ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৭ অপরাহ্ন
রংপুরে স্ত্রী ও সন্তানকে গাড়ী থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টা, স্বামী গ্রেফতার
হীমেল মিত্র অপু স্টাফ রিপোর্টার

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা হারাগাছ হাজিপাড়া এলাকায় এ অমানবিক ঘটনাটি ঘটে।

নির্যাতিতা নারী মায়িশা মোজাহিদ তন্নী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছে।

মামলা সূত্র মতে, পাঁচ বছর আগে রংপুর নগরীর শালবন এলাকর মোজাহেদ হোসেন ফুলুর মেয়ে মায়িশা মোজাহিদ তন্নীর সাথে কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ হাজিপাড়া এলাকার মাহমুদার রহমানের ছেলে মতিউল হাসান সুমনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় পাত্র ও স্বজনদের অনুরোধে মেয়ের সুখের জন্য যৌতুক হিসেবে নগদ দশ লক্ষ ও ১৭ ভড়ি সোনার গহনা সহ আনুমানিক ২৮ লাখ টাকার মালামাল প্রদান করা হয়।

বিয়ের পরে মায়িশা জানতে পারে তার স্বামী সুমনের তারাগন্জ উপজেলায় পূর্বের একটি বিয়ের কথা। সেই বিবাহ বিচ্ছেদের কারন যৌতক সংক্রান্ত।সব কিছু মেনে মায়িশা স্বামীর ঘর সংসার করতে থাকে। এরি মধ্যে তাদের দুটি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে।বড় কন্যার বয়স চার ও ছোটটির বয়স দেড় বছর । তার স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে প্রতিদিন মাদক সেবন করতে ৫-৭ হাজার টাকার প্রয়োজন। প্রথমে বাবা মার টাকা দিয়ে মাদক সেবন চলতে থাকে হঠাৎ করে তারা টাকা দেওয়া বন্ধ করে।ছেলে মাদক সেবক জেনেও টাকা দিত।

আকস্মিক টাকা না পাওয়ায় শুরু করে স্বামী সুমন মায়িশার উপর নির্যাতন। সে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে বাপের বাড়ী থেকে টাকা আনার জন্য। রাজি না হলে তাকে মারধর করে।মায়িশা বিষয়টি তার বাবা মাকে জানালে তার বাবা মেয়ের সুখের জন্য আবারো যৌতুক হিসেবে দশ লাখ টাকা প্রদান করে।নেশাতে সুমনের টাকা শেষ আবারো ২৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি বাবার বাড়ি থেকে আনার জন্য। গত এক মাস আগে মারধর  করে দুই শিশু সন্তান সহ বাসা থেকে বের করে দেয়।অগ্যতা মায়িশা বাবার বাড়িতে আসে।

ইতি মধ্যে মায়িশার বাবা ও স্বজনরা দুই শিশু সন্তানের কথা ভেবে সংসার করার জন্য আবারো জামাতা সুমন ও তার বাবা সহ স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে গত ২৪ মে বাসায় ডেকে আনে। সেখানে আলোচনা করার পর আবারো ছেলে সুমনকে বার লাখ টাকা প্রদান করে। অতঃপর সুমন তার বাবার প্রাইভেট কারে মায়িশা ও সন্তানদের নিয়ে বাড়ির দিক রওনা দেন। কিছুদুর যেতেই কেন তার দাবি করা ২৫ লাখ দেয়া হলো না একথা বলে গাড়ির ভেতরে মায়িশাকে মারধর শুরু করে করে। গাড়ির ভেতরেই ইলেকট্রিক তার গলায় পেচিয়ে শ্বাস রোধের চেষ্টা করে। এ সময় তার আত্মচিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে চলন্ত গাড়ি থেকে সুমন তার স্ত্রী মায়িশা ও দুই শিশু সন্তানকে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরতর আহত অবস্থায় মায়িশাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।চিকিৎসাধিন থেকে কিছুটা সুস্থ হবার পর মায়িশা নিজেই বাদী হয়ে মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে।

উক্ত ঘটনায় পুলিশ স্বামী সুমনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করছে ফলে মায়িশা চরম নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।এ ব্যাপারে মায়িশার বাবা মোজাহিদ হোসেন ফুলু জানান, মেয়ের সুখের কথা ভেবে ৫০ লাখ টাকা দিয়েও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলাম না। তিনি ঘটনার ন্যায় বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন।রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান, এটা অমানবিক ঘটনা।মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।

x