ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৫ অপরাহ্ন
রংপুরে নতুন রাডার স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি
হীমেল মিত্র অপু, স্টাফ রিপোর্টার

বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে আজও রংপুরে নতুন রাডার স্থাপনের কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রথম ঘটনার পর চাহিদা মোতাবেক নিরাপত্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে যখন কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছিলো ঠিক তখন করোনার হানায় আবার পিছিয়ে যায় রাডার স্থাপনের কাজ। আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষনাগারের একমাত্র রাডারটি দীর্ঘ ১ যুগ ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস না পাওয়ায় প্রায় ৪শ কিলোমিটার এলাকার মানুষেরা আগাম প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রংপুর ও এর আশেপাশের কৃষিকাজ। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে । বিশেষ করে দেশের একমাত্র উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়ায় কাল বৈশাখী ঝড়ের উৎপত্তি হলেও রাডারটি অকেজো হওয়ায় আগাম বার্তা পেতে নিরুপায় এলাকাবাসিকে ঢাকা সহ অন্যান্য আবহাওয়া অফিসের বিলম্ব তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

রংপুরের আলম নগর এলাকায় ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫০ একর জায়গায় অধিগ্রহণ করে নিজস্ব ভবনে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অধীন আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষনাগার।

প্রতিদিনের আবহাওয়া, ভূমিকম্পন পরিমাপ সহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য ঢাকা প্রধান অফিসকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এর যাত্রা শুরু হয়।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে এবং তাদের কারিগরি সহায়তায় প্রায় ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডার স্থাপন করা হয়। ১০ বছরের মেয়াদের রাডারটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত চালু থাকার পর ত্রুটি দেখা দেয়। স্থানীয় ইঞ্জিনিয়াররা ২০১২ সাল পর্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে রাডারটি চালু রাখতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে পুরাতন রাডারের যন্ত্রাংশ তৈরি না হওয়ায় এটি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার একনেকে রংপুরের জন্য একটি আধুনিক রাডার স্থাপনের বিল পাশ করেছে। জাপানী সরকারের প্রায় ২শ কোটি টাকার সম পরিমাণ অনুদানে রাডার স্থাপন করা হবে। কিন্তু কার্যক্রম প্রথমে বাধা গ্রস্থ হয় ২০১৫ সালের ৩রা অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি গ্রামে জাপানি নাগরিক হোশিও কোণি দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর।

রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষনাগারের দেড় বছর আগে অবসরে যাওয় সাবেক ইনচার্জ প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাপানী প্রকৌশলীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় বেশ কিছু নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

তিনি বলেন, তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর আবহাওয়া অফিসে পুলিশ ব্যারাক এবং তাদের থাকার জন্য ডর্মেটরি নির্মাণের এবং সীমানা প্রাচীরের চারপাশে কাটা তারের বেড়া দেয়ার কাজ হয়েছে। এমনকি তিনি থাকাকালীন যে জাপানী প্রকৌশলীরা এখানে কাজ করবেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একটি টীম সাইট পরিদর্শন করে গেছেন।

এ সময় তারা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গুলো স্বচক্ষে দেখেছেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরে করোনার কারণে আবার বাধাগ্রস্থ হয় নতুন রাডার স্থাপনের কাজ। রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষনাগারের বর্তমান ইনচার্জ প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, প্রথমে জাপানী নাগরিক হত্যা এবং পরে করোনার কারণে নতুন রাডার স্থাপনের কাজ বিলম্বিত হয়েছে।

বর্তমান অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি জানান, সাত মাস আগে রাডার স্থাপনের টেন্ডার হয়ে গেছে। বর্তমানে গাজীপুরে রাডার স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এখানে কাজ শেষ হলে আশা করা যাচ্ছে ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে রংপুরের রাডার স্থাপনের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আগের রাডারটি ছিলো ম্যানুয়াল।

আগামীতে যে রাডার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে ডপলার রাডার (আধুনিক)। এটি চালু হলে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫শ কিলোমিটার স্থানের আকাশের ঘণ কুয়াশা, সাধারণ মেঘ, মাঝারী মেঘ, ঘণ মেঘ, বর্জ্য মেঘ এবং ঘুর্ণি যুক্ত মেঘের তথ্য পর্যবেক্ষন দ্রুততার সাথে করা সম্ভব হবে। ফলে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। ফলে জান মালের ক্ষতি কম রাখা সম্ভব।

x