নদী বেষ্টিত রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাওটানা নয়ারহাট বাজার কিছুদিন পূর্বেও বিদ্যুৎ ও সোলারের আলোয় আলোকিত ছিল। চারদিকে ছিল সবুজে ঘেরা গাছপালা ও ফসলের খেত। চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবায় ছিল শিবদেব ক্লিনিক। এ ক্লিনিক থেকেই চরের মানুষজন চিকিৎসা সেবা নিতেন। কিন্তু চোখের সামনেই তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেল গরিবের চিকিৎসালয় শিবদেব ক্লিনিকটি। আশে পাশে যে ঘনবসতি ছিল তাও বিলীন। এ ছাড়া পাওটানা নয়ারহাট বাজারের বেশির ভাগ অংশও চলে গেছে তিস্তার পেটে। এর ফলে ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে বাজারটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আজ (৩১ আগস্ট )মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পাওটানা শিবদেব গ্রামের শেষ অংশে নয়ারহাট বাজার। যার আশে পাশে ছিল ঘনবসতি, দ্বিতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিকিৎসা সেবায় ক্লিনিক। আর চারদিকে সবুজে ঘেরা গাছপালা ও ফসলের খেত। এখন কিছুই নেই। সব নদীগর্ভে বিলীন। ৫ বছর আগে তিস্তা পেটে চলে গেছে দ্বিতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এরপর একে একে গালপালা, ফসলি জমি চলে যায়। পাশেই নয়ারহাট বাজারে চলছিল বিদ্যালয়ের কাজ। সেটিও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক দুরে।
চরাঞ্চলের গরিব-অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবায় থাকা শিবদেব ক্লিনিকটিও গত রবিবার চলে গেছে রাক্ষসী তিস্তা পেটে। নিভে গেছে গরিবের বাতিঘর। এক সময়ের মানচিত্রে থাকা গ্রামটি এখন শুধুই স্মৃতি। শিবদেব-নয়ারহাট এলাকার নদী ভাঙনের শিকার শতাধিক পরিবার এখন আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্থানে। অনেকে ভাড়াটে জমি খুঁজছে আশেপাশে। নদীগর্ভে বিলীন শিবদেব ক্লিনিকের সব আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। যা নয়ারহাট এলাকা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। ফলে চিকিৎসা সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার মানুষজনদের।
কথা হয় নদীর পাড়ের বাসিন্দা মোকলেছুর রহমান , আমেনা বেগম, জয়নাল মিয়া, আকলিমা সহ বেশ কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, নদীতেই তাঁদের সব শেষ। একে একে সব খেয়ে ফেলেছে তিস্তা নদী। বারবার নদীর পানি বৃদ্ধি ও কমায় নদীর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। তাঁদের চিকিৎসা সেবায় ভাটা পড়েছে। অনেক দূরে ক্লিনিকের কাজ চলায় তাঁরা তেমন সেবা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাঁদের খোঁজ নিচ্ছে না।
শিবদেব ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ফরহাদ হোসেন বলেন, ভাঙনের কবলে পড়ার আগেই ক্লিনিকের সব মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা এখন আশ্রয় কেন্দ্রে ক্লিনিকের কার্যক্রম চালাচ্ছি।
উক্ত বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু আল হাজ্জাজ বলেন, বিকল্প হিসেবে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে কার্যক্রম চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ক্লিনিকের জন্য নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে।