ঢাকা, সোমবার ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ অপরাহ্ন
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির গুঞ্জন
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। অথচ এর মধ্যেই নতুন কমিটির দাবি উঠেছে সংগঠনটির ভেতরে। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশীরাও দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। বিগত কয়েকটি দলীয় কর্মসূচীতেও পদপ্রত্যাশীদের দেখা গেছে নিজ বলয়ে আলাদা আলাদা শোডাউন করতে।

দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল। তাদের নেতৃত্বেই হয় ৬০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে পৌণে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি তারা। এছাড়া কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে।

সব অভিযোগ ও ব্যর্থতা থেকে ছাত্রদলকে মুক্তি দিতেই নতুন কমিটি চাচ্ছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও নীতিনির্ধারকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমানে পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগের সভাপতি ও সম্পাদক রাজীব-আকরামের মতো নিজের পদ দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করার কারণেই দলীয় কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার বিপরীতে ধীরগতিতে নিয়ে গেছে। ফলে ২১ মাস পেরিয়ে গেলেও বর্তমান নেতৃত্ব কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়। ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে কেন্দ্র।

বর্তমান কমিটির বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি গঠনে ব্যর্থতাবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশে ছাত্রদলের যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের খুঁজে বের করতে ১১টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। এই টিমের কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় গিয়ে খুঁজে খুঁজে যোগ্য নেতৃত্ব সুপারিশ করা। এরপর কেন্দ্র তার অনুমোদন দেবে। তবে রাজধানীকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চাঙা হলেও গত ২১ মাসে রাজধানীর কোনো ইউনিট কমিটি গঠন করতে পারেনি বর্তমান কমিটি। তবে রাজিব-আকরামের কমিটির মেয়াদে গঠন হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটিটি শুধুমাত্র পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কলেজ কমিটিও গঠন করা হয়নি।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটির সদস্যদের নিয়ে গত সপ্তাহে বর্ধিত সভা হয়েছে। সভায় একাধিক জুনিয়র সদস্য ঢাকার কমিটিগুলো গঠন করার বিষয়টি উত্থাপন করেন। রাজধানীকেন্দ্রিক সকল কমিটির কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। কিন্তু সভাপতি-সেক্রেটারি বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল জানিয়েছেন, সারাদেশে উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় মোট ১৩৩১টি কমিটি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকার মধ্যে ঢাবি ছাড়া সব কমিটি বাকি আছে। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে অনেক আগে। ঢাকার কলেজগুলোর কমিটির সুপারিশ জমা হয়েছে। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কারণে কমিটিগুলো অনুমোদন হয়নি।

এদিকে মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রদলের একাধিক নেতাদের অভিযোগ, ছয় মাস আগে সাংগঠনিক টিম রাজধানীর বেশ কয়েকটি কমিটির সুপারিশ কেন্দ্রে জমা দিলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঝুলিয়ে রেখেছেন। অনুমোদন দিচ্ছেন না। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ঢাকার কমিটিগুলোতে খোকন-শ্যামলের পছন্দের লোকদের জায়গা করে দিতেই গড়িমসি করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রদলের এই কমিটি অতিরিক্ত সময় থাকার জন্য কৌশল হিসেবেই কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ এবং ঢাকা অন্যান্য সকল কমিটি আটকে রাখা হয়েছে।

কমার্শিয়াল সংগঠনে পরিণতবিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলের গুরুতর অভিযোগ উৎকাচের বিনিময়ে বাছবিচার ছাড়াই কমিটি গঠন করা। এক্ষেত্রে সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাগ-বাঁটোয়ারা করেই নানা পদে লোক বসাচ্ছেন তারা। এতে অযোগ্যরা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারলেও ত্যাগীরা উপেক্ষিত হচ্ছেন। কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়র নেতাদের সুপারিশও মানছেন না খোকন-শ্যামলরা।

অভিযোগ উঠেছে, ২৩ লাখ টাকা গ্রহণের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একজনকে উপজেলা ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। পরে ২১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির ১৩ জনের পদত্যাগ ও আন্দোলনের মুখে তারেক রহমানের নির্দেশে ওই কমিটি স্থগিত করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুরে প্রায় দেড় কোটি টাকার কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে সুপার টু’য়ের আরেকজনের বিরুদ্ধে। এরপরই তারেক রহমানের নির্দেশে ছাত্রদল নেতা সাত্তার পাটোয়ারীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তবে এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণে তদন্ত কমিটির কার্যক্রমের গতি অনেকটাই মন্থর হয়ে পড়েছে।

নরসিংদী জেলা ছাত্রদল কমিটি নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। এই কমিটি গঠন নিয়ে সেখানে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।

সারাদেশে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা জানান, বিশেষত সিলেট, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার থানা কমিটি গঠনে সবচেয়ে বেশি আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এছাড়াও পটুয়াখালীর গলাচিপা ও দশমিনা এই দুই উপজেলার কমিটি গঠন নিয়ে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। এখানে বিতর্কিত কমিটি হওয়ায় তারেক রহমান ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু মামুন খান ওই এলাকা সরেজমিন তদন্ত করে এলেও ত্যাগীদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি এখনো।

ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র নেইছাত্রদলের বয়স অর্ধশত বছর। দেশের বৃহৎ এই ছাত্রসংগঠনের নেই কোনো চূড়ান্ত গঠনতন্ত্র। দীর্ঘ সময় ধরেই খসড়া দিয়েই চলছে সংগঠন। জানা গেছে, বর্তমান কমিটির অন্যতম একটি দায়িত্ব ছিল গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসেও গঠনতন্ত্র নিয়ে তারা কোনো কাজই করেননি। গঠনতন্ত্র ছাড়াই একটি সংগঠন বছরের পর বছর চলছে।

ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল জানিয়েছেন, আমাদের গঠতন্ত্র এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। শিগগিরই কিছু সংশোধন এনে চূড়ান্ত করা হবে।

নতুন কমিটিতে যাদের নিয়ে আলোচনা চলছেখোকন-শ্যামল কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। নতুন কমিটি গঠনের সম্ভাবনার মধ্যে যারা দায়িত্বে আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, মাইনুদ্দিন রাজু, রিয়াদ ইকবাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি। ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় থেকেই বেশ আলোচনায় রয়েছেন তিনি। নেতাকর্মীদের মধ্যেও তার ভালো অবস্থান রয়েছে। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে একাধিকবার সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের দ্বারা নির্যাতনের শিকার ও গ্রেফতার হন তিনি। এছাড়াও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর আস্থাভাজন হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত তিনি।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাইফ মাহমুদ জুয়েল। স্লোগান মাস্টার হিসেবে পরিচিত এ নেতা দলের দুর্দিনে হাইকমান্ডের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে তৃণমূলের আস্থার জায়গায় রয়েছেন।

আমিনুর রহমান আমিনের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠেনি। নেতাকর্মীবান্ধব এই নেতাকে নিয়ে দলের একটি অংশের আগ্রহ রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক হিসেবে রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতাকর্মীর মাঝে ভালো পরিচিতি রয়েছে। এছাড়াও দলীয় সকল কর্মসূচিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ স্বীকৃত। আন্দোলনের সংগ্রামের কারণে কিছু দিন আগেও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া তরুণ এই নেতার বিষয়ে অনেকের আগ্রহ রয়েছে।

এবিষয়ে কথা বলতে চেয়ে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কাউন্সিলের বিষয় জানতে চাইলে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন বলেন, কাউন্সিল নিয়ে ভাগ ভাগ করে আলোচনা হলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল হওয়ার পক্ষে তিনি। নির্দিষ্ট সময় কাউন্সিল হলে প্রার্থী হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপরে।

পরবর্তী কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময় অবশ্যই কাউন্সিল চাই। তবে কাউন্সিল কখন হবে না স্বল্পকালীন আহ্বায়ক কমিটি হবে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের দলের অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমানের উপর ছেড়ে দিতে চাই। আর কাউন্সিল হলে যদি বয়স সীমা থাকে তাহলে অবশ্যই প্রার্থী হবো।

পরবর্তী কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে মাইনুদ্দিন রাজু বলেন, একটি ছাত্র সংগঠন হিসেবে নিয়মিত কাউন্সিল হোক সেটা আমরা চাই। তবে এ বিষয়ে সকল সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের অভিবাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। তিনি জানান, আমাদের এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এবং কিছু কিছু ইউনিট কমিটি এখনও বাকি আছে। খুব শিগগিরই সেগুলো ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে। আর কাউন্সিল হলে যদি বয়সসীমা থাকে তবে অবশ্যই প্রার্থী হবো।

পরবর্তী কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ ইকবাল বলেন, আমি নির্দিষ্ট সময় কাউন্সিল হওয়ার পক্ষে। তবে কাউন্সিল কখন কিভাবে হবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আমাদের অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর। আর কাউন্সিল যে প্রক্রিয়ায় হোক না কেন আমি একজন প্রার্থী হিসেবে ওই কাউন্সিল অংশগ্রহণ করব।

কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বর্তামান কমিটি সরাসরি তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত কমিটি। ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীর মনের আকাঙ্ক্ষা সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সঠিক সময়ে আরেকটি নতুন কমিটি হোক। সেটা কিভাবে হবে তা ঠিক করবেন আমাদের অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমান। সুত্র নয়া দিগন্ত

14 responses to “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির গুঞ্জন”

  1. … [Trackback]

    […] Find More to that Topic: doinikdak.com/news/24271 […]

  2. check here says:

    … [Trackback]

    […] Find More on that Topic: doinikdak.com/news/24271 […]

  3. … [Trackback]

    […] Here you will find 83680 more Info on that Topic: doinikdak.com/news/24271 […]

  4. quik 2000 says:

    … [Trackback]

    […] Find More Information here on that Topic: doinikdak.com/news/24271 […]

  5. Flbhxq says:

    lasuna pills – diarex drug buy himcolin generic

  6. Ojyrlu says:

    buy gabapentin pills for sale – order motrin 600mg generic azulfidine medication

  7. Scvyao says:

    besivance us – sildamax pill order sildamax sale

  8. … [Trackback]

    […] Info on that Topic: doinikdak.com/news/24271 […]

  9. Qmtrix says:

    probalan drug – order tegretol generic generic tegretol 200mg

  10. Qbwkfx says:

    celecoxib over the counter – order flavoxate pill indomethacin cost

  11. Mmuuaa says:

    purchase colospa pills – colospa price order generic pletal 100 mg

  12. Mwgapv says:

    buy voltaren 100mg for sale – order generic voltaren 100mg order aspirin 75 mg generic

  13. Hebzgr says:

    pyridostigmine oral – pyridostigmine 60 mg pills azathioprine 50mg ca

  14. Llnxnt says:

    buy rumalaya online – purchase rumalaya online cheap purchase elavil pill

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x