিন পর অভিযুক্ত রাজা মিয়া তার নানীর বাড়িতে না থাকায় রহিমার পরিবারের সন্দেহ হয়।
এরপর রহিমার পরিবার গ্রামের লোকজনসহ রাজা মিয়ার নানীর বাড়ীতে রহিমাকে খোজাখুজির একপর্যায়ে ঐ বাড়ীর পূর্ব একটি আধাপাকা ঘরের মেঝেতে কাদা দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ বেড়ে যায়। খবর পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ঘরের মেঝে খুড়ে রহিমার লাশ উদ্ধার করে। নানী হালিমাকে ঘটনার দিনই গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল রাজা মিয়া।
শিশু রহিমা হত্যাকান্ডে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে প্রচার করা হয়। সুশীল সমাজ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী রাজা মিয়াকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে এলাকায় মানববন্ধন করে । আদরের দুলালীকে হারিয়ে মা-বাবাসহ পরিবারের সকল সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
পুলিশ জানায়, আসামী রাজা মিয়া ধরা ছোয়ার বাইরে ছিল। রাজা মিয়াকে ধরতে পুলিশকে অনেক বেশ বেগ পেতে হয়। পুলিশের একটি বিশেষ টিম অভিযান অব্যাহত রাখে। অবশেষে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে । গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে রাজা মিয়া জানায়, ঘটনার দিন রাজা মিয়ার নানার নিজের এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকজন পার্শ্ববর্তী রাজহঔওিধলিছড়ান এলাকায় লাশ দাফনের জন্য যায়। এসময় রাজা মিয়া তার নানীর বাড়িতেই থাকে। এ সময় রহিমার মা তার ২ মাসের বাচ্চা ও রহিমাকে নিয়ে তার বাড়িতেই ছিলেন। একপর্যায়ে মায়ের কাছে দশ টাকা নিয়ে বাড়ির পাশের ১টি দোকানে পটেটো কিনতে যায় রহিমা। পথে রাজা মিয়া তাকে আরও দশ টাকা দিয়ে বিস্কুট আনতে বলে।
শিশু রহিমা বিস্কুটের প্যাকেট রাজা মিয়াকে দিতে গেলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় রহিমা চিৎকার করার চেষ্টা করলে তার গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে রাজা মিয়া। এরপর
মৃত্য নিশ্চিত করার জন্য সে ব্লেড দিয়ে তার গলা কেটে কোদাল ও বটি দিয়ে ঘরের মেঝেতে গর্ত খুড়ে লাশ পুতে রাখে তার উপর ধানের বস্তা রেখে দেওয়া রাখে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোদাল,বটি, রক্ত মোছার কাজে ব্যবহৃত কাথা ও লুংঙ্গী উদ্ধার করে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) মোঃ কামরুজ্জামান,পিপিএম জানান,আলোচিত এ ঘটনায় হত্যাকারী রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করে
জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।